X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হেট ক্রাইম

অদিতি খান্না, যুক্তরাজ্য
১৭ অক্টোবর ২০১৭, ২২:০২আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৭, ২২:০৭

ফাইল ছবি যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হেট ক্রাইম বা বিদ্বেষমূলক অপরাধ। মঙ্গলবার ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছর নথিভুক্ত হওয়া হেট ক্রাইমের পরিমাণ আগের চেয়ে ২৯ শতাংশ বেশি। এই হেট ক্রাইমের অধিকাংশেরই উৎস মূলত জাতিগত ঘৃণা  বা বিদ্বেষ।

২০১৬-১৭ সালে যুক্তরাজ্যে সংঘটিত ৮০ হাজার ৩৯৩টি হেট ক্রাইমের নথি রয়েছে সরকারের কাছে। ২০১৫-১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৫১৮। ২০১১-১২ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে হেট ক্রাইম সংক্রান্ত নথি নিবন্ধন  শুরু হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে হেট ক্রাইম বৃদ্ধির হার এটাই সর্বোচ্চ।

ব্রিটিশ পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হওয়া মাসভিত্তিক হেটক্রাইমের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। চলতি বছরের জুনে এ সংখ্যা ছিল ছয় হাজার; যা এখন পর্যন্ত রেকর্ড সংখ্যক। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে এ সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ৫০০। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে গণভোটে জনরায়ের মতো বিষয়গুলোর ফল বা পরিণতি হিসেবে হেট ক্রাইম বৃদ্ধিকে দেখছেন কেউ কেউ।

মঙ্গলবার  প্রকাশিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতবছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের বিষয়ে গণভোটের সময় থেকে বিদ্বেষমূলক অপরাধ বেড়েছে। ২০১৭ সালের মার্চে ওয়েস্টমিনিস্টার ব্রিজ এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার পরও হেট ক্রাইমের হার বেড়েছে।

২২ মার্চ ওয়েস্টমিনিস্টার ব্রিজে পথচারীদের ওপর চলন্ত গাড়ি উঠিয়ে দেয় হামলাকারী খালিদ মাসুদ। সে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ফটকে দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্যকেও ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এরপর ম্যানচেস্টার এবং লন্ডনেও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়েস্ট মিনিস্টার ব্রিজে হামলার ঘটনার কিছুদিন পর হেট ক্রাইম কিছুটা কমে আসে। তবে ছোট বিরতির পর  সেটা আবারও বাড়তে  শুরু করে। ২০১৭ সালের ১৯ জুন লন্ডনের ফিন্সবারি পার্কে হেট ক্রাইমের শিকার হন মুসল্লিরা।

যুক্তরাজ্যের হোম অফিস বলছে, ধর্মীয়  স্থানগুলোর সুরক্ষায় ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করা হচ্ছে। আলাদা করে অরক্ষিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে এক মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় ধরা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কমিউনিটি প্রজেক্টের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে নয় লাখ পাউন্ড।

এর আগে গত আগস্টে যুক্তরাজ্যের ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস (সিপিএস) অনললাইন হেট ক্রাইম সংক্রান্ত নতুন একটি নির্দেশনা জারি করে। এতে অনলাইনে হেট ক্রাইমকে গুরুতর আচরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

অপরাধ মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ায় ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের প্রধান সংস্থা সিপিএস। সংস্থাটির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে হেট ক্রাইম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধরনের অনলাইন অপরাধকে অফলাইন অপরাধের মতোই গুরুত্ব সহকারে দেখার ব্যাপারে সিপিএস অঙ্গীকারাবদ্ধ।

হেট ক্রাইমের বিরুদ্ধে প্রকাশনা এবং সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনেরও উদ্যোগ নিয়েছে সিপিএস। এই ক্যাম্পেইনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হেট ক্রাইট ম্যাটর্স’। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে লোকজনকে হেট ক্রাইম বন্ধে উদ্যোগী হতে আকৃষ্ট করা এবং সংঘটিত এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে তারা যেন যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করেন; সে বিষয়টি নিশ্চিত করা।

যুক্তরাজ্যের ডিরেক্টর অব দ্য পাবলিক প্রসিকিউশন্স অ্যালিসন সান্ডার্স। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে হেট ক্রাইমের একটা মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। ফলে সিপিএস-এর  জন্য এটা একটা অগ্রাধিকার বিষয়। এটা পুরো সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এটা মানুষকে তাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং ভয়ের মধ্যে বাস করতে বাধ্য করে।

এই সভ্য(!) যুগেও জাতিগত বা লৈঙ্গিক কারণে মানুষ হেট ক্রাইমের শিকার হতে পারেন। সাধারণত অনলাইনে হেট ক্রাইমের জন্য ফেসবুক, টুইটার বা খ্যাতনামা নিউজ সাইটগুলোর কমেন্ট বক্সকে বেছে নেয় অপরাধীরা। ‘হিটলার ঠিক পথেই ছিলেন’-সেখানে এমনটা মনে করার মতো মানুষও হয়তো মিলবে। এই একটা লাইন বা বাক্য আরও বহু কিছুর দিকে তাদের নিয়ে যেতে পারে।

অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তিও ট্রল বা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও কথা হয়েছে। খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ-কেউই এমন আক্রমণ থেকে শতভাগ সুরক্ষিত নন। কিন্তু জাতি, ধর্ম বা বর্ণের ভিত্তিতে কারও সঙ্গে এমন আচরণ নিন্দনীয়। এটা অপরাধ। সেটা সামনাসামনিই হোক আর অনলাইনেই হোক। এসব কর্মকাণ্ড সমাজে বিভক্তি তৈরি করছে। এটা মত প্রকাশের স্বাধীনতার অপব্যবহার। এসব বন্ধ হওয়া উচিত।

চলতি বছরের এপ্রিলে অনলাইনে ঘটা হেট ক্রাইম মোকাবেলায় বিশেষ একটি ইউনিটের ঘোষণা দেয় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। ২৪ এপ্রিল সোমবার ওই ঘোষণা দেওয়া হয়। অনলাইনে হয়রানির বিষয়ে অনুসন্ধান ও প্রতিকারে কাজ করে যাচ্ছে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের পাঁচ সদস্যের এই ইউনিট।

লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেন, ‘আমরা জানি যারা হেট ক্রাইমের শিকার হন তাদের উপর এটা কেমন ভয়াবহ প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে যারা অনলাইনে এমন নিপীড়নের শিকার হন। হামলাকারীরা মনে করে, তারা বোধ হয় পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছেন। কিন্তু তাদের এই ধারণা ভুল।’

/এমপি/
সম্পর্কিত
ইউরোপে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাপমাত্রা বাড়ছে
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
ইউক্রেনের খারকিভে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রুশ সেনারা
সর্বশেষ খবর
ভারতের মণিপুরে হয়রানির শিকার হয়েছে সাংবাদিক-সংখ্যালঘুরা: যুক্তরাষ্ট্র
ভারতের মণিপুরে হয়রানির শিকার হয়েছে সাংবাদিক-সংখ্যালঘুরা: যুক্তরাষ্ট্র
চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ আদায়, মোনাজাতে কান্না
চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ আদায়, মোনাজাতে কান্না
ঢাবির সুইমিংপুলে শিক্ষার্থী মৃত্যু: বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি
ঢাবির সুইমিংপুলে শিক্ষার্থী মৃত্যু: বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি
‘লম্বা’ নায়িকা প্রসঙ্গে কৃতির ব্যাখ্যা
‘লম্বা’ নায়িকা প্রসঙ্গে কৃতির ব্যাখ্যা
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
টাকা উড়ছে রেস্তোরাঁয়, নজর নেই এনবিআরের
টাকা উড়ছে রেস্তোরাঁয়, নজর নেই এনবিআরের
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ