সৌদি আরবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দুর্নীতির দায়ে আটককৃত ছয় প্রিন্স। তার মধ্যে ছিলেন যুবরাজ হওয়ার সম্ভাবনায় থাকা প্রিন্স মিতেব বিন আব্দুল্লাহ। শনিবার এক প্রতিবেদনে এমনটা দাবি করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ছয়জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা এতটাই গুরুতর ছিলো যে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিইউতে স্থানান্তর করতে হয় তাকে।
হাসপাতালের কর্মীদের বলা হয়, ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’ করায় আহত হয়েছেন তারা। তবে তাদের শরীরে নির্যাতনের ছাপ স্পষ্ট। এমনকি মিলিটারি বুটের ছাপও রয়েছে শরীরে।
মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, আটককৃতদের মধ্যে অন্তত ১৭জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।
সৌদি যুবরাজের নির্দেশেষ দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে এরইমধ্যে ৫ শতাধিক ব্যক্তিকে আটকের খবর পাওয়া গেছে। আটককৃতদের একাংশের ওপর ভয়াবহ শারীরিক নির্যাতন হয়েছে বলেও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে সৌদি আরবে গিয়ে ইরান ও হিজবুল্লাহর ওপর দায় চাপিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি। ইয়েমেনকেও ইরানবিরোধী ছায়াযুদ্ধের নাট্যমঞ্চ বানানোর চেষ্টা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্যাতনের শিকারদের হাসপাতালে নেওয়া থেকে ঠেকাতে রিতজ কারর্টন হোটেলেই মেডিকেল ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানেই ঘটছে নির্যাতনের গটনা। ওই হোটের ছাড়াও কোর্টইয়াড ও ডিপ্লোমেটিক কোয়ার্টার হোটেলে রাখা হয়েছে আটককৃতদের।
দুইটি হোটেলই মার্কিন হোটেল চেইন ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা পরিচালিত। তাদের এক মুখপাত্র জানান, হোটেলগুলো স্বাভাবিক নিয়মে চলছে না।
টেক্সাসের নাগরিক অধিকার বিষয়ক আইনজীবী রানদাল কালিনান জানান, এই হোটেলগুলো শুধুমাত্র সৌদি আরবীয় আইনই মেনে চলে। তিনি বলেন, ‘যদি সেখানে কোনও অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে তবে সেটি সেই দেশের আইন অনুযায়ী প্রক্রিয়াগত হবে।’
হোটেলগুলো তাদের ওয়েবসাইটে জানায়, পুরো ডিসেম্বর মাসজুড়ে তারা কোনও অতিথিকে স্বাগত জানাতে পারছে না।
প্রিন্স মিতলেব আগে ন্যাশনাল গার্ডের মন্ত্রীর দায়িত্বপালন করেচিলেন। ২০১৩ সাল থেকেই তিনি রাজপরিবারকে রক্ষা করে আসছিলেন। এরপর ৪ নভেম্বর আটক হন ৬৫ বছর বয়সী এই প্রিন্স। তিনি এর আগে সামরিক বাহিনীতে ছিলেন। তাকে পরবর্তী যুবরাজ হিসেবে ভাবা হতো। সাবেক বাদশাহ ফাহাদের ছেলে প্রিন্স আব্দুল বিন ফাহাদকেও আটকের কিছুদিন পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
আটক অভিযানের পরপরই প্রায় ১৭০০ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়। এক মার্কিন সূত্র দাবি করে, এই অ্যাকাউন্টগুলো থেকে এক ট্রিলিয়ন ডলার জব্দ করার চেষ্টা করছেন সৌদি যুবরাজ। সংবাদমাধ্যম ফিন্যানসিয়াল টাইমস জানায়, সৌদি কর্তৃপক্ষ আটককৃতদের সঙ্গে সমঝোতায় যাওযার চেষ্টা করছে। তাদের দাবি, ৭০ শতাংশ সম্পদের বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হবে তাদের। তাদের মধ্যে রয়েছেন আরবীয় ধনকুবের আল-ওয়ালিদ বিন তালালও।
ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনালের মতো একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মার্কিন হোটেল কিভাবে এর অনুমতি দিচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদেরকে এনিয়ে প্রশ্ন করলে একজন মুখপাত্র জানান, এখন হোটেলগুলো তাদের স্বাভাবিক নিয়মে নেই। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে তারা কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অতিথি ও অন্যান্য গ্রুপগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তাদের ভ্রমণের ঝক্কি যত কম সেই বিষয়টা দেখছি আমরা।’