X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতা প্রশ্নে কুর্দি গণভোট নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো উদ্বিগ্ন কেন?

বিদেশ ডেস্ক
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:২৯আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৬:৩০
image

ইরাকি কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার প্রশ্নে অঞ্চলটিতে সোমবার গণভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যেহেতু ইরাক ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি দেশে কুর্দিরা ছড়িয়ে আছে তাই এ গণভোটকে ঘিরে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। কেন এই উৎকণ্ঠা, আর কুর্দিরাই বা কেন স্বাধীনতা চাইছে? এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

শুক্রবার ইরবিলে গণভোটের পক্ষে র‍্যালি হয়
কুর্দরা হচ্ছে মেসোপোটেমিয়ার সমভূমি আর পার্বত্য এলাকাগুলোর আদি বাসিন্দা। এই এলাকা এখন ভাগ হয়ে গেছে নানা দেশের মধ্যে - দক্ষিণপূর্ব তুরস্ক, উত্তর পূর্ব সিরিয়া, উত্তর ইরাক, উত্তর পশ্চিম ইরান, আর দক্ষিণ পশ্চিম আর্মেনিয়া। তারা একই নৃগোষ্ঠী, নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ভাষার বন্ধনে আবদ্ধ। কুর্দিদের অধিকাংশই সুন্নি মুসলিম, তবে অন্য ধর্মের লোকও আছে।

ইরাক ছাড়াও তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া, আর আর্মেনিয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে কুর্দিরা বাস করে। তাদের সংখ্যা আড়াই থেকে সাড়ে তিন কোটির মতো। মধ্যপ্রাচ্যে তারা চতুর্থ বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী, কিন্তু তারা কখনোই তাদের নিজেদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পায় নি।

বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই স্বাধীন কুর্দিস্তানের দাবি উঠতে শুরু করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমান সাম্রাজ্যের পতন হলে পশ্চিমা দেশগুলোর করা ১৯২০ সালে সেভরেস চুক্তিতে কুর্দি রাষ্ট্রের কথা ছিল। কিন্তু তিন বছর পর লুজান চুক্তিতে যে আধুনিক তুরস্কের মানচিত্র তৈরি হলো  তাতে কুর্দি রাষ্ট্রের ধারণা বাদ পড়লো। কুর্দি এলাকাগুলো একাধিক দেশে ভাগ হয়ে গেল এবং কুর্দিরা হয়ে গেল সংখ্যালঘু।

এর পর কুর্দিরা যখনই কোথাও স্বাধীনতার চেষ্টা করেছে, তাদের সেই আন্দোলন নির্মমভাবে দমন করা হয়েছে।

সিরিয়ার কুর্দি সংগঠনগুলো ইসলামিক স্টেটের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। কিন্তু আইএস বিরোধী যুদ্ধে তুরস্ক তাদের সহযোগিতা করছে না। কারণ তুরস্ক রাষ্ট্র এবং সেদেশের ১৫-২০ শতাংশ কুর্দিদের মধ্য গভীর অবিশ্বাস ও বৈরিতা রয়েছে। ১৯৭৮ সালের আবদুল্লা ওচালান পিকেকে প্রতিষ্ঠা করেন। তার লক্ষ্য ছিল তুরস্কের কুর্দিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ছয় বছর পর সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হলে তাতে ৪০ হাজার লোক নিহত এবং লক্ষ লক্ষ লোক গৃহচ্যুত হয়। তবে এখন পিকেকে স্বাধীনতার পরিবর্তে স্বায়ত্বশাসন চাইছে। যুদ্ধবিরতি হলেও লড়াই পুরোপুরি থামেনি।

তুরস্কে ১৯২০ এবং ১৯৩০ সালে দু'বার কুর্দি অভ্যুত্থানের পর এখন সেখানে কুর্দি নাম ও পোশাক নিষিদ্ধ করা হয়, কুর্দি ভাষার ব্যবহার সীমিত করা হয়। এমনকি কুর্দিদের আর কুর্দি বলে ডাকা হয় না; তাদের বলা হয় 'পাহাড়ি তুর্কি' বলে।

কুর্দিরা মনে করে তুরস্ক তাদেরকেই আসল শত্রু বলে মনে করে, ইসলামিক স্টেটকে নয়।

সিরিয়ায় কুর্দিদের সংখ্যা জনসংখ্যার ৭ থেকে ১০ শতাংশ। এখানকার কুর্দি নেতাদের কথা হলো সিরিয়া সমস্যার সমাধান করতে হলে তাতে কুর্দিদের অধিকার এবং স্বীকৃতি থাকতে হবে।

ইরাকেও কুর্দিদের সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মতো। সেখানে কুর্দিদের সশস্ত্র লড়াই প্রথম শুরু হয় ১৯৬১ সালে। এর পর ১৯৭০ সালে তাদের কার্যত স্বায়ত্বশাসন দেয়া হয় কিন্তু তা অচিরেই ভেঙে পড়ে। সত্তরের দশকে কুর্দিদের বিভিন্ন এলাকা থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে আরবদের বসতি স্থাপন করানো শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় কুর্দিরা ইরানকে সমর্থন দেয়।

আর তার পর সাদ্দাম হোসেন তার প্রতিশোধ নেন নির্মম অভিযান চালিয়ে। দুটি কুর্দি বিদ্রোহ দমন করা হয় ১৯৮৮ এবং ১৯৯১ সালে, এর পর মার্কিন মিত্ররা সেখানে নো-ফ্লাই জোন প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু তার পরও ১৯৯৪ সাল থেকে অভ্যন্তরীন সংঘাত চলতেই থাকে। তবে ২০০৩ সালে সাদ্দামের পতনের পর ইরাকের তিনটি প্রদেশ ইরবিল, ডোহুক ও সুলাইমানিয়ায় কুর্দিরা আঞ্চলিক সরকার গঠন করে সর্বোচ্চ স্বায়ত্বশাসন ভোগ করছে।

ইসলামিক স্টেট ২০১৪ সালে উত্তর ইরাকের বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নিলে কুর্দি আঞ্চলিক সরকার পেশমারগা যোদ্ধাদের কুর্দি এলাকাগুলোয়  পাঠায়। সে সময় থেকেই কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটের কথা ওঠে কুর্দি পার্লামেন্টে।

ইরাকি কুর্দিস্তানের নিজস্ব পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, এবং সেনাবাহিনী আছে। সবচেয়ে বড় কথা, তাদের আছে তেল। কুর্দিস্তানে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটের আগে তুরস্ক এবং ইরান সীমান্তে সামরিক মহড়া শুরু করে। তুরস্ক এবং ইরান এই গণভোটের তীব্র বিরোধী, কারণ এই দুই দেশের আশঙ্কা তাদের দেশের কুর্দি জনগোষ্ঠীর মধ্যে এর প্রভাব পড়বে।

 

/এফইউ/
সম্পর্কিত
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
আত্মরক্ষার সিদ্ধান্ত আমরা নিজেরাই নেব: নেতানিয়াহু
যেকোনও ইসরায়েলি হামলা মোকাবিলায় প্রস্তুত সেনাবাহিনী: ইরান
সর্বশেষ খবর
গরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন