X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে শিকাগো প্রবাসী রোহিঙ্গাদের দেনদরবার

বিদেশ ডেস্ক
১৯ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:২৭আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:২৯
image

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে যারা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী, তাদের বেশিরভাগেরই আবাস শিকাগো অঙ্গরাজ্য। সুদূর প্রবাস থেকে রাখাইনের সাম্প্রতিক সংকটকে তারা দেখছেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে। টেলিফোন, স্যাটেলাইট আর ইন্টারনেট মাধ্যম তাদের সামনে এনে হাজির করছে পুড়ে যাওয়া গ্রামের দৃশ্য, বীভৎস হত্যাযজ্ঞের আলামত কিংবা স্বজন হারানোর খবর। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা খবর দিয়েছে, সেখানকার রোহিঙ্গা কালচারাল সেন্টার পৃথিবীর সবথেকে বিপন্ন ওই জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিতের চেষ্টা করে যাচ্ছে। মার্কিন কংগ্রেসে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরব হতে, ওই সেন্টার সে দেশের আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে দেনদরবারের চেষ্টা করছে বলেও খবর দিয়েছে ভয়েস অব আমেরিকা। তারা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের যাকাত ফাউন্ডেশনের সহায়তায় চলা প্রতিষ্ঠানটি শরণার্থীদের ত্রাণ সহায়তারও ব্যবস্থা করছে।
শিকাগোর রোহিঙ্গা সেন্টার

রোহিঙ্গা কালচারাল সেন্টারে কাজ করেন আব্দুল জব্বার আমানুল্লাহ। মিয়ানমার ছেড়েছেন অনেকদিন।রাখাইনের সাম্প্রতিক উত্তেজনার পর থেকেই তিনি ইমেইল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলছেন দেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে। প্রযুক্তির মাধ্যমেই দেখেছেন নিজের গ্রাম পুড়ে যাওয়ার ভিডিও। তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা প্রবাসী রোহিঙ্গারা সবাই রাখাইনে থাকা তাদের স্বজনদের নিয়ে শঙ্কিত।

নিজ গ্রামের বাড়ি পুড়ে যাওয়া ১১ সেকেন্ডের ভিডিও দেখেছেন আমানুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা জানিনা কে আগুন দিয়েছে। সম্ভবত সেনাবাহিনী কিংবা তাদের সমর্থিত কোনও গোষ্ঠী।’  আমানুল্লাহ ভয়েস অফ আমেরিকাকে স্বজনদের নিয়ে বলেন, ‘তারা আমাকে জানিয়েছে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। সেনাবাহিনী তাদের ঘিরে ফেলেছে।’

মিয়ানমারে কী চলছে তা তার পক্ষে জানা সম্ভবও না। কারণ সাংবাদিক কিংবা ত্রাণকর্মী কেউই সেখানে যেতে পারছেন না। আর রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছে। তবে বরাবরই এই দাবি অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমারের সরকার। তাদের দাবি, সবকিছু বাড়িয়ে বলা হচ্ছে।

ড. ইমরান আকবর নামে একজন শিকাগো প্রবাসী রোহিঙ্গা সম্প্রতি বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির ঘুরে গেছেন। শিকাগো ফিরে আমানুল্লাহ সহ অন্যান্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। রোহিঙ্গা কালাচারাল সেন্টারে সবার সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন। তিনি বলেন, ‘সবার ঘটনা প্রায় একই। সেনাসদস্যরা আসছে, আগুন দিয়ে দিচ্ছে ও পুরুষদের গুলি করছে। বহু নারীকে অপহরণ করে ধর্ষণ করা হয়েছে। গ্রামবাসী পাহাড়ের দিকে পালিয়েছেন।’ আকবর ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ‘খাবার সংগ্রহের জন্য প্রায় মাইলখানেক এলাকাজুড়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে রোহিঙ্গারা। প্রতিদিনই সেখানে বৃষ্টি হয়। কাদার কারণে অনেক সময় খাবার পৌঁছে দেওয়া কঠিন হয়ে যায় গাড়িগুলোর। তাদের পরিচ্ছন্নতার সুযোগ নেই। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও অপ্রতুল। ফলে কলেরাসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।’

রোহিঙ্গা শিবিরে নিজের করা ভিডিও ও ছবি নিয়ে সিনেটর ডিক ডারবিনের সঙ্গে দেখা করেন আকবর। ডারবিন আকবরসহ সব রোহিঙ্গাদের কথা শোনেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যা জানতে পেরেছি তা হচ্ছে মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চলছে।’ তিনি অবিলম্বে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ডারবিন আকবরকে জানিয়েছেন, এই বিষয়ে নিয়ে কংগ্রেস ও প্রেসিডেন্ট কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত। তারা জানাবেন আসলে সেখানে কী হয়েছে। এটা না করার কোনও অজুহাত থাকতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা অনুমতি দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেখানে ত্রাণ পাঠানো উচিত নয়।’

ডারবিন মনে করেন এই সংকট সমাধানের বিষয়ে কংগ্রেসের সমর্থন রয়েছে। তিনি নিজেই মিয়ানমারের সরকারের সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা করছেন। জানিয়েছেন, ‘আমার কাজ হচ্ছে ওয়াশিংটনে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো। ডেমোক্রেট কিংবা রিপাবলিকানরা যারা আমার মতো চিন্তা করেন তাদের সামনে মিয়ানমারকে নিধনযজ্ঞ নিয়ে কথা বলতে হবে। এছাড়া সিনেটর জন ম্যাককেইনসহ দুই পক্ষের সঙ্গেই এই নিধনযজ্ঞ নিয়ে কথা বলতে হবে। তারা যদি জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকদের প্রবেশের অনুমতি না দেয় এবং নিধনযজ্ঞ চালিয়েই যায় তবে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ করে দিতে হবে।’ 

আব্দুল জব্বার আমানউল্লাহ গ্রামগুলোর আরও খবর ও ভিডিও চান, যেন সেগুলোকে প্রমাণ হিসেবে হাজির করে রোহিঙ্গাদের প্রতি মার্কিন আইনেপ্রণেতাদের নজর ফেরানো যায়। যেন তাদেরকে কংগ্রেসে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো যায়। তিনি শঙ্কিত, যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ নিতে দেরি করলে তার পরিবারের জন্য তা আবার খুব বেশি দেরি না হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী আগের মতোই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা হত্যা করছে, বাড়িতে আগুন দিচ্ছে। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে এই কাজগুলো বন্ধ করা।’

ডারবিন কংগ্রেসে এই বিষয়ে আওয়াজ তুলবেন বলে আশা প্রকাশ করেন আব্দুল জব্বার আমানউল্লাহ। তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমেই সৃষ্ট মানবিক সংকটের সমাধান করা যাবে।

 

/এমএইচ/বিএ/
সম্পর্কিত
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় চীন ও ইন্দোনেশিয়া
ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২৯ মাওবাদী নিহত
সর্বশেষ খবর
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় দুই শিশুসহ নিহত ৮
ইউক্রেনে রুশ বিমান হামলায় দুই শিশুসহ নিহত ৮
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!