X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

নায়ক থেকে খলনায়ক মুগাবে

বিদেশ ডেস্ক
২২ নভেম্বর ২০১৭, ০২:২৭আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০১৭, ০৩:৪৭

জিম্বাবুয়ের সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে। ৩৭ বছর ধরে দেশটি শাসন করেছেন তিনি। তার নামটিই যেন হয়ে উঠেছিল জিম্বাবুয়ের প্রতিশব্দ। শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন মুগাবে। সেই লড়াইয়ে জয়ী হয়ে মানুষের কাছে নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন মুগাবে। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা তিনি ধরে রাখতে পারেননি। তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশই মনে করছে, তিনি জিম্বাবুয়ের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে দুর্নীতি আর বলপূর্বক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার। এসব বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যখন ব্যাপক আকারে ক্ষোভ দানা বাধতে শুরু করে তখনই তাকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সেনাবাহিনী। আর এরপরই রাজধানী হারারের রাস্তায় নেমে আসেন হাজারো মানুষ। এ সময় তারা উল্লাস প্রকাশ করেন। ৩৭ বছরের মাথায় নায়ক থেকে খলনায়কে পরিণত হন রবার্ট মুগাবে। রবার্ট মুগাবে
২০০০ সাল থেকে জিম্বাবুয়েতে সরকারবিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করলে কঠোর হাতে তা দমনের পথ বেছে নেন মুগাবে। এমন মন্তব্যও করেছেন যে, একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া কেউ তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে না। সমালোচকরা বলছেন, মুগাবে যেন নিজেকে আফ্রিকা মহাদেশের একজন একনায়কের প্রতিমূর্তিতে পরিণত করেছেন। তিনি এমন একজন একনায়ক; যিনি নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে পুরো একটি দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। দিনশেষে তারও বিদায় ধ্বনি বেজে উঠেছে। যেই নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ভর করে ক্ষমতাকে আরও দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিলেন; শেষ পর্যন্ত তারাই তাকে সরিয়ে দিয়েছে।

আর দশজন রাজনীতিকের মতো শুধু মাঠের রাজনীতি দিয়েই ক্ষমতার সর্বোচ্চ আসনে আসীন হননি রবার্ট মুগাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি ডিগ্রি রয়েছে তার। দীর্ঘ সময়ের শাসক হিসেবে ব্যর্থতা যেমন আছে; তেমনি আছে উল্লেখ করার মতো সাফল্যও। মোট জনসংখ্যার মাত্র ১.৫ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে তিনি প্রায় ৭৫ হাজার একর জমি পুনরুদ্ধার করেন। মনোযোগী হন দেশের সাধারণ মানুষ তথা কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষমতায়নে।

দৃশ্যত ১৯৮০ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা মুগাবের মুগাবে’র বিদায়ের কারণ সেনাবাহিনী। কিন্তু কেন তারা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা একজন নেতাকে সরিয়ে দেবে! এর একটা উত্তর হতে পারে জনরোষ। গত কয়েক বছরে দেশটির অর্থনীতি প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। আর এজন্য মুগাবের ব্যর্থ নীতিকেই দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ।

জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়েছেন মুগাবে-এতটুকু বলেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগের উপসংহারে আসতে চাইছেন না সমালোচক ও বিরোধীরা। তারা বলছেন, মুগাবের ক্ষমতার মোহ ছিল অস্বাভাবিক রকমের। এই ক্ষমতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এক সময়ের জনপ্রিয় রাজনীতিক মুগাবে হয়ে উঠেন একজন স্বেচ্ছাচারী প্রেসিডেন্ট।

সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গদের কাছ থেকে জমি উদ্ধার করে বাহবা কুড়িয়েছিলেন মুগাবে। কিন্তু বাস্তবে সেই জমির হাতবদলটাই প্রকট আকারে দৃশ্যমান হয়েছে। নিজের সহযোগীদের মধ্যে এসব জমি বণ্টন করে দিয়েছেন তিনি।

রবার্ট মুগাবে এবং স্ত্রী গ্রেস

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মুগাবের দুর্নীতি বা একনায়কতন্ত্র নতুন কিছু নয়। বরং ফার্স্ট লেডি গ্রেস-এর অতিমাত্রায় উচ্চাভিলাষী ও আগ্রাসী স্বভাবই তার জন্য কাল হয়েছে। কেননা ফার্স্ট লেডির পথ সংহত করতেই দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, নিজের ঘোষিত উত্তরসূরি ভাইস প্রেসিডেন্ট ইমারসন নানগাগুয়াকে বরখাস্ত করেন মুগাবে। তার এমন পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয় দেশের সাধারণ মানুষ। পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সেনা সদরে। মুগাবেকে নিজ বাড়িতে গৃহবন্দি করে তাকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেয় সেনাবাহিনী। এক পর্যায়ে ১০ নভেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন এই ঝানু রাজনীতিক।

পদত্যাগপত্রে মুগাবে লিখেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন এবং নির্বিঘ্নে ক্ষমতার হস্তান্তরের সুযোগ করে দিতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এই পদত্যাগের সিদ্ধান্তে তার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া অভিশংসন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়েছে। পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার খবর পেয়ে দেশটির আইনপ্রণেতা ও সাধারণ মানুষদের রাস্তায় উল্লাস করতে দেখা গেছে।

এর আগে, গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে সেনাবাহিনী জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানায় এবং মুগাবেকে গৃহবন্দি করে। এরপর জনগণের দাবির মুখে মুগাবেকে দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয় দেশটির ক্ষমতাসীন দল জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন-প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট (জানু-পিএফ)। একইসঙ্গে দলটি মুগাবে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিল।

মুগাবে অবশ্য বরাবরই পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এসেছেন। পদত্যাগের ব্যাপক চাপের মাঝেও জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি জানান, ক্ষমতা ছাড়ছেন না। তবে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।

ধারণা করা হচ্ছে, বরখাস্তের পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া এমারসন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে পারেন। সাবেক নিরাপত্তা প্রধান এমারসন কুমির হিসেবে পরিচিত। তিনি মুগাবের ঘনিষ্ঠদের একজন ছিলেন। সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের দমনে বড় ভূমিকা ছিল তার। সেপ্টেম্বরে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, মুগাবেকে উৎখাতের পরিকল্পনা করছেন এমারসন। তাকে সমর্থন করছে সেনাবাহিনী। সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।

/এমপি/
সম্পর্কিত
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
আটলান্টিক মহাসাগরে পাওয়া ৯ মরদেহের পরিচয় নিয়ে যা বললো ব্রাজিল
ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবে নিহত ৯, উদ্ধার ২২
সর্বশেষ খবর
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সারা দেশে আরও ৭২ ঘণ্টার ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি