X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা নির্মূলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘স্কর্চড আর্থ’ কৌশল কী?

আরশাদ আলী
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:৩০আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৯:৪৪
image

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের নির্মূলের জন্য ‘স্কর্চড আর্থ’ কৌশল  অবলম্বন করছেন। এ কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো একের পর এক জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং যারা পালাতে চাইছে তাদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই তথ্য জানিয়েছে।

রোহিঙ্গা নির্মূলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘স্কর্চড আর্থ’ কৌশল কী?

সামরিক পরিভাষায়, স্কর্চড আর্থ নীতি হচ্ছে একটি সামরিক কৌশল। এই কৌশল অনুসারে সেনারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে এগিয়ে যাওয়ার সময় ‘শত্রু’ সেনাদের হত্যার পাশাপাশি সবকিছু পুড়িয়ে দেয়। ‘শত্রু’র পক্ষে ব্যবহার করা সম্ভব এমন স্থাপনা ও অবকাঠামো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। যেমন- খাদ্যের উৎস, পানির সরবরাহ, পরিবহন, যোগাযোগ, শিল্প-কারখানা এমনকি স্থানীয় জনসাধারণ।

এই কৌশল সেনাবাহিনী ‘শত্রু’ ভূমিতে অথবা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত ভূ-খণ্ডেও ব্যবহার করতে পারে। ‘শত্রু’র সম্পদ ধ্বংস করার কৌশলের চেয়ে স্কর্চড আর্থ ভিন্ন। এই কৌশলটি একেবারেই কৌশলগত এবং রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করা হয়।  

অতীতে রাশিয়ার সেনাবাহিনী এই কৌশল ব্যবহার করেছে বেশ কয়েকবার। মার্কিন গৃহযুদ্ধেও কৌশলটি ব্যবহৃত রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনাবাহিনী সোভিয়েত অভিযানে এবং চীনে এই কৌশল ব্যবহার করেছে জাপান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে এই কৌশল ব্যবহার করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। গত কয়েক দশকের মধ্যে শ্রীলঙ্কা, লিবিয়া ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধেও কৌশলটি ব্যবহার করা হয়েছে।

রোহিঙ্গা নির্মূলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘স্কর্চড আর্থ’ কৌশল কী?

কৌশলগত কারণে সংঘর্ষ কবলিত এলাকায় বেসামরিক নাগরিকদের খাদ্যের উৎস ও পানির সরবরাহ ধ্বংস করা আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী। ১৯৭৭ সালের জেনেভা কনভেনশনের প্রটোকল-১ এর ৫৪ অনুচ্ছেদে খাদ্য ও পানির সরবরাহ ধ্বংস করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

রাখাইন অঞ্চলের নতুন স্যাটেলাইট ছবি, প্রত্যক্ষদর্শী, ছবি ও ভিডিও বরাত দিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ২৫ আগস্টের পর থেকে রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে অন্তত ৮০টি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সংস্থাটির আন্তর্জাতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিচালক টিরানা হাসান বলেন,  এগুলো অকাট্য প্রমাণ। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের উৎখাত করে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগাচ্ছে। কোনও ভুল করবেন না, এটি জাতিগত নিধন।

রোহিঙ্গা নির্মূলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘স্কর্চড আর্থ’ কৌশল কী?

মিয়ানমার সরকার বুধবার দাবি করেছে, তথাকথিত ক্লিয়ারেন্স অপারেশনে রোহিঙ্গাদের প্রায় ৪০ শতাংশ গ্রামকে টার্গেট করে সেনাবাহিনীর অভিযান পরিচালিত করা হচ্ছে। ৪৭১টি গ্রামের মধ্যে ১৭৭টি গ্রাম জনশূন্য এবং ৩৪টি আংশিকভাবে পরিত্যক্ত।

রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, সেনা, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহযোগীরা অনেক সময় চারদিক থেকে একটি গ্রাম ঘিরে রাখে। গ্রামে প্রবেশের আগে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই তারা আকস্মিক প্রবেশ করে এবং চারদিকে গুলি ছুড়তে শুরু করে।

সেনা অভিযানে বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তি বলেন, যখন সেনাবাহিনী আসে তখন তারা ভয়-আতঙ্কের মুখে দৌড়াতে থাকা মানুষের দিকে গুলি ছুড়তে শুরু করে। আমি দেখেছি সেনারা অনেক মানুষ ও দুই কিশোরকে গুলি করে হত্যা করতে। তারা আমাদের বাড়িঘর জ্বালাতে অস্ত্র ব্যবহার করছে।

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, আমাদের গ্রামে ৯০০টি বাড়ি ছিল। এখন অবশিষ্ট আছে মাত্র ৮০টি। লাশগুলো দাফনের মতো গ্রামে কেউ নেই।

রোহিঙ্গা নির্মূলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘স্কর্চড আর্থ’ কৌশল কী?

অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, বাংলাদেশের নাফ নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে নেওয়া ছবি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে মিয়ানমারের ভেতরে বেশ কয়েকটি স্থানে ধোঁয়া উঠতে দেখা যাচ্ছে।

মানবাধিকার সংস্থাটি আরও জানায়, কয়েকটি এলাকায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আগেই গ্রামবাসীকে আগুনের বিষয়ে সতর্ক করেছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় এইসব হামলা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পরিকল্পিত।

রাথেডাউং এলাকার পান কিইয়িং গ্রামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ৪ সেপ্টেম্বর গ্রাম প্রশাসকদের নিয়ে সেনাবাহিনী তাদের গ্রামে আসে। রাত দশটার মধ্যে আমাদের পালিয়ে যেতে হবে না হলে সবকিছু পুড়িয়ে দেওয়া হবে। যখন তারা পালানোর জন্য সবকিছু গোছগাছ করছিল তখন আগুনের গোলা তার বাড়িতে আঘাত হানে। এই সময় আতঙ্গে তারা পালায়। যেসব গ্রামবাসীরা ধানের ক্ষেতে লুকিয়ে ছিল তারা দেখেছে সেনারা রকেট লঞ্চারের মতো অস্ত্র দিয়ে আগুন লাগাচ্ছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে স্যাটেলাইট চিত্রে রাখাইনে অগ্নিকাণ্ডের চিত্র

অ্যামনেস্টির মতে, আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতে পারে। বর্ষার মওসুমে আকাশ মেঘলা থাকায় প্রকৃত অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা স্যাটেলাইট চিত্রে ধরা পড়েনি।

উল্লেখ্য, ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তথাকথিত ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের মুখে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে রাখাইনের সামরিক অভিযানে 'মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ'র অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেখানে  চলমান সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ত্রাণকর্মীদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি তাগিদ দেওয়া হয়। সূত্র: আল-জাজিরা, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

 

/এএ/
সম্পর্কিত
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলে সিরিজ ভূমিকম্প
আবারও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলো উত্তর কোরিয়া
সর্বশেষ খবর
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
৩ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না কয়েকটি এলাকায়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
জাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট প্রতিনিধি নির্বাচন: বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নিরঙ্কুশ জয়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক