উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসন ও হোয়াইট হাউসের মধ্যকার অবস্থানে আবারও পার্থক্য ধরা পড়েছে। মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যে কোনও সময় শর্তহীন আলোচনায় প্রস্তুত থাকার কথা জানালেও একদিনের ব্যবধানে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পিয়ং ইয়ংয়ের আচরণ পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আলোচনার কোনও সম্ভাবনা নাই। উত্তর কোরিয়া প্রশ্নে ট্রাম্প-টিলারসন মতভেদ নতুন কিছু নয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুরু থেকেই সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবে বলপ্রয়োগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
মঙ্গলবার আটলান্টিক কাউন্সিল পলিসি ফোরামে টিলারসন বলেছেন, পরমাণু শক্তিধর উত্তর কোরিয়াকে মেনে নিতে পারে না যুক্তরাষ্ট্র। উত্তর কোরিয়াকে আমেরিকাসহ গোটা বিশ্বের এক নম্বর হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন। টিলারসন দাবি করেন, উত্তর কোরিয়ার হুমকি এতটাই শক্তিশালী যে ওই হুমকিকে এখন আর উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। বৈদেশিক নীতি বিশেষজ্ঞদের সামনে তিনি বলেন, ‘আমার যেকোনও সময় আলোচনার জন্য প্রস্তুত। প্রথম বৈঠকে আমরা কোনও শর্ত ছাড়াই বসতে চাই।
গত মাসেই আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। তারপরও টিলারসনের বক্তব্যের পর ভাবা হচ্ছিলো যে হয়তো দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। হোয়াইট হাউসের বিবৃতির পর সেটাও থেমে গেল। ট্রাম্প প্রশাসনে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে টিলারসনের দূরত্ব নতুন কিছু নয়। এর আগেও মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুসহ বেশ কিছু নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিভেদ ছিলো টিলারসনের। একবার তো পদত্যাগের গুঞ্জনও উঠেছিলো টিলারসনের। তবে হোয়াইট হাউসের সবশেষ অবস্থানের কারণে নতুন করে তাদের এই দূরত্ব আলোচনায় এলো।বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে পাঠানো এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জানিয়েছেন, উ্ত্তর কোরিয় ইস্যুতে `স্পষ্টত এখন কথা বলার সময় নয়।'
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চলেন আমরা কথা বলি। আপনার যে অবস্থায় বলবেন, আমরা বসতে রাজি আছি। চারকোনা টেবিলও হতে পারে আবার গোলটেবিলও হতে পারে। কিন্তু পরষ্পরকে সামনাসামনি দেখে কথা বলা জরুরি।’
টিলারসনের একমাত্র শর্ত ছিলো, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধ রাখতে হবে। তাদের দেখাতে হবে যে পারমাণবিক পরীক্ষার বিরোধী তারা। তবে হোয়াইট হাউস থেকে ভিন্ন বার্তা আসে বুধবার। যদিও পররাষ্ট্র দফতরের দাবি, তারা একইরকম চিন্তা করছেন। দফতরের মুখপাত্র হেদার নরেট বলেন, তাদের নীতিতে কোনও পরিবর্তন আসেনি। উত্তর কোরিয়া নিয়ে হোয়াইট হাউস ও তাদের পরিকল্পনার একই রকম। গার্ডিয়ান জানায়, হোয়াইট হাউস ও পররাষ্ট দফতরের বক্তব্যে মিল নেই। নরেট পরে দাবি করেছেন যে তারা পিয়ংইয়ংকে পরমাণু পরীক্ষা বন্ধের শর্তে বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছি। তবে উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু পরীক্ষা বন্ধের শর্ত মেনে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু আমরা এমন কিছু দেখতে পারছি না।’
উত্তর কোরিয়া ইস্যুতেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিভেদ দেখা গেছে রেক্স টিলারসনের। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে একের পর এক যুদ্ধের হুমকি দিলে বরাবরই কূটনৈতিক সমাধানের আশা ব্যক্ত করেছেন টিলারসন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক নিবন্ধে তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আমেরিকা আলোচনা করতে চায়। কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ করার জন্য তারা এ অঞ্চলের মানুষের জীবনের কোনো ক্ষতি না করে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ চাপ সৃষ্টির প্রচারণা চালাতে চান।
মধ্যপ্রাচ্য প্রশ্নেও ট্রাম্প-টিলারসন দ্বন্দ্ব রয়েছে। সৌদি জোটের কাতারবিরোধী অবরোধের ঘটনায় ট্রাম্প যখন এর কৃতিত্ব দাবি করেন; তখন এ ইস্যুতে প্রায় বিপরীতমুখী অবস্থান নেন টিলারসন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোকে পারস্পরিক বিভেদ কমিয়ে আনার পরামর্শ দেন। তার মতে, এর ফলে এ অঞ্চলে নতুন করে মানবিক সংকট তৈরির প্রেক্ষাপট তৈরি হবে এবং এতে করে আইএস-এর বিরুদ্ধে মার্কিন লড়াই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা দুনিয়ার চুক্তি নিয়েও হোয়াইট হাউসের সমালোচনায় হতাশ এ কূটনীতিক। ক্ষ্যাপাটে আচরণের বদলে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী তিনি। ফলে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে তার সহজাত দূরত্ব তৈরি হয়।