X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘ অধিবেশন: বিতর্কের নজর থাকবে যেসব বিষয়ে

জুলফিকার রাসেল, নিউ ইয়র্ক থেকে
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:০০আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:৪৬
image

বছর ঘুরে আবারও সম্মিলিত বিশ্ব। জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে জড়ো হয়েছে সাধারণ পরিষদের দেড় শতাধিক সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধি। প্রতি বছরের সেপ্টেম্বরে সাধারণ পরিষদের এ বিতর্কে অংশ নিতে পুরো দুনিয়ার নেতারা  জাতিসংঘ সদর দফতরে জড়ো হন। এটাকে দেখা যেতে পারে একটি কূটনৈতিক উৎসব হিসেবে। অথবা সুনির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের বার্ষিক পুনর্মিলনও বলতে পারেন একে। এখানে আপনি দেখতে পাবেন অন্যরা কে কী করছে।

জাতিসংঘ অধিবেশন: বিতর্কের নজর থাকবে যেসব বিষয়ে

নিউ ইয়র্কভিত্তিক জাতিসংঘের অনেক কর্মীর জন্য এটি বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বরণের প্রস্তুতি নিতে হয়। নজর রাখতে হয় দুনিয়াজুড়ে তৈরি হওয়া নানা সমস্যার দিকে। সেগুলো সমাধানের জন্য পরিচালনা করতে হয় উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্ট । কারও কারও বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। তবে একইসঙ্গে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনকে একটি প্রাণবন্ত সম্মিলন বলেও স্বীকার করতে হবে আপনার। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন কাভার করার অভিজ্ঞতা আমার এটাই প্রথম নয়। এর অংশ হতে পেরে এবং এতে যোগ দিয়ে আমি ক্লান্ত নই। বরং এখানে এমন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়, যার জন্য আমি প্রতি বছর অপেক্ষা করে থাকি:

১. একই ছাদের তলায় বিভিন্ন প্রান্তের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা

বিশ্বের আর কোনও ইভেন্টে এত সংখ্যক রাষ্ট্রপ্রধান/সরকার প্রধান একত্রিত হন না। আর কোনও রাজনৈতিক সম্মেলন না থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে অন্য যেকোনও সম্মেলনের চেয়ে আয়তন আর  গুরুত্বের বিবেচনায় এটা অনেক বেশি বড় একটা ইভেন্ট। এই সম্মেলনে ছোট-বড় সব সদস্য দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

জাতিসংঘ অধিবেশনে বিশ্বনেতারা

২. বক্তব্য

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে প্রত্যেক দেশের প্রতিনিধির বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ থাকে। বার্ষিক অধিবেশনের প্রথম অংশেই বিতর্কে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকে। বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমই সেগুলো গুরুত্ব সহকারে প্রচার করে। বিষয়গুলো মাঝে মাঝে খুবই আকর্ষণীয় হয় এবং কয়েকজনের বক্তব্য অনেক বছর ধরে সবাই মনে রাখে ও ব্যবহার করে। বক্তব্যের মাধ্যমে নেতারা তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেন।  বাকিদের স্পষ্ট করেন, ‘আমি বিষয়টি এভাবেই দেখি, এবং এটা নিয়ে আমার অবস্থান এমন’। সবার বক্তব্য খেয়াল রাখা কঠিন। তবে ইউএন নিউজে আমার সহকর্মীরা প্রতিবছরই এই কঠিন কাজটি দুর্দান্তভাবে করে থাকে। প্রত্যেক বিশ্বনেতার বক্তব্যই তুলে আনে তারা।

মজার বিষয় হলো সাধারণ বিতর্কে প্রথমে বক্তব্য রাখে ব্রাজিল। কারণ জাতিসংঘের শুরুর দিকে ব্রাজিল সব সময়ই প্রথমে বক্তব্য রাখার অনুরোধ করতো। একটা সময় এটাই চল হয়ে দাঁড়ায় আর এখন এটাই নিয়ম। স্বাগতিক দেশ যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বক্তা থাকে।

৩. বসার ব্যবস্থা:

প্রতিবছর জাতিসংঘ মহাসচিব রাষ্ট্রপ্রধানদের জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করে। আমি বিশ্বাস করি, এটা খু্বই কঠিন কাজ। কারণ বিশ্বনেতাদের জন্য বসার ব্যবস্থাটা একটু কৌশলের। একটু ভুল হলেও খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হবে।

কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

৪. নিরাপত্তা

এক ছাদের নিচে এতগুলো দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তার প্রশ্নটি সামনে নিয়ে আসবে। তবে এটা সামাল দিতে জাতিসংঘ ও নিউ ইয়র্কের নিরাপত্তা বাহিনী দারুণ কাজ করে। নিউ ইয়র্কবাসীর কিছুটা অভিযোগ থাকে কারণ এসময় অনেক রাস্তাই বন্ধ থাকে। রাস্তায় অনেক পুলিশ ও গাড়ি থাকে। আকাশপথে দেখা যায় হেলিকপ্টার, পানিতে স্পিডবোট। জাতিসংঘের স্টাফ সদস্য হওয়ার কারণে আমি সবকিছু প্রত্যক্ষভাবে দেখার সুযোগ পাই। আর প্রতিমুহূর্তেই আমার মনে হতে থাকে এই কর্মযজ্ঞের জন্য কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে সবাইকে।

৫. তারকাদের দর্শন

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আপনার সবসময়ই কোনও না কোনও তারকাকে দেখার সুযোগ মেলে। মালালা, বেনো, লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, স্টিভি ওয়ান্ডার ও শাকিরার মতো তারকারা গত দুই বছর অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। তারা সবাই জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত।

৬. গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু

প্রতিবছরই আলোচিত ইস্যু নিয়ে ইভেন্ট আয়োজন করে জাতিসংঘ। জলবায়ু পরিবর্তন, লৈঙ্গিক সমতা, শিক্ষা ও অভিবাসন নিয়ে আলাদা আলাদা ইভেন্ট থাকে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনায় নতুন মোড় আসে। নতুন নীতি তৈরি হয়। যেমন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০১৫ সালে এই জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনেই নির্ধারিত হয়।

৭. প্রতিনিধিদল

প্রত্যেক দেশের প্রতিনিধিদল আলাদা সংখ্যক হয়। অনেকসময় এমন দৃশ্যও চোখে পড়ে যে কোনও মন্ত্রীর চারপাশে অনেক মানুষ ঘোরাঘুরি করছে। মনে হচ্ছে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়তো চোখে পড়বে তিনি রেস্টরুমে যাচ্ছেন।

৮. বৈশ্বিক ফ্যাশন

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আপনি যা খুশি পড়তে পারেন। জাতীয় পোশাক পড়লেও কেউ প্রশ্ন করবে না। টারবান, রঙিন ফিতা কিংবা এমন পিনও ব্যবহার করতে পারেন যেটা রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে।

৯. করিডোর কূটনীতি

নির্ধারিত ও অপরিকল্পিত একান্ত বৈঠকগুলোও এখানে অনেক গুরুত্ব বহন করে। মনে রাখা দরকার এই বিশ্বনেতারা খুব কম সময়ই একে অন্যের মুখোমুখি হন। আর এই মুখোমুখি বৈঠকে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়। কারণ সবসময় তো টুইট করে আলোচনা ও বক্তব্য দেওয়া সম্ভব না।

১০. বোনাস

এই অধিবেশনটি মহাসচিব হিসেবে অ্যান্থনিও গুয়েতেরেসেরও প্রথম। এর আগেও তিনি অধিবেশনে অংশ নিয়েছিলেন তবে এবারই প্রথম তিনি আয়োজক।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থনিও গুয়েতেরেস

আপনি সেখানে উপস্থিত থাকতে না পারলেও প্রত্যক্ষ করা খুব কঠিন নয়। জাতিসংঘের সামাজিক মাধ্যমের সকল চ্যানেলগুলোতে দেখার সুযোগ মিলবে প্রতিদিনের আপডেট।

সোশ্যাল মিডিয়ার এই দলটি সবকিছু তুলে ধরতে প্রচুর পরিশ্রম করে যায়। কখনও কখনও রাষ্ট্রপ্রধান ও নীতিনির্ধারকদের সাক্ষাৎকারও নেয়। ইউএনজিএ হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে সবকিছু অনুসরণ করতে পারেন আপনিও।

সূত্র: জাতিসংঘ দফতর

/এমপি/এমএইচ/বিএ/
সম্পর্কিত
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিমার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে ভিত্তিহীন তথ্য রয়েছে
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা