মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নিপীড়নকে ‘মুসলিম হলোকাস্ট’ আখ্যা দিয়ে তা বন্ধের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সাংবাদিকরা। এ নৃশংসতা বন্ধ না হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে ভয়াবহ রক্তপাতের ঘটনা সামনে আসতে পারে বলে বলেও সতর্ক করেছেন তারা। তেহরানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল ইউএনএইচআরসি এর কাছে লেখা এক খোলা চিঠিতে সাংবাদিকরা এমন উদ্বেগ জানান।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে হিটলারের চালানো হত্যাযজ্ঞের নাম 'হলোকাস্ট'। এর প্রধান শিকার ২০ লাখ ইহুদি। ইহুদি ছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধবন্দি, কমিউনিস্ট, রোমানীয় ভাষাগোষ্ঠীর (যাযাবর) মানুষ, অন্যান্য স্লাবিক ভাষাভাষী জনগণ, প্রতিবন্ধী, সমকামী পুরুষ এবং ভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতাদর্শের মানুষদের ওপর এই গণহত্যা পরিচালিত হয়। মৃত্যুঝুঁকি সৃষ্টি হয় ৫০ লাখ মানুষের। রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে হলোকাস্টের সঙ্গে তুলনা করেছেন আন্তর্জাতিক সাংবাদিকরা। ইউএনএইচআরসি এর কাছে সাংবাদিকদের পাঠানো খোলা চিঠিতে বলা হয়, ‘আন্তর্জাতিক সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার এবং মিডিয়া কর্মী হিসেবে আমরা মিয়ানমারে মুসলিম হলোকাস্টের নিন্দা জানাচ্ছি এবং বিশ্বের মানুষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে ভয়াবহ রক্তপাত প্রত্যক্ষ করার আগে এ ইস্যুতে একটি জরুরি বৈঠক করার জন্য ইউএনএইচআরসি’র প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।’ ওই চিঠিতে মিয়ানমারের নাগরিকত্বহীন লাখো রোহিঙ্গার হত্যা ও বাস্তুচ্যুতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়। ওই সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র অবরোধ আরোপ করছে, তখন দেশটির প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ ইসরায়েল অনবরত অস্ত্রের যোগান দিয়ে যাচ্ছে। চিঠিতে রোহিঙ্গা প্রশ্নে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চি’র ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। বলা হয়, “এটি উল্লেখযোগ্য যে, এসব অপরাধের সবগুলোই মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির চোখের সামনেই ঘটছে। তিনি কেবল এ মানবতাবিরোধী অপরাধের নিন্দা জানানো থেকেই দূরে থাকছেন না, বরং দাবি করছেন ‘বিপুল ভুল তথ্য প্রচারের’ মধ্য দিয়ে পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে।”
চলতি বছরের এপ্রিলে জাতিসংঘের উন্মোচন করা ১০ হাজার নথিতে উঠে এসেছে হলোকাস্টের এক নতুন অধ্যায়। ১৯৪৩ সাল থেকে এসব আর্কাইভ গোপনীয় রাখা হয়েছিল। হলোকাস্ট ও গণহত্যা নিয়ে কাজ করে লন্ডনের দ্য উইনার লাইব্রেরি। মূলত তাদের উদ্যোগেই অনলাইনে শ্রেণিবদ্ধ আকারে এসব নথি প্রকাশিত হয়। এসব নথিতে রয়েছে হিটলারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলোতে প্রাণহানি আর যুদ্ধাপরাধের প্রামাণ্য দলিল। চলতি বছরের এপ্রিলে জাতিসংঘের উন্মোচন করা ১০ হাজার নথিতে উঠে এসেছে হলোকাস্টের এক নতুন অধ্যায়। ১৯৪৩ সাল থেকে এসব আর্কাইভ গোপনীয় রাখা হয়েছিল। হলোকাস্ট ও গণহত্যা নিয়ে কাজ করে লন্ডনের দ্য উইনার লাইব্রেরি। মূলত তাদের উদ্যোগেই অনলাইনে শ্রেণিবদ্ধ আকারে এসব নথি প্রকাশিত হয়। এসব নথিতে রয়েছে হিটলারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলোতে প্রাণহানি আর যুদ্ধাপরাধের প্রামাণ্য দলিল। ১৯৪২ সালের ডিসেম্বরেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন লাখ লাখ ইহুদি হত্যার তথ্য জানতে পারে।জানতে পারে অর্ধলাখ মানুষের মৃত্যুঝুঁকির কথাও। তখন হিটলার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধ মামলারও প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তবে মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের বাঁচাতে কিছুই করা হয়নি। বরং ব্যাপক হারে শরণার্থীদের ঢল নামার আশঙ্কায় হলোকাস্ট নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি মিত্র বাহিনী। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের মন্ত্রিসভার যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন ভিসকাউন্ট ক্র্যাবোর্ন। ১৯৪৩ সালের মার্চে তিনি মন্তব্য করেন, ইহুদিদের সঙ্গে যা ঘটেছে তাকে বিশেষ কোনও ঘটনা হিসেবে দেখা উচিত হবে না। যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যেই শরণার্থীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। এখানে আর কাউকে আশ্রয় দেওয়ার মতো জায়গা অবশিষ্ট নেই।
/এফইউ/