X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি আরবে নেমে যেমন আচরণ পেয়েছিলেন হারিরি

বিদেশ ডেস্ক
১২ নভেম্বর ২০১৭, ০৪:৩৮আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০১৭, ১২:১৩
image

সৌদি সফরের শুরু থেকে লেবাননের পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি চমক পেয়েছেন। সৌদি আরব সফরের সময় তাকে কোনোরকম রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনা জানানো হয়নি রিয়াদের পক্ষ থেকে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

সৌদি আরবে নেমে যেমন আচরণ পেয়েছিলেন হারিরি

প্রতিবেদনে বলা হয়, তাকে স্বাগত জানানোর সময় কোনও সৌদি প্রিন্স বা মন্ত্রী ছিলেন না। তার মোবাইল রেখে দেওয়া হয়েছিলো। আর পরদিনই তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে বলে হারির কাছের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা দাবি করেছেন।

পদত্যাগের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে চলা ইরান-সৌদি স্নায়ুযুদ্ধ নতুন মোড় পায়। ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে চলছে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই পরাশক্তির ছায়াযুদ্ধ। যুদ্ধরত বিপরীত দুই পক্ষকে সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব ও ইরান। আর এখন এই অস্থিতিশীলতার শঙ্কা ছড়াচ্ছে লেবাননে। লেবাননে ইরান সমর্থিত রাজনৈতিক দল হিজবুল্লাহর ক্ষমতা খর্ব করতেই মূলত এই চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে ধারণা।

হারিরির কাছের এক সূত্র জানায়, সৌদি মিত্র হারিরি হিজবুল্লাহর মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে সৌদি আরব।

লেবাননের একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, হারিরির বড় ভাই বাহাকে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায় সৌদি আরব। ধারণা করা হচ্ছে তিনি সৌদি আরবেই আছেন। তার প্রতি হারিরি পরিবারকে সমর্থন দিতে বলা হলেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তারা।

এক সূত্র জানায়, ‘হারিরি যখন রিয়াদে অবতরণ করেন, সাথে সাথেই বুঝে যান কোনও ঝামেলা আছে। তার জন্য কেউই অপেক্ষা করছিলেন না।’

তবে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করানোর দাবি অস্বীকার করেছে সৌদি আরব। তার আগমনের কারও উপস্থিত না থাকার বিষয় নিয়ে তাদের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তার ফোন নিয়ে নেওয়া হয়েছিলো কিনা কিংবা তার ভাইকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর পরিকল্পনা ছিলো কিনা এমন প্রশ্নেরও জবাব মেলেনি কারও কাছ থেকে।

পদত্যাগের পর হারিরিও কোনও কথা বলেননি। তিনি কবে লেবানন ফিরবেন সে সম্পর্কেও কোনও আভাস মেলেনি।

২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে এক ফোনের মাধ্যমে হারিরিকে সৌদি আরবে তলব করা হয়। দেশ ছাড়ার আগে তিনি তার কর্মকর্তাদের বলে যান যে সোমবার থেকে স্থগিত আলোচনা শুরু করবেন তিনি। তার মিডিয়া টিমকে বলেন, শার্ম আল শেখে রেড সি রিসোর্টে তাদের সঙ্গে কতা বলবেন। সেখানে মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আবদের ফাত্তাহ আল সিসির সঙ্গে সাক্ষাত করার কথা ছিলো তার।

এরপর হারিরি রিয়াদে তার বাড়িতে যান। সেখানে ব্যবসা করে তার পরিবার লাভবান হয়েছে। এক সূত্র জানায়, শনিবার সৌদি প্রটোকল কর্মকর্তার কাছ থেকে ফোন পান হারিরি। তাকে বলা হয় যে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তার সঙ্গে দেখা করতে চান।  চারঘণ্টা অপেক্ষা করার পর তিনি টেলিভিশনে নিজের পদত্যাগপত্র পড়েন।

লেবাননের এক রাজনীতিবিদ জানান, সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর থেকে তাকে কোনোরকম সম্মান প্রদর্শন করেননি কর্মকর্তারা।

হারিরি প্রায়ই সৌদি সফর করেন। কয়েকদিন আগেও এক সফরে যুবরাজ বিন সালমানের আয়োজনে সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। এছাড়া লেবাননের জন্য নিযুক্ত সৌদি কর্মকর্তা গালফ এফেয়ার্স বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সাবহানের সঙ্গেও দেখা হয়েছিলো তার।

এক সূত্র জানায়, সেই সফর থেকে বেশ স্বাচ্ছন্দ্রেই ফিরে এসেছিলেন হারিরি। সাবহানের সঙ্গে একটি সেলফিও দেখা যায় তার। তিনি তার সহযোগীদের বলেছিলেন, যুবরাজের কাছ থেকে উৎসাহমূলক কথা শুনেছিলেন তিনি। লেবাননের সেনাবাহিনীকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি।

ওই সূত্র জানায়, হারিরি ভেবেছিলেন লেবাননের স্থিতিশীলতা রক্ষায় হিজবুল্লাহর সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করা প্রয়োজন এই বিষয়টি বোঝাতে সৌদি কর্মকর্তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি।

হিজবুল্লাহ সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন। লেবানন পার্লামেন্টে তাদের আসন রয়েছে এবং সরকার পরিচালনায় তাদের প্রভাব রয়েছে। ইরান সমর্থিত এই গোষ্ঠীর ক্ষমতা খর্ব করতে চায় সৌদি আরব। 

বৈঠকে উপস্থিত থাকা এক সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে যাই হোক না কেন। হারিরি বোঝাতে চেয়েছেন  লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে কি করতে হবে, সেই নয়তো লেবাননে অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে। হয়তো বিষয়টি পছন্দ  হয়নি সৌদি আরবের।

তিনি জানান, হারিরি সাবহানকে বলেছিলেন যে লেবাননে যেই বিষয় তার নিয়ন্ত্রণে নেই সেটা নিয়ে যেন দায়ী করা না হয়। কিন্তু হিজবুল্লাহকে নিয়ে সৌদি অবস্থানকে ছোট করেছেন হারিরি। ওই সূত্র বলেন, ‘সৌদি আরবের জন্য এই যুদ্ধ একদমই স্পষ্ট। আমাদের ক্ষেত্রে হয়তো সেটা কিছুটা কম।’

তবে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করার সাবহানকে পাওয়া যায়নি।

হারিরির পদত্যাগে তার সঙ্গে থাকা দল খুবই অবাক হয়েছেন। লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন অভিযোগ করেছেন, সৌদি আরব হারিরিকে অপহরণ করেছে। শুক্রবার ফ্রান্সও জানায় তারা ‘হারিরি সবরকম স্বাধীনতা’ চায়।

পদত্যাগের সময় হারিরি দাবি করেছিলেন, হত্যার ভয়ে তিনি পদত্যাগ করছেন আর এজন্য ইরান ও হিজবুল্লাহকে দায়ী করেন তিনি। তিনি বলেন, আরব বিশ্বে কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে ‘হাত বাড়ালে তা কেটে ফেলা হবে’।   সৌদি যুবরাজের নেতৃত্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযানে ১১জন প্রিন্স এবং সাবেক ও বর্তমান বেশকয়েকজন মন্ত্রীর গ্রেফতারের মাঝেই হারিরি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

/এমএইচ/বিএ/
সম্পর্কিত
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
স্থায়ী সংঘাতে পরিণত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা: তুরস্ক
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া