X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নিষেধাজ্ঞা বাড়ালেও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথা ভাবছে না যুক্তরাষ্ট্র

বাধন অধিকারী ও ফাহমিদা উর্ণি
২৪ অক্টোবর ২০১৭, ২২:২৮আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০১৭, ২০:৩৪

নিষেধাজ্ঞা বাড়ালেও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথা ভাবছে না যুক্তরাষ্ট্র রাখাইনের সাম্প্রতিক সহিংসতায় মিয়ানমা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বদলের খবর দিয়েছে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি। কর্মকর্তাদের সূত্রে মঙ্গলবারের (২৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এপি জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা-নিপীড়নের আইনি সংজ্ঞা নির্ধারণে কাজ করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সোমবারের বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর মিয়ানমারে সামরিক সহযোগিতা স্থগিত করেছে। একইসঙ্গে মার্কিন উদ্যোগের কোনও অনুষ্ঠানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণও নিষিদ্ধ করেছে। তবে কর্মকর্তাদের সূত্রে এপি জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্র বাড়াতে তৎপর হলেও যুক্তরাষ্ট্র এখনই মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আইনের মুখোমুখি করার কথা ভাবছে না। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর অবশ্য এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এপি জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো নিপীড়নকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা একে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলতে চাইছে না। ১৯৯০-এর দশকে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এর ব্যাখ্যা এসেছে। তখন জাতিসংঘ কমিশন যুগোস্লাভিয়ার সংঘাতকে ‘কোনও এলাকাকে জাতিগতভাবে সমজাতীয়দের বসবাসের জায়গায় পরিণত করতে অন্য গোষ্ঠীর মানুষদেরকে জোরপূর্বক সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া’র চেষ্টা বলে সংজ্ঞায়িত করেছিল।

জাতিসংঘের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় জাতিগত নিধনযজ্ঞকে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সমান্তরাল মনে করা হয় না। আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এটি কোনও স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতও জাতিগত নিধনকে গহণহত্যা বিবেচনা করে না। এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই শুধুই জাতিগত নিধন মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবেও বিবেচিত হয় না। সে কারণে রাখাইনের ঘটনায় ‘জাতিগত নিধনে’র অভিযোগ আনলে যুক্তরাষ্ট্রকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে না।

নিষেধাজ্ঞা বাড়ালেও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথা ভাবছে না যুক্তরাষ্ট্র

মিয়ানমারে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ পর্যালোচনার দায়িত্বে নিয়োজিত মার্কিন কর্মকর্তাদের কাজের ব্যাপারে জানাশোনা রয়েছে, এমন সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি বলছে, রাখাইনের সহিংসতাকে ‘জাতিগত নিধন’ আখ্যা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের জন্য একটি সুপারিশপত্র তৈরি করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তাদের এ মূল্যায়ন ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের চাপ জোরালো করলেও আইনি পদক্ষেপে দিকে এগিয়ে দেবে না।

মার্কিন আইনজীবীরা যখন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা এবং দুই দেশের সামরিক সম্পর্কে কড়াকড়ি আরও জোরালো করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন, তখনই সুপারিশগুলো তৈরি করা হচ্ছে। এপি জানাচ্ছে, চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকেই মার্কিন কর্মকর্তাদের সুপারিশগুলো হাতে পেতে পারেন টিলারসন। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন, মার্কিন নীতিমালা বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীদের দেওয়া ওই সুপারিশ মঞ্জুর করা হবে কিনা।

মার্কিন সরকারের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রকাশ্যে বলার অনুমতি নেই, এমন দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এপিকে বলেন, মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা তা নিয়ে পররাষ্ট্র দফতর আপাতত পর্যালোচনা করবে না। এ ধরনের আখ্যা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জন্য হুমকি ডেকে আনতে পারে। কারণ এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের কাছে আইনি জবাবদিহিতা দাবি করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দায়ী করা হলেও এ বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি এবং তার সরকারের নেই বললেই চলে। মার্কিন কর্মকর্তারা এপিকে জানিয়েছেন, কঠোর পদক্ষেপ নিলে মিয়ানমারে সু চি’র গণতান্ত্রিক সংস্কারের উদ্যোগ বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে তাদের। এতে মিয়ানমার আরও বেশি করে চীনের দিকে ঝুঁকতে পারে বলে মনে করছেন তারা। সে কারণেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বদলে রাখাইন সহিংসতাকে ‘জাতিগত নিধনে’র আওতায় রাখতে চাইছেন তারা।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিচালক সারাহ মারগ্যান মনে করেন, ‘জাতিগত নিধন’ আখ্যা দিয়ে সেই ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াটা ধীরগতির। তবে এটি প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে।

নিষেধাজ্ঞা বাড়ালেও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথা ভাবছে না যুক্তরাষ্ট্র

বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সিনেটর বেন কার্ডিন মনে করেন, কেবল জাতিগত নিধন নয়, রাখাইনে গণহত্যার শিকার হচ্ছেন রোহিঙ্গারা। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একটি জাতিগত, সম্প্রদায়গত, বর্ণগত কিংবা ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া গণহত্যা বলে বিবেচিত হয়। জাতিসংঘ তাই মিয়ানমারকে এই সংজ্ঞায়নের আওতায় ফেলতে চায় না। তবে বছর দুয়েক আগে ইয়েলের আইন বিভাগ সেখানে ‘গণহত্যা সংঘটনের শক্তিশালী প্রমাণ’ পাওয়ার কথা জানায়।

এর মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রে মিয়ানমারের জেনারেলদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের কাছে চিঠি লিখেন মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩ জন কংগ্রেসম্যান। চিঠিতে দোষীদের বিরুদ্ধে ‘কার্যকর পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা। চিঠিতে বলা হয়, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মিয়ানমারের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি যারা এ ঘটনায় জড়িত, তাদের তালিকা প্রণয়ন করে একে একে নিষিদ্ধ করতেও বলা হয়েছে। এদিকে ২১ সিনেটর জাতিসংঘের মার্কিন দূত নিকি হ্যালির কাছে চিঠি লিখে রাখাইনের ঘটনায় দায়ী সুনির্দিষ্ট শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের ওপর ব্হুমুখী অবরোধের প্রস্তাব দিয়েছেন।

মিয়ানমারের জঘন্য সামরিক শাসনের কারণে ১৯৮৯ সাল থেকে দেশটিতে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৫ সালের নভেম্বরের কথিত ঐতিহাসিক নির্বাচনে সু চি’র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) নিরঙ্কুশ জয় পায়। ২০১৬ সালের শুরুতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করে যৌথতার ভিত্তিতে একটি ডি-ফ্যাক্টো সরকার গঠন করেন সু চি। ওই ডি-ফ্যাক্টো সরকার ক্ষমতা নেওয়ার কয়েক মাসের মাথায় ২০১৬ সালে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ১৯৮৯ সালে জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন ওবামা প্রশাসন।

উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনযজ্ঞ শুরু করে সামরিক বাহিনী। হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৬ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ জানিয়েছে, খুব শিগগিরই বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।

/এফইউ/টিআর/
সম্পর্কিত
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
সর্বশেষ খবর
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!