X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

যে তিন ইস্যুতে জোর দিলেন সু চি

বিদেশ ডেস্ক
১২ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৪৬আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০১৭, ২২:৫৫

যে তিন ইস্যুতে জোর দিলেন সু চি রাখাইনে শান্তি ফিরিয়ে আনা এবং বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তিনটি ইস্যুর প্রতি জোর দিয়েছেন অং সান সু চি। বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘রাখাইন রাজ্যে আমাদের অনেক কিছুই করতে হবে। আমরা যদি করণীয় বিষয়গুলোর তালিকা করি ও অগ্রাধিকার ঠিক করি তাহলে তিনটি প্রধান করণীয় সামনে আসে। সেগুলো হচ্ছে:

প্রথমত, বাংলাদেশে যারা চলে গিয়েছে তাদের প্রত্যাবাসন ও কার্যকরভাবে তাদের মানবিক সহায়তা দেওয়া।

দ্বিতীয়ত, পুনরায় স্থানান্তর ও পুনর্বাসন।

তৃতীয়ত, অঞ্চলটির উন্নয়ন ও স্থিতিশীল শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।’

মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের এ নেত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা মানুষদের পুনর্বাসন নিয়ে শুধু আমাদের কাজ করলে হবে না। রাখাইনের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ রাখাইন ও হিন্দুদের জন্যও কাজ করতে হবে। তারা যাতে স্বাভাবিক হয় তা আমরা নিশ্চিত করব। তাদের জীবন উন্নত করতে আমরা দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই কর্মসূচি গ্রহণ করব। অঞ্চলটির উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও আসন্ন দিনগুলোতে সংঘর্ষ এড়াতে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের জন্য কাজ করব।’

তিনি বলেন, প্রতিটি কর্মসূচির জন্যই আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। আমাদের উদ্যোক্তা, এনজিও, নাগরিক সংগঠন ও জনগণ এ কাজে অংশগ্রহণ এবং এতে সাহায্য করার কথা বলছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও সমন্বয় ও সহযোগিতার কথা বলেছে। এটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য বা আঞ্চলিক সরকারগুলোকে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা নিতে হবে। আমরা দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে সহযোগিতার আন্তরিকতাপূর্ণ প্রস্তাব পেয়েছি। এসব প্রস্তাবের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

রাখাইন রাজ্যের উন্নয়নের জন্য, সবগুলো খাতের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য, আমাদের একটি প্রক্রিয়া প্রয়োজন যা কেন্দ্রীয় সরকার, জনগণ, বেসরকারি খাত, স্থানীয় এনজিও এবং নাগরিক সমাজ, বন্ধু দেশ, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় একসঙ্গে কাজ করার বিষয়টি অনুমোদন করবে। আমরা এই প্রক্রিয়াটিকে ‘মানবিক সাহায্যের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগ, রাখাইনের পুনর্বাসন ও উন্নয়ন’ বলবো।

সব ক্ষেত্র এবং সমাজের সব স্তরে কেন্দ্রীয় সরকার এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সব সংস্থার প্রবেশাধিকারের লক্ষ্যে কাজ করার জন্যই এই প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে।

সু চি বলেন, রাখাইন থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দুই বার এই বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সফল অতীতের উপর ভিত্তি করে আমরা তৃতীয়বারের মতো আলোচনা করছি।

এ ভাষণেও সু চি বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা বলে আখ্যায়িত করেননি। এ জনগোষ্ঠীর মানুষদের ওপর মিয়ানমার সরকার ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ চালাচ্ছে বলে জাতিসংঘ যে অভিযোগ করেছে সে বিষয়েও তিনি কিছু উল্লেখ করেননি। এমনকি রাখাইনে সেনাবাহিনীর ক্লিয়ারেন্স অপারেশনে খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের ব্যাপারেও তিনি কোনও কথা বলেননি।

বৃহস্পতিবার দেওয়া ভাষণে সু চি বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন রাখাইন ইস্যুতে বিশ্বের মনোযোগ ছিল ব্যাপক। গত বছর অক্টোবরে পুলিশ ফাঁড়িতে সন্ত্রাসী হামলার মধ্য দিয়ে যার শুরু। চলতি বছর আগস্টে আবারও একই ধরনের হামলা ঘটেছে। এই হামলার পর থেকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সমস্যার জন্ম হয়েছে। আমাদের দেশের বিরুদ্ধে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। আমাদের আন্তর্জাতিক মত বুঝতে হবে। যদিও, কারও পক্ষেই আমাদের দেশের পরিস্থিতি বুঝতে পারা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের শান্তি ও উন্নয়ন আমাদের চেয়ে কেউ বেশি চাইতে পারে না। তাই এ সব সমস্যা আমাদের একতার শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। এই মুহূর্তে আমাদের দেশের উচিত যা করা প্রয়োজন তা চালিয়ে যাওয়া। অধিকন্তু তা করতে হবে সঠিক, সাহসিকতা ও কার্যকরভাবে। উন্নতি ও সফলতা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা বাস্তবায়ন করে যাব। সমালোচনা ও অভিযোগের জবাব কথায় না দিয়ে আমাদের পদক্ষেপ ও কাজ দিয়ে বিশ্বকে দেখিয়ে দেব।’

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু করে মিয়ানমার। সেদিন থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন নীরব থাকার পর ১৯ সেপ্টেম্বর ভাষণ দিয়েছিলেন সু চি। ওই ভাষণে ৩০টি পুলিশ চেকপোস্ট আর একটি রেজিমেন্টাল হেড কোয়ার্টারে সন্ত্রাসী হামলার জন্য রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি এবং এর সমর্থকদের দায়ী করে আইনের আওতায় নেওয়ার হুমকি দেন। সেই বক্তব্যের সমালোচনায় অ্যামনেস্টি বলেছিল, বালিতে মুখ গুঁজে আছেন তিনি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার বিরুদ্ধে এনেছিল সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন আড়ালের অভিযোগ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দেওয়া ভাষণেও রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাসদস্যদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন সু চি।

/এএ/এমপি/
সম্পর্কিত
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলে সিরিজ ভূমিকম্প
আবারও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলো উত্তর কোরিয়া
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্র বড় শক্তি, তাদের পরোয়া করতে হয়: শ্রম প্রতিমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্র বড় শক্তি, তাদের পরোয়া করতে হয়: শ্রম প্রতিমন্ত্রী
ব্যাংক ডাকাতি রোধে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে
ব্যাংক ডাকাতি রোধে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে
রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে
কাতারের আমিরের সফররাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে
পুড়ছে সড়ক, তবু অবিরাম কাজ তাদের
পুড়ছে সড়ক, তবু অবিরাম কাজ তাদের
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট