X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

পোপের সফরে ‘আশার আলো’ খুঁজছেন রোহিঙ্গারা

ফাহমিদা উর্ণি
২৭ নভেম্বর ২০১৭, ২২:৩৮আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:০৪

ক্যাথলিক চার্চপ্রধান পোপ ফ্রান্সিসের মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফরে ‘আশার আলো’ খুঁজছে রাখাইনে জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের পোপের সাক্ষাতের বিষয়টি এখনও নিশ্চিত না হলেও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা আশা করছেন, পোপ তাদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হবেন। তাদের নাগরিকত্ব ফিরে পেতে সহায়তা করবেন ও শান্তি ফিরিয়ে আনবেন।

পোপ ফ্রান্সিস

এ বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনযজ্ঞ চালানো শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এই সেনা অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে। নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন ও মানবতার পক্ষের মানুষেরা। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনী। দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’ও রোহিঙ্গাদের পক্ষে কোনও ইতিবাচক ভূমিকা নেননি।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে ইয়াঙ্গুনের বিমানবন্দরে অবতরণ করেন পোপ ফ্রান্সিস। এমন এক সময় তিনি মিয়ানমার সফর করছেন, যখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের ওপর জাতিগত নিধন আর মানবতাবিরোধী অপরাধ একটি প্রশ্নচিহ্ন হয়ে বিশ্ববাসীর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোপ ফ্রান্সিসের এই সফর মূলত কূটনৈতিক হলেও চলমান বাস্তবতায় এটি হবে তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।  বাংলাদেশ সফরে পোপ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন না। তবে তিনি রোহিঙ্গাদের ছোট একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক করতে পারেন। সোমবার সকালে এই তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও। তিনি বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের কথা যাতে পোপের কাছে পৌঁছায় সে জন্য চেষ্টা করছে আর্চবিশপ হাউস। পোপ শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন। দরিদ্র, সুবিধা বঞ্চিত, শরণার্থীদের পক্ষে কথা বলবেন।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে পোপের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘পোপের সফর অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত। সে সময় পোপের সফরসূচি ছিল একদিনের। এমনকি তখন রোহিঙ্গা ইস্যুটি আলোচনায় ছিল না। যদি সময় থাকতো আমরা পোপকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার অনুরোধ করতাম। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা সরকারের অনুমোদন ও সযোগিতায় রোহিঙ্গাদের একটি ছোট প্রতিনিধি দলকে ঢাকায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। তাদের সঙ্গে কথা বলবেন পোপ।’

তবু পোপের এই সফর নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশ্রয় নেওয়া মোহাম্মদ রফিক জানান, পোপ ফ্রান্সিসের সফরের কথা শুনে তিনি খুব খুশি হয়েছেন। গত মাসে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন ২০ বছর বয়সী এ তরুণ।

মার্কিন বার্তা সংস্থা এপিকে রফিক বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার আমাদের অধিকার ও নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নিয়েছে। আমরা আশা করছি, তার আলোচনা ও প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের সব কিছু ফিরে পাব।’

মোহাম্মদ নাদির হোসেন নামে ২৫ বছর বয়সী এক তরুণ বলেন, ‘রোহিঙ্গারা কী ধরনের বাজে পরিস্থিতিতে আছে তা পোপ দেখতে পাবেন। তিনি চাইলে মিয়ানমার সরকারকে শান্ত করতে পারবেন এবং আমাদের সঙ্গে কথা বলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারবেন। এ মুহূর্তে আমরা অনেক কষ্টে আছি। আমরা বেশ উদ্বিগ্ন। এমন সময়ে তার আগমনে আমরা কৃতজ্ঞ।’

সেপ্টেম্বরে মিয়ানমার ছেড়েছেন ৩৫ বছর বয়সী সেনু আরা। পোপের সফরকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনিও। বলেন,  ‘আমরা মরিয়া হয়ে যে শান্তিকে খুঁজে বেড়াচ্ছি তা আমাদের পেতে আমাদের সহায়তা করতে পারেন তিনি। এমনকি আমরা যদি এখানে থাকি তিনি (পোপ) আমাদের পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারবেন। তিনি যদি আমাদেরকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন, তবে তিনি তা শান্তিপূর্ণ উপায়ে করবেন।’

৩৫ বছরের  রোহিঙ্গা নারী হামিদা বেগমও বিশ্বাস করেন, পোপ তাদের সহায়তা করার জন্যই মিয়ানমার সফর করছেন। তিন মাস আগে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন তিনি। হামিদা বলেন, ‘তিনি (পোপ) আমাদেরকে মিয়ানমারে বৈধভাবে ফিরে যেতে সহায়তা করতে পারেন। এখান থেকে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে পারেন। অন্য কোনও দেশে নিয়ে যেতে পারেন। তিনি যা চান, তাই করতে পারেন।’

উল্লেখ্য, এ বছরের আগস্টে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় তাদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। বলেছিলেন, ঈশ্বরের কাছে আমরা সবাই প্রার্থনা করি তিনি যেন তাদের সুরক্ষিত রাখেন। তাদের সাহায্যে বাকিদের এগিয়ে আসতে বলেন; যারা তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে। 

পরে মিয়ানমার সফর নিয়ে এক ভিডিও বার্তায় পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, এমন সম্মান ও উৎসাহের জায়গা থেকে আমি দেশটি সফর করতে চাই যেখানে ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রতি পারস্পরিক মেলবন্ধন ও সহযোগিতার প্রচেষ্টা বিদ্যমান থাকবে।

তবে মিয়ানমার সফরকালে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ না করতে পোপের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারের কার্ডিনাল চার্লস মং বো।  রোহিঙ্গা শব্দ উচ্চারণে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি এবং দেশটির সেনাবাহিনীর আপত্তি থাকায় কার্ডিনাল চার্লস মং বো পোপকে তা উচ্চারণ করতে মানা করেছেন। মিয়ানমারের উগ্র বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সংগঠন মা বা থাও পোপ ফ্রান্সিসকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কথা বললে তা মেনে নেওয়া হবে না।

উল্লেখ্য, মিয়ানমার রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। মিয়ানমার সরকার ও দেশটির বৌদ্ধ সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ‘অবৈধ বাঙালি অভিবাসী’ হিসেবে দাবি করে আসছে।

 

/এএ/
সম্পর্কিত
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা