X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদে নতুন কৌশল নিচ্ছে ইসরায়েল

বিদেশ ডেস্ক
১৯ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:২১আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:০৮

ফিলিস্তিনিদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদে নতুন কৌশল নিয়েছে ইসরায়েল। এতোদিন তারা বিভিন্ন বসতির কয়েকটি বাড়ি বা স্থাপনা উচ্ছেদের চেষ্টা করত। এতে তাদের খুব বেশি লাভ হতো না। কারণ এসব উচ্ছেদের জন্য আইনি প্রক্রিয়া মোকাবিলা করতে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেত। তাই এখন উন্নয়ন পরিকল্পনার অজুহাতে বিভিন্ন স্থানে পুরো গ্রাম বা এলাকা দখলের কৌশল নিয়েছে তারা ।

ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদে ইসরায়েলের নতুন কৌশল

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার পশ্চিম তীরের পূর্ব জেরুজালেমের জাবাল আল বাবা নামে একটি গ্রামের বাসিন্দাদের সেখান থেকে চলে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়। গ্রামটিতে ফিলিস্তিনের বেদুইন সম্প্রদায়ের ৩শ’র বেশি মানুষ বাস করে।

আতালাহ জাহালেন নামে ওই গ্রামের এক নেতা আল জাজিরাকে বলেন, ‘এখানকার বাসিন্দারা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ভীত হয়ে পড়েছেন। তারা সারাজীবন এখানে বাস করে এসেছেন। কিন্ত এখন যেকোনও মুহূর্তে তা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।’

জাহালেন জানান, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের বেসামরিক প্রশাসনের লোকজন ও পুলিশ গিয়ে সেখানে একটি নোটিশ টানিয়ে দেয়। এতে ৮ দিনের মধ্যে তাদের গ্রামের জায়গা খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ তাদের উচ্ছেদ করবে বলে জানানো হয়।

ইসরায়েলে কর্মরত বেসরকারি সংস্থা –বিমকম’এর গবেষক হিসেবে অ্যালান কোহেন লিফশিজ এটাকে ইসরায়েলের একটি নতুন কৌশল হিসেবে দেখছেন। তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের বিতাড়িত করার জন্য সম্প্রতি এ ধরনের নোটিশ দেওয়া হচ্ছে।

কোহেন লিফশিজ জানান, এতোদিন ফিলিস্তিনিদের বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়ে ইসরায়েল সরকারের তেমন লাভ হচ্ছিল না। কারণ এসব নির্দেশের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল ও পিটিশন আদালতে নিষ্পত্তি হতেই কয়েক বছর লেগে যায়। আর নতুন কৌশলে কোনও নির্দিষ্ট বাড়ি বা স্থাপনানয়, পুরো এলাকাকে লক্ষ্য করা হচ্ছে। এ কৌশলে আইনগত ঝামেলাও তুলনামূলক কম।

‘ইর আমিম’ নামে আরেকটি বেসরকারি সংস্থার গবেষক আভিভ তাতার্স্কি বলেন, জালাল আল বাবা গ্রামটিতে নতুন কৌশলের অংশ হিসেবে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটা কোনও নির্দিষ্ট স্থানের বিরুদ্ধে সাময়িক উচ্ছেদ নোটিশ না। এটা ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে বিতাড়িত করার নতুন কৌশল।’

তাতার্স্কি আরও জানান, এভাবে নির্বিচারে উচ্ছেদের মাধ্যমে ইসরায়েল মাওল আডুমিম নগরটিকে আরও বিস্তৃত করতে চায়। এর ফলে ফিলিস্তিনিদের অধিকারে থাকা পশ্চিম তীরের বাকি ৪০ শতাংশ ভূমিও উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ হয়ে যাবে।

ফিলিস্তিনের ‘এরিয়া-এ’ ফিলিস্তিনি প্রশাসনের আওতায় রয়েছে। আর এ অঞ্চলেই ফিলিস্তিনের বেশিরভাগ শহর রয়েছে। ‘এরিয়া-বি’ তে ফিলিস্তিনের গ্রামাঞ্চলগুলো রয়েছে। এটা ফিলিস্তিনি প্রশাসেনর আওতায় থাকলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল যৌথভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে ‘এরিয়া-সি’-তে বসাবসকারী ফিলিস্তিনিদের জন্য চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যবস্থা করে ফিলিস্তিন, কিস্তু বসতি নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল।

জাবাল আল বাবা গ্রামটি পশ্চিম তীরের এরিয়া-সি তে অবস্থিত। ইসরায়েলি প্রশাসন ও সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত ওই এলাকায় অনুমতি ছাড়া ফিলিস্তিনিদের পক্ষে প্রবেশ প্রায় অসম্ভব। গ্রামটির তিন দিকেই ইসরায়েলের দেয়াল রয়েছে। তাই উন্নয়ন পরিকল্পনার নামে ইসরায়েল তাদের ভেতরে নিয়ে নিতে চাচ্ছে। তাতার্স্কির মতে, ইসরায়েল এরিয়া সি-তে ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা যথাসম্ভব কমিয়ে ফেলার জন্য এমন উদ্যোগ নিয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদে নতুন কৌশল নিচ্ছে ইসরায়েল

পশ্চিম তীরের এরিয়া-সি অঞ্চলে বসতিসহ যেকোনও ধরনের স্থাপনা নির্মাণ তদারককারী ‘কোঅর্ডিনেটর অব গভর্মেন্ট অ্যাকটিভিটিজ ইন দ্য টেরিটোরিজ’ (কোগ্যাট) সংস্থাটি মূলত ইসরায়েল সরকারের হয়ে কাজ করে। সংস্থাটির একজন মুখপাত্র বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের নির্দেশনার কথা স্বীকার করে জানান, ওই অঞ্চলে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ প্রতিরোধের অংশ হিসেবে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জাবাল আল বাবা গ্রামের বাসিন্দারা ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সময় নেগেব থেকে বিতাড়িত হয়ে এসে বসতি স্থাপন করেন। ১৯৬৭ সালে ফিলিস্তিন দখল করে নেওয়ার পর ইসরায়েল গ্রামটিকে ফিলিস্তিনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তারা সেখানে নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান চালায়। 

গ্রামের বাসিন্দা জাহালেন আরও জানান, ইসরায়েলের অনুমতি ছাড়া নির্মাণ করার অজুহাতে গত তিন বছরে গ্রামের ৫৭টির মধ্যে ৫২টি বাড়িই ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গত আগস্ট মাসে গ্রামের একমাত্র স্কুলটিও ভেঙে দিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। বার বার ভেঙে দেওয়ার পরও বাসিন্দারা তা মেরামত করে বসবাস করছেন। কিন্তু সর্বশেষ নোটিশে এমন সুযোগও রাখা হয়নি।

জাহালেন বলেন, ‘আমরা এখানে খুব সাধারণ জীবনযাপন করি। কিন্তু আমরা ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা। আমাদের গ্রামটি জেরুজালেমের দিকে ইসরায়েলের বসতি বাড়ানোর পথে বাধা হয়ে আছে। তাই আমরা এ জায়গার অধিকার ছাড়বো না। যদি তারা আমাদের উচ্ছেদ করতে পারে, তাহলে ফিলিস্তিনের অন্যান্য স্থানের বাসিন্দাদেরও উচ্ছেদ করে ছাড়বে।’

 

/আরএ/এএ/
সম্পর্কিত
ইসরায়েলের আকরে শহরে হামলার দাবি করলো হিজবুল্লাহ
গাজার হাসপাতালে গণকবর, আতঙ্কিত জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
সর্বশেষ খবর
আরও কমলো সোনার দাম  
আরও কমলো সোনার দাম  
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না