X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঐতিহাসিক সফরে পোপ কি ‘রোহিঙ্গা’ প্রশ্নের জবাব দেবেন?

বাধন অধিকারী ও ফাহমিদা উর্ণি
২৭ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:৪৯আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০১৭, ২৩:২২
image

রোহিঙ্গাদের আত্মপরিচয়ের প্রশ্নে পোপ ফ্রান্সিস সচেতনতার সাক্ষ্য দিয়েছেন আগেই। বিশ্বের সবথেকে নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীকে ডেকেছেন ‘রোহিঙ্গা’ নামেই। তবে সফরের আগেই মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করতে মানা করা হয়েছে পোপকে। এখন পোপ রোহিঙ্গাদের আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন থেকে সরে আসেন নাকি মিয়ানমারের আহ্বান উপেক্ষা করে বিপন্ন ওই জনগোষ্ঠীকে নিয়ে সরব হন, সেদিকেই তাকিয়ে বিশ্ব।

বিমান বন্দরে পোপ ফ্রান্সিস
এ বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনযজ্ঞ চালানো শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে। নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন ও মানবতার পক্ষের মানুষেরা। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে সেনাবাহিনী। দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’ও রোহিঙ্গাদের পক্ষে কোনও ইতিবাচক ভূমিকা নেননি। লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন অবস্থায় পোপ ফ্রান্সিসের এই সফর মূলত কূটনৈতিক হলেও এই বাস্তবতায় এটি হবে তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

আদি জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয় স্বীকার করে না মিয়ানমার। তাদের নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন করতে ‘বাঙালি’ হিসেবে পরিচিত করতে চায় ইয়াঙ্গুন। রোহিঙ্গাদের পালিয়ে মিয়ানমারে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে দেখাতে চায় দেশটি। নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শুধু নাগরিকত্বই কেড়ে নেওয়া হয়নি বরং পদ্ধতিগতভাবে তাদের মৌলিক অধিকারও ছিনতাই করা হয়েছে। মুক্তভাবে চলাফেরা, কাজকর্ম এমনকি বিয়ের ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই অবস্থায় পোপ দুইটি দেশই সফর করবেন। মিয়ানমারে এটাই কোনও পোপের প্রথম সফর।

ফ্রান্সিস এমন এক সময়ে ওই দেশে গেলেন, যখন ‘রোহিঙ্গা’ জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে মিয়ানমারের সেনা-গণতন্ত্রী সরকার জাতিগত নিধন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিপুল নজির স্থাপন করেছে। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস খবর দিয়েছে, মিয়ানমার সফরকালে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করতে পোপের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইয়াঙ্গুনের আর্চবিশপ কার্ডিনাল চার্লস মং বো। প্রশ্ন উঠেছে, সেই মিয়ানমারের মাটিতে দাঁড়িয়ে পোপ বিপন্ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পক্ষে সরব অবস্থান নিতে পারেন কিনা।

শিশুরা পোপকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়
আগেই পোপ রোহিঙ্গাদের আত্মপরিচয়ের প্রশ্নে সরব অবস্থান নিয়েছিলেন। এ বছরের আগস্টে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় তাদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। বলেছিলেন, ঈশ্বরের কাছে আমরা সবাই প্রার্থনা করি তিনি যেন তাদের সুরক্ষিত রাখেন। তাদের সাহায্যে বাকিদের এগিয়ে আসতে বলেন; যারা তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে। মানবিক আবেদন জানাতে গিয়ে চলতি বছরেই দুই দুইবার রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। সফরের আগের দিন এক ভিডিও বার্তায় পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, এমন সম্মান ও উৎসাহের জায়গা থেকে আমি দেশটি সফর করতে চাই যেখানে ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রতি পারস্পরিক মেলবন্ধন ও সহযোগিতার প্রচেষ্টা বিদ্যমান থাকবে।

মিয়ানমারের মাটিতে দাঁড়িয়ে পোপ রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করবেন কিনা; জানতে চাইলে ভ্যাটিকানের মুখপাত্র গ্রেগ বুরকে জানান পোপকে যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তা তিনি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন। তবে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহারের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না গ্রেগ। তিনি বলেন: ‘রোহিঙ্গা শব্দটি তো নিষিদ্ধ কিছু নয়, আমরা নিশ্চয় একটা উপায় খুঁজে বের করব।’

অস্ট্রেলিয়ার লোয়া ইন্সটিটিউটের রিসার্চ ফেলো আরন কোনেলি মনে করেন, নিশ্চয় এই সফর কেবলমাত্র একটা আনুষ্ঠানিকতা হবে না।  তিনি বলেন, ‘একটা বিষয় পরিষ্কার। পোপ অবশ্যই রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বলবেন। এখন প্রশ্নটা হলো তিনি মিয়ানমারকে তা শক্তভাবে বলেন নাকি বন্ধুত্বপূর্ণ পথে বলেন সেটা।’

মিয়ানমারের রাস্তায় পোপের পোস্টার
মা বা থা নামে পরিচিত মিয়ানমারের উগ্র বৌদ্ধ ভিক্ষুদের গোষ্ঠী পোপের সফরকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে খোলাখুলি কথা বললে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি। সংগঠনটির মুখপাত্র তপারকা বলেন, ‘আমি আশা করি, মিয়ানমারের জনগণ মেনে নিতে পারে না এমন স্পর্শকাতর ইস্যুতে তিনি কথা বলবেন না। তিনি যদি ইসলাম নিয়ে কথা বলেন সেক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই, কিন্তু তিনি যদি রোহিঙ্গা এবং চরমপন্থীদের নিয়ে কথা বলেন তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।’

লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস-এর প্রতিবেদনে মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, মানবাধিকার সংগঠনগুলো চায় পোপ যেন তার মিয়ানমার সফরে প্রকাশ্য ও ব্যক্তিগত বৈঠকগুলোতে দুনিয়ার সবচেয়ে নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীর প্রতি সহমর্মিতা জানান। অং সান সু চি এবং মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং-এর সঙ্গে বৈঠকে যেন তিনি রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ করেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, ‘পোপের প্রকাশ্যেই রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করা উচিত। কেননা তাদের পরিচয়ের খুব সামান্যই বাকি রয়েছে। বিভাজনের অংশ হিসেবে তাদের আত্মপরিচয়ের সংকটকে ঘনীভূত করা হয়েছে। খুব সামান্য কিছুর ওপরই যখন আপনার নিয়ন্ত্রণ থাকে; সেই মুহূর্তে এই আত্মপরিচয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার পোপ যখন মিয়ানমারে পৌঁছান তখন বিমানবন্দর থেকে শুরু করে বিভিন্ন সড়কের পাশে হাজার হাজার ক্যাথলিকের উপস্থিতি দেখা গেছে। ১৮০০ ক্যাথলিক ট্রেন ও বাসে চড়ে মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে ইয়াঙ্গুনে এসেছেন। এদেরই একজন আইনজীবী উ ওয়ে মিন্ত। তিনি সিএনএনকে বলেন, ‘মিয়ানমার এবং বিশ্বের সবার ভালোর জন্য পোপ ফ্রান্সিস এটা করছেন। এ ধর্মগুরুকে নিয়ে আপনি যাই বলতে চান না কেন, তার উদ্দেশ্য ভালো। তিনি শান্তির পক্ষের মানুষ।’

/এফইউ/
সম্পর্কিত
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
সর্বশেষ খবর
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
অডিও ফাঁস, নারীর কাছে ডিবি পুলিশ সদস্যের ‘হেরোইন বিক্রি’
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
উপজেলা নির্বাচনে নেই বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল
মিরপুরে ‘হারল্যান স্টোর’-এর উদ্বোধন করেন নুসরাত ফারিয়া, পণ্য কিনে হতে পারেন লাখপতি
মিরপুরে ‘হারল্যান স্টোর’-এর উদ্বোধন করেন নুসরাত ফারিয়া, পণ্য কিনে হতে পারেন লাখপতি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা