X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার কি রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেবে?

বাধন অধিকারী
০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২২:০৩আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২২:৪৫
image

রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে একদিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় মন্তব্য করতে গিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি জানিয়েছেন, আনান কমিশনের প্রস্তাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যয়বিচার নিশ্চিতের যে সুপারিশ করা হয়েছে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন তিনি। তবে কমিশনের প্রস্তাবে রাখাইন পরিস্থিতির সংকট উত্তরণে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতের জোরালো আহ্বান জানানো হলেও সু চি এ ব্যাপারে কিছু বলেননি। এদিকে বৈধ কাগজপত্রহীন রোহিঙ্গাদের ‘নাগরিকত্ব’ প্রশ্নে নেতিবাচক অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছেন মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তিনি জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া মানুষদের দেশে ফিরতে গেলে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে।

রোহিঙ্গা বিপন্নতা

১৯৮২ সালের বিতর্কিত বর্ণবাদী নাগরিকত্ব আইনে মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়। এতে মিয়ানমারে বসবাসকারীদের Citizen, Associate এবং Naturalized পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। এমনকি দেশটির সরকার তাদের প্রাচীন নৃগোষ্ঠী হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়নি। ১৮২৩ সালের পরে আগতদের Associate আর ১৯৮২ সালে নতুনভাবে দরখাস্তকারীদের Naturalized বলে আখ্যা দেওয়া হয়। ওই আইনের ৪ নম্বর প্রভিশনে আরও শর্ত দেওয়া হয়, কোনও জাতিগোষ্ঠী রাষ্ট্রের নাগরিক কি না, তা আইন-আদালত নয়; নির্ধারণ করবে সরকারের নীতি-নির্ধারণী সংস্থা ‘কাউন্সিল অব স্টেট’। এ আইনের কারণে রোহিঙ্গারা ভাসমান জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত হয়।

কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘যদি স্থানীয় জনগণের বৈধ অভিযোগগুলো উপেক্ষা করা হয়, তবে তারা জঙ্গি সংগঠনগুলোতে যোগ দেওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়বে।’ রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিশ্চিত না করা হলে এবং এ সম্প্রদায়টি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক থেকে গেলে উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য জঙ্গিবাদের উর্বর ঘাঁটিতে পরিণত হবে বলেও আশঙ্কা করছে কমিশন।

সু চি বলেছেন, ‘আমরা রাখাইনের সম্প্রীতি ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি। খুব তাড়াতাড়ি এর সমাধান হয়ে যাবে।’ তবে আনান কমিশনের প্রতিবেদনে নাগরিকত্বের সংকটকে রাখাইনে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে বড় বাধা বলে উল্লেখ করা হলেও সে প্রসঙ্গে তিনি কিছুই বলেননি। রাখাইন পরিস্থিতিকে কাশ্মির সংকটের সঙ্গে তুলনা করে অং সান সু চি বলেন, ‘আমরা দুই দেশই (ভারত ও মিয়ানমার) একই সমস্যার মোকাবিলা করছি। আমাদের দায়িত্ব হলো আমাদের নাগরিকদের দেখভাল করা। আমাদের খুব বেশি সম্পদ নেই। এর মাঝেই আমাদের সব ব্যবস্থা করতে হয়।’

২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হোয়াইট কার্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যেই তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সে সময় প্রেসিডেন্ট দফতরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ওই কার্ড মার্চ থেকে আপনাআপনিই বাতিল হয়ে যাবে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার টাইমসের সেই সময়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার ওই কার্ড ছিল। সে সময় নাগরিকত্ব না থাকা ব্যক্তিদের এনভিসি (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) করার প্রস্তাব দেয় প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের দফতর। তবে ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমারের সেই সময়ের এক প্রতিবেদন বলছে, কেবল ৩৫ হাজার ৯৪২ জন ওই আবেদন করেন। আর গোটা রাখাইন রাজ্যে নাগরিকত্বহীন ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ওই কার্ড দেওয়া হয় সাত হাজার ৫৪৮ জনকে। এদের সবাই যদি রোহিঙ্গাও হয়, তাহলে এই সাড়ে সাত হাজার মানুষের বাইরে আর কোনও রোহিঙ্গার বৈধ কোনও কাগজপত্র নেই। 

কফি আনান কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছিল, ‘যাদের নাগরিকত্ব মঞ্জুর করা হয়নি তাদের মর্যাদা কী হবে তাও সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে। অন্য সব দেশের মতো মিয়ানমারেও যারা নাগরিকত্ব না পেয়েও বসবাস করছে, তাদের একটি মর্যাদা থাকা প্রয়োজন। একইসঙ্গে যারা মিয়ানমারে বাস করছে এবং কাজ করছে, তাদের অধিকারও সমুন্নত রাখা দরকার। আর যাদের নাগরিকত্ব যাচাই করা হয়ে গেছে, তাদের জন্য নাগরিকত্বের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’

সু চি তার বক্তব্যে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিয়ে কিছুই বলেননি তিনি। তবে তিনি জানিয়েছেন, ‘আইন অনুযায়ী সবাইকে সুরক্ষা দিতে বদ্ধ পরিকর’ তার দেশ।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমার টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের ডি-ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’র কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা উ থং তুন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত না নেওয়ার ইঙ্গিত দেন। সরাসরি রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া নাগরিকরা কত বছর মিয়ানমারের ছিল সে প্রমাণ তাদের দিতে হবে। যদি সেই প্রমাণ সত্যি হয়, তবে তারা ফিরে আসতে পারে। কিন্তু তারা যদি মিয়ানমারের নাগরিক না হয় তবে তা সম্ভব হবে না।’
সাম্প্রতিক ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের লক্ষ্যে রাখাইন রাজ্যে সেনা মোতায়েন শুরুর কয়েকদিনের মাথায় ২৪ আগস্ট ২৪টি পুলিশ চেকপোস্টে ‘বিদ্রোহী রোহিঙ্গা'দের সমন্বিত হামলা এবং রাতভর সংঘর্ষে বিদ্রোহী-পুলিশ-সেনাসদস্য মিলে অন্তত ১০৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানায় সেনাসূত্র। হামলার পর থেকে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান জোরদার হয়। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা থেকে বাঁচতে ১২ দিন আগে শুরু সহিংসতায় এরই মধ্যে এক লাখ ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশে করেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে কাজ করা জাতিসংঘের কর্মীরা। এক পর্যায়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা তিন লাখে পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির বাংলাদেশ অঞ্চলের প্রধান দীপন ভট্টাচার্য।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তদন্তে গত বছর জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়। মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি নিজেই কফি আনানকে ওই কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। এর আগেও সু চি তার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছিলেন।
আরও পড়ুন-
৩ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে পালিয়ে আসার আশঙ্কা
মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী দুই গ্রামে শতাধিক ল্যান্ডমাইন!
মিয়ানমারের সরকারি ওয়েবসাইটে 'তুর্কি হ্যাকারদের' হানা
নাগরিকত্বের প্রমাণ ছাড়া কাউকে ফিরিয়ে নেবে না মিয়ানমার

/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী