X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের ‘ফিলিস্তিন শান্তি’ পরিকল্পনায় কী আছে?

আলী রমজান
০৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:৩৮আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৯:৪৪

দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান করবেন বলে দাবি করে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগের কোন প্রেসিডেন্ট এটা পারেননি উল্লেখ করে ট্রাম্প একে চূড়ান্ত প্রক্রিয়াবলে অভিহিত করছেন। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য সমস্যা সমাধানে ট্রাম্পের পরিকল্পনার খবর প্রকাশ পায়। এতে জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া বা কোনও ইসরায়েলি বসতি সরানোর পরিকল্পনা নেই। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দেবে বলে খবর প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন পোস্টসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। ট্রাম্প বা তার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স মধ্যপ্রাচ্য সফরে ঘোষণা দিতে পারেন বলে খবরে বলা হয়। এ অবস্থায় ট্রাম্প পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন কিনা তা ভাবা হচ্ছে। আর মাইক পেন্সের মধ্যপ্রাচ্য সফরেই ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ট্রাম্পের ‘ফিলিস্তিন শান্তি’ পরিকল্পনায় কী আছে?

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এ ২৩ নভেম্বর এক মন্তব্য প্রতিবেদনে রিচার্ড সিলভারস্টেইন ট্রাম্পের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে ইসরায়েলি সংবাদভিত্তিক অনুষ্ঠান হাদাসট-এ ফাঁস হয়ে যাওয়া চুক্তির শর্তগুলো তুলে ধরা হয়। এতে জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া বা কোনও ইসরায়েলি বসতি সরানোর কথা নেই। বরং মার্কিন প্রশাসনের কাছে ইসরায়েলের দাবিগুলোর প্রায় সবই পূরণ করা হয়েছে। পুরো ফিলিস্তিনি অঞ্চলের নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণও ইসরায়েলের হাতে দেওয়া হয়েছে। মোট কথা এ চুক্তি হলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কোন সার্বভৌমত্ব থাকবে না।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের পরিকল্পনায় চুক্তিলে ইসরায়েল আরব বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসা করাসহ উপসাগরীয় অঞ্চলে বিমান পরিচালনা করতে পারবে। ফলে সৌদি আরব, মির, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডানে যাত্রী পরিবহনসহ টেলিযোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে ইসরায়েলচুক্তিতে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে ভূ-খণ্ড  বিনিময়ের কথা বলা হলেও কেন এবং কোন ভূ-খণ্ডের সঙ্গে কোন ভূ-খণ্ড বিনিময় করা হবে তা উল্লেখ করা হয়নিআর প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে রাজি করাতে চুক্তির আওতায় সুন্নি আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনকে কয়েকশ মিলিয়ন অর্থ সহায়তা দেবে। যাতে দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, ৬ ডিসেম্বর এক বক্তৃতায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারেন। নয়তো ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময়ও এ ঘোষণা আসতে পারে।

দ্য জেরুজালেম পোস্ট বলেছে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি দুটি রাষ্ট্র গঠনের জন্য জাতিসংঘের বিভাজন প্রস্তাবের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মাইক পিন্সের ভাষণ দেবেন। এসময় তিনি দূতাবাসকে তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের নির্দেশ দিতে পারেন।

মিডলইস্ট আই-এর ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের পরিকল্পনা মাফিক চুক্তি করার জন্য সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা বলা না হলেও ২০১৮ সালের জানুয়ারিতেই শান্তি প্রক্রিয়া শুরুর চিন্তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই জেরুজালেমকে ইসরায়েলের ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়াকে পরিকল্পনার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে। আর এ মাসের মাঝামাঝিতে মাইক পেন্সের মধ্যপ্রাচ্য সফরকে ট্রাম্পের শান্তি চুক্তির প্রক্রিয়া সূচনা হবে।

তবে ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম পদক্ষেপেই বিশ্বজুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এনিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম থিংকপ্রগ্রেস এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে বলছে, এমন বিতর্কিত পদক্ষেপ উত্তেজনা আরও বাড়ানোর পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে নেতিবাচক অবস্থানে নিয়ে যাবে।

থিংকপ্রগ্রেস ইহুদিবাদী মানবাধিকার সংগঠন টিরুয়াহ এর নির্বাহী পরিচালক রাব্বি জিল জ্যাকবের বরাত দিয়ে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার শান্তিপূর্ণ দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পরিবর্তে জেরুজালেমে দূতাবাস করলে চলমান সহিংস দ্বন্দ্বকে আরও বাড়াবে। যুক্তরাষ্ট্র  দূতাবাস পরিবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বকে বার্তা দেবে, আমরা শান্তিরক্ষকের ভূমিকা ত্যাগ করে শান্তিকামী মানুষকে দূরে ঠেলে দিচ্ছি।

ইসরায়েলি টেলিভিশনগুলোর বরাত দিয়ে একই দেশের সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতিকে শান্তি প্রক্রিয়ার শেষ হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ)। শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ও জামাতা জারেড কুশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এমন সতর্কতা জানিয়েছে পিএ-এর প্রতিনিধি দল।

ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস বলছে, জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের অর্থ হবে এটাকে   ইহুদিবাদী ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। এর পরিণতি হবে ভয়াবহ।

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারেন ট্রাম্প

ট্রাম্পের প্রথম পদক্ষেপেই এমন প্রক্রিয়ায় পুরো মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ট্রাম্পের এমন পরিকল্পনাকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক উপসম্পাদকীয়তে ফিলিস্তিনিদের জন্য অপমানজনক ও ২০০২ সালে সৌদি আরবের প্রস্তাবের অস্বীকৃতি উল্লেখ করে নাকচ করা হয়।

মিডলইস্ট আই এটাকে এটা একটা ভুল ও ফিলিস্তিনিদের জন্য অপমানজনক ধারণা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর প্রতিবেদনে রিচার্ড সিলভারস্টেইন প্রশ্ন তোলেন, ফিলিস্তিন কেন এই প্রস্তাব মেনে নেবে? তিনি বলেন, ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু মনে করেন, মাত্র কয়েক হাজার কোটি পেট্রোডলারের বিনিময়েই আরবরা তাদের জন্ম অধিকার বেচে দেবে! কিন্তু দেশের স্বীকৃতি ও সার্বভৌমত্ব বিপরীতে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে ধনী হওয়ার প্রস্তাব দিলে যেকোন ফিলিস্তিনি কোনটা বেছে নেবে তা সহজেই অনুমেয়। এতে  ট্রাম্পের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন সিলভারস্টেইন।

তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনের উপর চাপ সৃষ্টি করবে। এজন্য দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৯৯৪ সালের একটি আইন সংস্কার করেছে। তারা ঘোষণা দিয়েছে, ফিলিস্তিন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অপরাধের অভিযোগ করলে ওয়াশিংটনে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এ নিয়ে কিছু না বললেও পিএলওর সাবেক প্রধান সমন্বয়কারী সায়েব এরিকাত এর জবাব দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনের কূটনৈতিক সুবিধা বন্ধ করলে তাদের সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর এমনটা হলে ট্রাম্পের সব পরিকল্পনাই ভেস্তে দেবে।

এ বিষয়ে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের প্রফেসর স্টিফেন ওয়াল্ট বলেন, ট্রাম্পের শান্তি উদ্যোগ সফল হবে বলে বিশ্বাস করা কঠিন। কারণ ইসরায়েল তার ৪০ বছরের নীতির বিপরীতে গিয়ে কোনও ছাড় দিচ্ছে না। আর  ছাড় না দিলে এই মুহূর্তে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন অসম্ভব।

 

/আরএ/এএ/
সম্পর্কিত
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
স্থায়ী সংঘাতে পরিণত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা: তুরস্ক
সর্বশেষ খবর
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া