রোহিঙ্গাদের ভারত থেকে বিতাড়িত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চলমান তোড়জোরের মধ্যেই বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের একজন মুখপাত্র সে দেশের সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে এ কথা জানিয়েছেন। শুক্রবার সকালে একটি বিমানে করে প্রথম ধাপের ত্রাণ আসবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মিয়ানমার সফরকালে অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যখন দেশটি একটি শান্তি প্র্রক্রিয়ায় আসছে অথবা সমস্যা সমাধানের পথে আছে, তখন আমরা চাই মিয়ানমারের ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের জন্য সব পক্ষ একসঙ্গে কাজ করবে।’ সে সময় রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে চলমান জাতিগত নিধনযজ্ঞের ব্যাপারে কোনও অবস্থান নেননি মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি। নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়েও কোনো আহ্বান রাখেননি মোদি। তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সঙ্গে যুথবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর ১০ সেপ্টেম্বরের এক প্রতিবেদনের দাবি অনুযায়ী, মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ৯ সেপ্টেম্বর (শনিবার) ঢাকার পক্ষ থেকে নয়া দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের একটি শীর্ষ স্থানীয় সূত্রকে উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সে সময় জানায়, বর্তমান সঙ্কট নিয়ে ভারত সরকারের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে। অর্থনৈতিকভাবে তাদের ভার বহন বিরাট এক কষ্টের বিষয়। তাদেরকে আশ্রয় দেয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই বাংলাদেশের। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের হাই কমিশনার মুয়াজ্জেম আলী ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্করকে বলেছেন, এ অবস্থায় বাংলাদেশ ভয়াবহ এক ধকলের মুখে আছে। তাদের মধ্যে বৈঠক স্থায়ী হয় ৪০ মিনিট। বৈঠকে মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের বিষয়টি তুলে ধরে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে শরণার্থীর ঢল থামানোর আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশ মিয়ানমারের প্রতি চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানানোর এক সপ্তাহের মাথায় ত্রাণ সহায়তার ঘোষণা এলো। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ১১টায় ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ভারতীয় বিমানটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছাবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ভাষ্য মতে, ওই আহ্বানে সাড়া দিয়েই ১০ সেপ্টেম্বরের (রবিবার) ভারতের নতুন বিবৃতিটি দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই বিবৃতিতে জানায়, রাখাইনে যা ঘটছে তা নিয়ে ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা সংযতভাবে এবং পরিপক্বতার সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি বেসামরিক লোকজনের কল্যাণের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে রাখাইনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আহ্বান জানাই। রাজ্যটিতে সহিংসতা বন্ধ করে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি।’১০ সেপ্টেম্বর (রবিবার) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এবং দ্য হিন্দু পরদিন দাবি করে, বাংলাদেশের হাই কমিশনার মুয়াজ্জেম আলী এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্করের মধ্যকার ৪০ মিনিটব্যাপী এক বৈঠক শেষে নতুন বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি। সাম্প্রতিক সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাখাইন পরিস্থিতিকে মিয়ানমারের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই আখ্যা দিয়ে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। তবে রবিবারের বিবৃতিতে সরাসরি রোহিঙ্গা নিপীড়নের প্রসঙ্গ না তুললেও বেসামরিক হত্যাকাণ্ড এড়ানোর প্রতি মিয়ানমারকে নজর দিতে বলা হয়। তাগিদ দেওয়া হয়, শান্তিপূর্ণ পথে সংকট মোকাবেলার।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ঢাকাস্থা ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বিমানে আসা ত্রাণসামগ্রী যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হাতে তুলে দেবেন।
জাতিসংঘর মতে, ২৫ আগস্টে পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৯ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশে করেছে। পুলিশ চেকপোস্টে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর গ্রামগুলোতে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে সেনাবাহিনী। সেই হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা। এর আগেও বাংলাদেশের বহুবার পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গারা। সাম্প্রতিক এই ঢল নামার আগেও বাংলাদেশে চার লাখ রোহিঙ্গা ছিলো। এখন সবমিলে সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৭ লাখেরও বেশি। আশ্রয় কেন্দ্রে এসব রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। সরকারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠন।
