X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা নিপীড়নকে ‘জাতিগত নিধন’ বলতেও আপত্তি মার্কিন কর্মকর্তাদের একাংশের

বিদেশ ডেস্ক
২৫ অক্টোবর ২০১৭, ২০:১২আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০১৭, ২০:১৫
image

রাখাইনের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনার আগ পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাবিরোধী সহিংসতাকে ‘জাতিগত নিধন’ আখ্যা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। নিউ দিল্লি টাইমস-এর এক প্রতিবেদন থেকে এ কথা জানা গেছে। সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি তাদের মঙ্গলবারের এক প্রতিবেদনে খবর দেয়, রাখাইনের সহিংসতাকে ‘জাতিগত নিধন’ আখ্যা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনের জন্য একটি সুপারিশপত্র তৈরি করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।  আন্তর্জাতিক আদালতের বিধান অনুযায়ী কেবল জাতিগত নিধনের কারণে আইনি পথ নেওয়ার সুযোগ নাই। সে কারণে রাখাইনের ঘটনায় ‘জাতিগত নিধনে’র অভিযোগ আনলে যুক্তরাষ্ট্রকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে না।

রোহিঙ্গা
জাতিসংঘের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় জাতিগত নিধনযজ্ঞকে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সমান্তরাল মনে করা হয় না। আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এটি কোনও স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত নয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতও জাতিগত নিধনকে গহণহত্যা বিবেচনা করে না। এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই শুধুই জাতিগত নিধন মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবেও বিবেচিত হয় না। তবে নিউ দিল্লি টাইমস বলছে, আইনি কোনও পদক্ষেপের সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা নিপীড়নকে ‘জাতিগত নিধন’ আখ্যা দেওয়ার ক্ষেত্রে জেষ্ঠ্য মার্কিন কর্মকর্তাদের একাংশের সায় নেই।

সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন মার্কিন আইন প্রণেতাকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সাপ্তাহিক নিউ দিল্লি টাইমস মঙ্গলবার জানিয়েছে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর চালানো নিপীড়নকে ‘জাতিগত নিধন’ ঘোষণা করতে ট্রাম্প প্রশাসনকে চাপ দিচ্ছেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা। সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, তবে খোদ মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কয়েকজন কর্মকর্তাই রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত সহিংসতাকে ‘জাতিগত নিধন’ মনে করলেও মিয়ানমারকে ওই আখ্যা দিতে রাজি নন কর্মকর্তাদের কেউ কেউ।  

কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এপি জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো নিপীড়নকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা একে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলতে চাইছে না। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক মার্কিন উপ সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্যাট্রিক মুরফিকে উদ্ধৃত করে নিউ দিল্লি টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে মার্কিন দূত স্কট মার্সিয়েলসহ সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা পরিদর্শন করেছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক মার্কিন উপ সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্যাট্রিক মুরফি। মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে তিনি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যের ভেতরে আমরা গুরুতর নৃশংসতার আলামত দেখেছি।’ রাখাইনের সহিংসতাকে ওয়াশিংটন ‘গণহত্যা’ নাকি ‘জাতিগত নিধন’ আখ্যা দেবে সেই প্রশ্নের প্রসঙ্গ টেনে প্যাট্রিক বলেন, ‘কিভাবে একে বর্ণনা করা যাবে সে ব্যাপারে আলোচনার টেবিলে সব সুযোগই রাখা আছে।’

সিনেট ফরেন রিলেশন কমিটির এক শুনানিতে জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসনবিষয়ক মার্কিন সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক স্টোরেলার কাছে আইন প্রণেতারা জানতে চান, রোহিঙ্গা নিপীড়নকে তিনি জাতিগত নিধন বলে মনে করেন কিনা। আইন প্রণেতাদের প্রশ্নের জবাবে স্টোরেলা বলেন, ‘এটাকে আজকে চিহ্নিত করার মতো অবস্থানে আমি নেই, তবে দীর্ঘ কর্মজীবনে আমার দেখা কিছু ঘৃণ্য নৃশংসতার শামিল এটি।’ ম্যারিল্যান্ডের ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটর বেন কার্ডিন বলেন, ‘এটি যে জাতিগত নিধন সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। হ্যাঁ, আমি মনে করি এটি গণহত্যা।’

রোহিঙ্গা ১
গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং শ্রমবিষয়ক সাবেক সহকারি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টম মালিনৌস্কি ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, ‘জেনোসাইড কনভেনশন অনুযায়ী, গণহত্যা হলো একটি আইনি পরিভাষা। জাতিগত নিধন আইনি পরিভাষা নয়। নির্দিষ্ট ধরনের নৃশংসতা বর্ণনা করতে আমরা এ বুলিটি ব্যবহার করি। তাছাড়া, এ ধরনের আখ্যাগুলো (জাতিগত নিধন) অতোটা গুরুতর নয়। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কোন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু এ ধরনের আখ্যা (জাতিগত নিধন) কোনও আইনগত বাধ্যবাধকতা বহন করে না।’

মঙ্গলবার রাখাইনের সাম্প্রতিক সহিংসতায় মিয়ানমার প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বদলের খবর দেয় মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি। কর্মকর্তাদের সূত্রে মঙ্গলবারের (২৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এপি জানায়, রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা-নিপীড়নের আইনি সংজ্ঞা নির্ধারণে কাজ করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সোমবারের বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর মিয়ানমারে সামরিক সহযোগিতা স্থগিত করেছে। একইসঙ্গে মার্কিন উদ্যোগের কোনও অনুষ্ঠানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণও নিষিদ্ধ করেছে। তবে কর্মকর্তাদের সূত্রে এপি জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্র বাড়াতে তৎপর হলেও যুক্তরাষ্ট্র এখনই মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আইনের মুখোমুখি করার কথা ভাবছে না। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর অবশ্য এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

মিয়ানমারের জঘন্য সামরিক শাসনের কারণে ১৯৮৯ সাল থেকে দেশটিতে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৫ সালের নভেম্বরের কথিত ঐতিহাসিক নির্বাচনে সু চি’র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) নিরঙ্কুশ জয় পায়। ২০১৬ সালের শুরুতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথতার ভিত্তিতে আঁতাতভিত্তিক একটি ডি-ফ্যাক্টো সরকার গঠন করেন সু চি। ওই ডি ফ্যাক্টো সরকার ক্ষমতা নেওয়ার কয়েক মাসের মাথায় ২০১৬ সালে তৎকালীন ওবামা প্রশাসন ১৯৮৯ সালে মিয়ানমারে জারিকৃত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানায়। ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম হোয়াইট হাউসের বরাত দিয়ে খবর দেয়, গণতন্ত্রের পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করায় নির্বাহী আদেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিয়ানমারের ওপর থেকে আংশিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

 

/এফইউ/বিএ/
সম্পর্কিত
বিরল সূর্যগ্রহণ দেখতে নায়াগ্রা জলপ্রপাতে জড়ো হবেন ১০ লাখ দর্শনার্থী
সমলিঙ্গের বিয়ে অনুমোদনের পথে থাইল্যান্ড
মস্কোয় কনসার্টে হামলা: প্রশ্নের মুখে রুশ গোয়েন্দা সংস্থা
সর্বশেষ খবর
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীপুত্র ইলহাম!
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীপুত্র ইলহাম!
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়