X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

জীবনের ওপারে ২০ বছর, তবুও স্মৃতিতে অমলিন

বিদেশ ডেস্ক
৩১ আগস্ট ২০১৭, ১২:২৬আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০১৭, ১৪:১৯
image

১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট মধ্যরাতে টেলিভিশনে প্রচারিত এক মৃত্যুসংবাদে হঠাৎই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশ জনতা। সারা বিশ্ব কেঁদেছিল সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো সেই নারীর জন্য। সেদিন জীবনের ওপারে চলে গিয়েছিলেন প্রিন্সেস ডায়না, অসম্ভব শক্তিশালী ব্রিটিশ রাজতন্ত্রে বধূবেশে প্রবেশ করে যিনি বেরিয়ে গিয়েছিলেন রাজদ্রোহী হয়ে। হয়েছিলেন পিপলস প্রিন্সেস। মৃত্যুর  দুই দশক পেরিয়ে গেলেও এখনও তিনি বহু মানুষের স্মৃতিতে অমলিন। লাখ লাখ  মানুষের হৃদয়ের রাণী।

প্রিন্সেস ডায়না

লর্ড স্পেনসার ও ফ্রান্সিস রোচি’র তৃতীয় মেয়ে ডায়ানা ফ্রান্সিস স্পেনসারের জন্ম ১৯৬১ সালের পয়লা জুলাই। ১৯৮১’র ২৯ জুলাই মাত্র ২০ বছর বয়সে ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বিয়ের পিড়িতে বসেই বিশ্ববাসীর নজর কাড়েন তিনি। ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ জারি করেছিলেন ডায়না। কয়েকশ’ বছরের প্রথা ভেঙে মিশতেন সবার সাথে। রাণী এলিজাবেথ ও স্বামী চার্লসের কটূ কথা শুনেও ছুটে যেতেন মানবতার সেবায়।

এক পর্যায়ে বন্দি জীবন ফেলে মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে বেড়াতে  রাজপ্রাসাদ ছেড়েছিলেন। দাঁড়িয়েছিলেন মানুষের পাশে। ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ল্যান্ড মাইন ও এইডস বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নোবেল বিজয়ী নেলসন মেন্ডেলাসহ কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৯৭ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিনেই মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তার জীবনের অবসান ঘটে। তবে ততদিনে তিনি বিশ্বমানুষের হৃদয়ের রানি।

ডায়না1

রাজ পরিবারের আভিজাত্যের বাইরে বেরিয়ে এসে নিজেকে ‘পিপলস প্রিন্সেস’ হিসেবে তুলে ধরতে পেরেছিলেন ডায়না। তার শেষযাত্রায়া শামিল হয়েছিল ২০ লাখ মানুষ। সেখানে যেমন বিখ্যাতরা ছিলেন, তেমনি বড় সংখ্যায় ছিলেন সাধারণ মানুষ। গরিব মানুষরা সেদিন তাদের হৃদয়ের রানির চিরবিদায়ে চোখের জল ফেলেছিলেন। সমগ্র বিশ্বের প্রায় ২৫০ কোটি মানুষ তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেছিলেন।

মৃত্যুর আগেই রাজ পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছেদের সময় দুই ছেলেকে নিয়ে বের হয়ে এসেছিলেন একা নারীর লড়াই জারি করে। সেই দুই ছেলেও রাজতন্ত্রের প্রতি আনুগত্য ভুলে মাঝে মাঝেই হয়ে উঠেন বিদ্রোহী। হয়ে ওঠেন সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম। ডায়নার স্বামী চার্লস পরে বিয়ে করেছিলেন বান্ধবী ক্যামেলিয়াকে। ব্রিটেনের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ ক্যামেলিয়াকে রানি হিসেবে দেখতে চান। আর চার্লস? ৫১ শতাংশ মানুষ মনে করেন কুইন এলিজাবেথের মৃত্যুর পরে চার্লস নন, তার জায়াগায় আসা উচিত প্রিন্স উইলিয়ামেরই। এটাকে ডায়নার প্রভাব বলেই মানছে ব্রিটিশ ও মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো।

চার্লসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদের আগেই রাজপ্রাসাদ ছাড়েন প্রিন্সেস অফ ওয়েলস। এরপর বিয়ের ১৫ বছরের মাথায় ১৯৯৬ সালের ২৮ আগস্ট প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে ডায়ানার বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের পর নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়েছেন, আবার ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়েছেন বন্ধুজনদের সঙ্গে। তবে এতে থেমে থাকেনি তার মানবিক সহায়তা। ১৯৯৭ সালে সাউথ আফ্রিকায় গিয়ে ল্যান্ডমাইন অপসারণ ও এইডসবিরোধী আন্দোলন জোরদারে সাউথ আফ্রিকার প্রয়াত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন।

বিয়ের পর থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত ডায়ানার পিছু ছাড়েননি পাপারাজ্জিরা। সন্তানের জন্ম কিংবা জনকল্যাণ থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত মুহূর্তও ছিল ক্যামেরাবন্দী। ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট শনিবার মধ্যরাতে হঠাৎ-ই টিভিতে তার অবিশ্বাস্য মৃত্যুর খবরটি ভেসে উঠেছিল। ১৯৯৭ সালে বন্ধু দোদি আল ফায়েদের সঙ্গে প্যারিসের পোন্ট ডি ল্য-অ্যালমা টানেলে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় থেমে যায় ডায়ানার জীবন। তার মৃত্যুর খবরে স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা বিশ্ব। ডোডি ফায়াদের সঙ্গেই গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ডায়না।

স্বামীর সঙ্গে ডায়না

প্রিন্স চার্লসকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন ডায়না স্পেনসার। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি তথ্যচিত্রে দেখা গিয়েছে, তিনি নিজমুখেই বলছেন, ১৯৮১ সালে ওই বিয়েটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন। আসলে চার্লস-ডায়না সম্পর্ক কোনো দিনও মধুর হয়ে ওঠেনি। অসম্ভব সুন্দরী ও ব্যক্তিত্বময়ী ডায়নার পাশে ফিকে হয়ে যেতেন চার্লস। প্রিন্সেস ডায়না যেখানেই যেতেন, তাকে ঘিরে জনতা উদ্বেলিত হয়ে উঠত। তার ছিটেফোটাও কখনো চার্লসের ক্ষেত্রে দেখা যায়ানি। এমনকী, দু’জনে সরকারি সফরে যখন বেরিয়েছেন, তখনো দেখা গেছে, মানুষ প্রিন্সেসকে তাকে একবার দেখতে চাইছেন। তার নামেই উঠছে জয়ধ্বনি। কেউ ফিরেও তাকাচ্ছেন না তার পাশে থাকা প্রিন্স চার্লসকে। এটাই ছিল তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা।

২০ বছর পরেও বিশ্বমানুষের স্মৃতিতে তিনি উজ্জ্বল। তিনি এখনও স্টাইল আইকন। দু’চোখ যেন নীলকান্ত মণিতে অমলিন ছিল তার। অদ্ভূত সারল্য আর হৃদয় থেকে উপচে পড়া হাসিতে সবাইকে আবিষ্ট করতে সক্ষম ছিলেন ডায়না। এটাই ছিল ডায়নার আবেশ।

ডায়না ২

২০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ডায়নার আবাসস্থল কেনিংস্টন প্যালেসের সামনে তাকে স্মরণ করছেন অসংখ্য ব্রিটিশ। হাতে ফুল নিয়ে, নোট লিখে সম্মান জানাচ্ছেন তাদের ‘হৃদয়ের রানী’কে। তাকে সম্মান জানাতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকে। তাদেরই একজন সাশা জোনস। ডায়নার সম্মানে একটি সাদা গোলাপ রাখবেন বলে অস্ট্রেলিয়া থেকে লন্ডন এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি সবসময়ই তাকে অনুসরণ করেছি এবং নিজেকে মেলানোর চেষ্টা করেছি।’ তার স্বামীকে নিয়ে প্যারিসে গিয়েও সম্মান জানাবেন সাশা।

২০ বছর আগে ডায়নার মৃত্যুর সময়ও লন্ডন ছিলো শোকস্তব্ধ। মৃত্যুর পর তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে লন্ডনের রাস্তায় নজীর বিহীন জনতার ঢল নামে যা সামলাতে ৩০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করতে হয়। সমগ্র ব্রিটেনে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয় এবং হাজার বছরের ঐতিহ্য ভঙ্গ করে প্রথমবারের মত বাকিংহাম রাজ প্রাসাদের রাজপতাকা নামানো হয়। তার পর প্রসাদের উপর ‘ইউনিয়ন জ্যাক’ অর্ধনমিত করা হয় যা রাজা বা রাণীর মৃত্যু হলেও করা হয় না।

প্যারিসে ডায়নার স্মরেণে মেমোরিয়াল

লন্ডনের সঙ্গে প্যারিসেও শোক জানানো হয়। জীবনের শেষ সময়টা সেখানে কাটিয়েছেন এই রাজকন্যা। ২০ বছর পরে সেখানেও স্মরণ করা হচ্ছে ডায়নাকে। আর ডায়নাকে স্মরণ করতে ফ্লেম অব লিবার্টি স্ট্যাচুকে বেছে নিয়েছে ডায়নার অনুরাগীরা।  এই ভাস্কর্যটি মূলত ফ্রান্স-যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে তৈরি করা হলেও ডায়নার ভক্তরা একে তার জন্য অনানুষ্ঠানিক স্মরণী বানিয়ে ফেলেছেন।  সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। লিখছেন নোট।

/এমএইচ/বিএ/
সম্পর্কিত
ইউক্রেনকে ৬২ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য
বিলেতে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন নতুন আসা বাংলাদেশিরা: কমিউনিটিতে প্রতিক্রিয়া
ইরানে পাল্টা হামলা না চালাতে ইসরায়েলকে ক্যামেরনের আহ্বান
সর্বশেষ খবর
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
দুই মাসে ব্র্যাক ব্যাংকে আড়াই হাজার কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন 
দুই মাসে ব্র্যাক ব্যাংকে আড়াই হাজার কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন 
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি হয়নি
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি হয়নি
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা