মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান থেকে পালাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মতে, এপর্যন্ত বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার। এর মধ্যে প্রায় দেড় লাখ শিশু স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। শিশুবিষয়ক আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন-র আশঙ্কা চলমান সহিংসতায় বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের সংখ্যা শেষ পর্যন্ত ৬ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গত ২৫ আগস্টের পর শুরু হওয়া সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে, যাদের বেশিরভাগই শিশু। দু’দেশের সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে এখনও হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে। সেখানে গত ১৫ দিনে অন্তত ৪০০ শিশু জন্ম নিয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলো বলছে, পরিবার ছাড়া এদেশে আসা অনেক শিশু হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। এদিকে একটি ত্রাণ সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, বাংলাদেশে ঢুকে পড়া হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্র, খাদ্য ও পানির সংকটে মারা যেতে পারে।
ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪ লাখ ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ শিশু। এই হিসেবে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি। আর এসব শিশুর মধ্যে পরিবারহীন শিশুর সংখ্যা শুক্রবার পর্যন্ত ছিল হাজার ২৬৭। দ্রুত রোহিঙ্গা এবং পরিবারহীন শিশুদের সংখ্যা বাড়ার কারণে মানবপাচার, যৌন নিপীড়ন, শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহের ঝুঁকি বাড়ছে ক্যাম্পগুলোতে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, শিশুদের খাবার ও পুষ্টি, মৌলিক চিকিৎসা, মানসিক পরামর্শ প্রয়োজন। এ পর্যন্ত ১৮ হাজার শিশুদের শিশুবান্ধব স্থানের মাধ্যমে সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে আসা প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার শিশুর জন্য আরও বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন।
জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের ধারণা, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের দুই তৃতীয়াংশ নারী ও মেয়ে। এদের মধ্যে ১৩ শতাংশ গর্ভবতী ও সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন ধাত্রীকে ক্যাম্পগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
ইন্টার সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপের দেওয়া তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ নারী। এদের মধ্যে ১৩ শতাংশ কিশোরী এবং ২১ শতাংশ গর্ভবতী ও প্রসূতি। শিশুদের মধ্যে ৬-১৮ বছর বয়সী শিশুর হার ২৩ শতাংশ, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর হার ২১শতাংশ এবং ১ বছরের কম বয়সের শিশুর হার ৭ শতাংশ।
রবিবার ইউনিসেফ জানিয়েছে, সংস্থাটির পক্ষ থেকে দেড় লাখ শিশুকে টিকা দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। হাম, রুবেলা ও পোলিও রোগের টিকা দেওয়া হবে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের। মিয়ানমার সীমান্তে ৬৮টি রোহিঙ্গা শিবিরে এসব টিকা দেওয়া হবে।
সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের প্রধান মার্ক পিয়ার্স বলেছেন, যদি এভাবে শরণার্থীরা বাংলাদেশে আসতে থাকে তাহলে বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা দাঁড়াবে ৬ লাখ শিশু এবং রোহিঙ্গার সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে ১০ লাখ।