X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী দুই গ্রামে শতাধিক ল্যান্ডমাইন!

মাহাদী হাসান
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২০:৩৬আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২০:৪০
image

বাংলাদেশ সংলগ্ন সীমান্তে মিয়ানমারের ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখার প্রতিবাদ জানানো হলেও এখনও মাইনের সঠিক সংখ্যা সম্পর্কে জানা যায়নি। তবে ভূমিমাইন নিয়ে কাজ করা সংস্থা ল্যান্ডমাইন মনিটরের একটি সূত্র জানায়, মিয়ানমারের নর্থ মংডুর তং পিউ লি ওয়ে ও তং পিউ লি ওয়ে ইয়া গ্রামে ল্যান্ডমাইন পোঁতা হয়েছে। মূলত এই গ্রামদুটি দিয়েই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছেন।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিতেই এই কৌশল নিয়েছে বলে জানা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থাটির এক কর্মকর্তা বলেন, সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলজুড়ে তিন শতাধিক মাইন রয়েছে বলে আমাদের ধারণা। ইতোমধ্যে কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন।

তবে বাংলাদেশ সীমান্তে ল্যান্ডমাইন পোঁতার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ি-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ৪৯ নম্বর পিলারের নো-ম্যান্স ল্যান্ড থেকে ১২টি স্থলমাইন উদ্ধার করে বিজিবি৷ এরপর গত বছরের ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ-ভারত-মায়ানমার সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে তিনজন আহত হন৷ রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের জারুল্যাছড়ি পয়েন্টে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে৷

২০১৪ সালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্তে মাইন স্থাপনের প্রতিবাদ এবং বন্ধের দাবি করা হয়৷ একাধিক সূত্র জানায়, গত পাঁচবছরে সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে অনন্ত সাতজন নিহত হয়েছেন৷ নিহত হয়েছে হাতিসহ বন্যপ্রাণীও৷

ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু ল্যান্ড মাইন্স বা আইসিবিএলএম-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ৬৪ জন প্রাণ হারিয়েছে৷ এরা মূলত কাঠুরিয়া বা বনজীবী৷ আহত হয়েছে আরো ৮৭ জন৷

জানা গেছে, সীমান্তে পুঁতে রাখা স্থলমাইন ভূমিক্ষয়সহ নানা কারণে সরে গিয়ে কৃষিভূমি বা লোকালয়েও চলে যায়৷ এ রকম বেশ কিছু মাইন বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিভিন্ন সময় অপসারণ করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ের এই ল্যান্ডমাইন নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিজিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ল্যান্ডমাইন স্থাপনের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ মনে করেন যদি মাইন স্থাপন করা হয়ে থাকে তবে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে স্বীকার করার সম্ভাবনা কম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ল্যান্ডমাইন স্থাপনের ক্ষেত্রে কাটাতারের বেড়া থাকতে হবে এবং সেটা চিহ্নিত থাকতে হবে। কিন্তু মিয়ানমারের পোতা মাইনে সম্ভবত সেটা করা হয়নি।

তিনি বলেন, আর আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে এটি নিষিদ্ধ। আর নিরাপত্তা বাহিনীর কোনও মাইনে যদি বেসামরিক কেউ নিহত হন তবে সেটা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

এই ল্যান্ডমাইন কেন ব্যবহার করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো বাংলাদেশে আসার জন্য যে কয়টি পথ রোহিঙ্গারা ব্যবহার করছে সেখানে মাইন বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটলে এই জনস্রোত স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। এই চিন্তা থেকেই তারা কাজটি করছে।

তবে কি এই ল্যান্ডমাইন। আর এর ব্যবহারই বা কি। ল্যান্ডমাইন বা ভূমিমাইন একপ্রকার ওজন সংবেদনশীল উচ্চ মানের বিস্ফোরক যেটি কোন সক্রিয় ওজনের সংস্পর্শে বিস্ফোরিত হয়। তবে এটিই একমাত্র ফায়ার আর্মস যেটির দ্বারা এ পর্যন্ত সামরিক লোকের চেয়ে বেসামরিক লোক সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়েছে।

অনেকসময় একে গুপ্তঘাতক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। একে মাটি, ঘাস বা বালুর নিচে পুঁতে রাখা হয়। এর উপর দিয়ে ট্যাঙ্ক, লরি, যানবাহন ও মানুষসহ কোন সক্রিয় ওজন গেলেই এটি বিস্ফোরিত হয়।

১৯০৫ সালে প্রথম ল্যান্ড মাইন উদ্ভাবিত হয়। তবে ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ল্যান্ডমাইনগুলি প্রাণঘাতী ছিলো না। প্রাণঘাতী ল্যান্ডমাইনের প্রচলন শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। ১৯৪২ সালে মাইনগুলো মূলত জার্মান ট্যাংকগুলোকে থামাতে ব্যবহার করা হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ল্যান্ডমাইনগুলি এমনভাবে বানানো হয় যেন এর বিস্ফোরণ শত্রুসেনাকে পঙ্গু করে দেয় কিন্তু জীবিত রাখে। প্রত্যেকটি মাইনের একটি ওয়েট লিমিট থাকে মানে একটি নির্দিষ্ট ওজনের বেশি ওজনের বস্তু এর উপর দিয়ে গেলে এটি বিস্ফোরিত হয়।

মাইনের উদ্দেশ্যই হলো শারীরিক ও মানসিকভাবে একজনকে দুর্বল করে ফেলা। প্রাথমিক চিকিৎসা, মানসিক চিকিৎসা, শারীরিক প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা, পারিবারিক ভরণ-পোষণ, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদির পেছনে অনেক বেশি অর্থ খরচ। একটা সংক্ষিপ্ত যন্ত্রণাদায়ক মুহূর্ত নয়, একজন যুদ্ধাহত সৈনিককে সারাজীবন মৃত্যুর স্বাদ বহন করতে হতো। ল্যান্ডমাইনের আঘাতে চোখের পলকেই একজন পরিবারের মাথার বোঝায় পরিণত হয়। সে যুদ্ধে যেতে পারে না, সে অন্য কোন কাজ ও করতে পারে না।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে অ্যান্টি-পার্সোনেল ল্যান্ড মাইন নিষিদ্ধ করা হয়। এটা ব্যবহার, প্রস্তুত ও রফতানি নিষিদ্ধ করায় একমত হয় ১৫০টিরও বেশি দেশ। এতে করে হতাহতের পরিমাণ কমে যায়। ১৯৮০ দশকে ল্যান্ডমাইন ব্যবহার করা হতো। কিন্তু অনেক দেশই এটি নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছিলেন। বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশ দেশই নিষিদ্ধের পক্ষে ভোট দেন। এরপর জমা করা ৪ কোটি মাইন ধ্বংস করা হয় এবং এটি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।

/এমএইচ/
সম্পর্কিত
মালয়েশিয়ায় পুলিশ স্টেশনে হামলা, ২ কর্মকর্তা নিহত
হাইপারসনিক অস্ত্র-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করবে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র
শির সঙ্গে বৈঠক করতে চীন সফরে পুতিন
সর্বশেষ খবর
খারকিভে রুশ বোমা হামলায় নিহত ৩
খারকিভে রুশ বোমা হামলায় নিহত ৩
লোকসভা নির্বাচন: আজ থেকে বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
লোকসভা নির্বাচন: আজ থেকে বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্র্যাস্ট ব্যাংকের শাখায় আগুন
ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্র্যাস্ট ব্যাংকের শাখায় আগুন
মজুরির ধান নিয়ে ট্রাকে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেলো ২ শ্রমিকের
মজুরির ধান নিয়ে ট্রাকে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ গেলো ২ শ্রমিকের
সর্বাধিক পঠিত
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
ত্বক তারুণ্যদীপ্ত দেখানোর ৮ টিপস 
ত্বক তারুণ্যদীপ্ত দেখানোর ৮ টিপস 
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক