X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোয় বাংলাদেশের প্রশংসায় নিরাপত্তা পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র

ললিত কে ঝা, যুক্তরাষ্ট্র
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৯:০৯আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৯:১৩

রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোয় বাংলাদেশের প্রশংসায় নিরাপত্তা পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তার জন্য বুধবার বাংলাদেশের প্রশংসা করার প্রশংসা করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। একইসঙ্গে রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের বিদ্যমান পরিস্থিতির জন্য বার্মিজ সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে।

১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শরণার্থীদের সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানানো হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করায় জন্য জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ।

টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে বিষয়টি  নিয়ে কথা বলেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিকি হ্যালি। তিনি বলেন, ‘সহিংসতা থেকে পলায়নপর লাখো শরণার্থীর যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। তাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

রাখাইন পরিস্থিতি নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে সহিংসতার অবসান এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ। একইসঙ্গে ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। ওই হামলা এবং সৃষ্ট সহিংসতায় তিন লক্ষাধিক মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের সবচেয়ে প্রভাবশালী এই সংস্থা। নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের সময় সহিংসতার খবরে পরিষদের সদস্য দেশগুলো উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা সহিংসতা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া বেসামরিক ব্যক্তিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, স্বাভাবিক আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা এবং শরণার্থী সমস্যার সমাধানে জোর দেওয়া হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জাতিসংঘ বিষয়ক পরিচালক অক্ষয় কুমার বলেন, ‘আজকে আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জনের দিন। মিয়ানমার ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদ একমত হয়েছে যেটা খুবই বিরল ঘটনা।’ 

রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোয় বাংলাদেশের প্রশংসায় নিরাপত্তা পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র

বিষয়টি নিয়ে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সংস্থাটিতে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি ম্যাথিউ রাইক্রফট। তিনি বলেন, নয় বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো নিরাপত্তা পরিষদ সুনির্দিষ্টভাবে বার্মা’র এই ইস্যুটি নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছে। পরিষদের অনেক সদস্য রোহিঙ্গা ইস্যুতে উন্মুক্ত আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা এ ইস্যুতে প্রেসিডেন্সিয়াল বিবৃতিরও আহ্বান জানিয়েছেন, যার অফিসিয়াল রেকর্ড হিসেবে থাকবে। 

তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের মধ্যে যে উদ্বেগ কাজ করছে; তার বিষয়ে আমরা একতাবদ্ধ ছিলাম। সেখানে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব এবং মার্কিন কূটনীতিক জেফ ফেল্টম্যানের কাছ থেকে আমরা রাখাইন রাজ্য ও সেখানকার রোহিঙ্গাদের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পেরেছি।

ম্যাথিউ রাইক্রফট বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, সেখানে অবশ্যই নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান বন্ধ করতে হবে। আক্রান্ত এলাকায় অবশ্যই মানবিক সহায়তা পাঠানোর পূর্ণ সুযোগ থাকা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, বার্মিজ সরকারের জন্য কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের আগে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, বেসামরিক লোকদের ওপর হামলা ‘একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।’ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সহিংসতা ও সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে। সেখানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞ চলছে। এ সম্প্রদায়ের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ যখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় তখন সেটা বর্ণনা করতে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’-এর চেয়ে ভালো শব্দ আর কী হতে পারে?’

অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেন, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরার অধিকার থাকতে হবে। তাদের নাগরিকত্ব অথবা ন্যূনতম আইনগত মর্যাদা দিতে হবে; যেন তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোয় বাংলাদেশের প্রশংসায় নিরাপত্তা পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা ‘ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিতে’ পড়েছে। সংকটের মূল কারণ খুঁজে বের করে তার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কারণ এ সংকট এখন মিয়ানমারের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। এটি পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।

এর আগে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের পরিকল্পিত আক্রমণের সমালোচনা করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান জেইদ রা’দ আল হুসেইন। তিনি সতর্ক করে বলেন, রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নিধন করা হচ্ছে।

জেইদ রা’দ আল হুসেইন বলেন, জাতিসংঘের তদন্তকারীদের রাখাইন রাজ্যে ঢুকতে না দেয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি পুরোপুরি নির্ণয় করা যাচ্ছে না। কিন্তু যে পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে পাঠ্য বইয়ের জন্য 'জাতিগত নিধনের' উদাহরণ হয়ে থাকবে।

মানবাধিকার কমিশনের প্রধান বলেন, এই অভিযান স্পষ্টতই ভয়াবহ এবং তা আন্তর্জাতিক নীতি মৌলিক ভিত্তির লঙ্ঘন।  আমরা অনেক খবর পেয়েছি এবং স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে নিরাপত্তাবাহিনী ও স্থানীয় মিলিশিয়ারা রোহিঙ্গাদের গ্রাম পুড়িয়ে দিচ্ছে, একের পর বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করছে। এমনকি পলায়নরত বেসামরিক নাগরিকদের গুলি করা হচ্ছে।

জেইদ রা’দ বলেন, আমি সরকারকে (মিয়ানমার) আহ্বান জানাচ্ছি চলমান নির্মম সামরিক অভিযান বন্ধ করার। অভিযানের আইনের যেসব লঙ্ঘন হয়েছে সেগুলোকে বিচারের আওতায় আনা এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে ব্যাপক আকারের বৈষম্য রয়েছে তা নিরসন করার।

/এমপি/
সম্পর্কিত
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিমার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে ভিত্তিহীন তথ্য রয়েছে
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা