X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যে ইউয়ান ব্যবহারের প্রস্তাব চীনের

বিদেশ ডেস্ক
২০ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৭:১২আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৭:৫৬

ইউয়ান পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ডলারের পরিবর্তে চীনা মুদ্রা ইউয়ান ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে বেইজিং। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহসান ইকবাল জানিয়েছেন, চীনের এই প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডন।

চীন-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক করিডোরের একাংশের কাজ শুরু উপলক্ষে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে কথা বলেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহসান ইকবাল। তিনি বলেন, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে চীনের প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে।

আহসান ইকবাল বলেন, চীন-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক করিডোর তৃতীয় কোনও দেশের জন্য হুমকি নয়। বরং বিশ্বের যে কোনও দেশ চাইলে এই করিডোরের সুফল ভোগ করতে পারবে।

চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে এ যাবতকালের মধ্যে সর্ববৃহৎ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা হচ্ছে এই অর্থনৈতিক করিডোর। পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ব্যয়ে এই করিডোর নির্মাণের কাজ শেষ হতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দর থেকে শুরু করে দেশটির ওপর দিয়ে চীন পর্যন্ত বিশাল মহাসড়ক নির্মাণ করা হবে। এই করিডোর নির্মিত হলে চীনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে পাকিস্তান ব্যাপকভাবে লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সমালোচকরা বলছেন এই মহাসড়ক নির্মাণের নামে আসলে পাকিস্তানকে বড় অঙ্কের ঋণের জালে ফেলছে বেইজিং।

বেলুচিস্তানের গোয়াদর বন্দরে চীনা বিনিয়োগে এমনিতেই অস্বস্তিতে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। তাদের ধারণা, এভাবে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের ধারাবাহিকতায় এক সময় পাকিস্তানে সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলবে বেইজিং। আর এমন ধারণা যদি বাস্তব রূপ নেয় তাহলে সেটা একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে এ অঞ্চলে বেকায়দায় ফেলে দেবে। তবে কাজ এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর চীন। আর তাই গোয়াদরের বাসিন্দাদের মন জয়ের চেষ্টার পাশাপাশি সেখানে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে চীন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সন্দেহ ভবিষ্যতে বন্দরটিকে চীনা নৌবাহিনীর কাজে লাগানো হবে।

এ বছরই দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা মালিকানাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে মার্কিন ডেস্ট্রয়ার। অন্যদিকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের সম্ভাব্য সাবমেরিন হামলা মোকাবিলায় নিজেদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে ভারতীয় নৌবাহিনী। এমন বাস্তবতায় এ অঞ্চলে চীনা নৌবাহিনীর অবস্থানের বিষয়টি বাস্তব রূপ পেলে সেটা নিঃসন্দেহে ওয়াশিংটন ও দিল্লির জন্য এক ধরনের অশনি সংকেত।

আরব সাগরের পাশে বিশ্বের ব্যস্ততম তেল ও গ্যাস পরিবহন রুটের পাশে গাদার বন্দরটির অবস্থান। চীন সেখানে স্কুল নির্মাণ, চিকিৎসক পাঠানোসহ প্রায় ৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে বিমানবন্দর, হাসপাতাল, কলেজ ও অতি প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নির্মাণ করতে যাচ্ছে। গবেষক ও পাকিস্তানি কর্মকর্তারা বলছেন, এসব অনুদানের মধ্যে একটি নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে যা দেশের বাইরে চীনের সবচেয়ে বড় প্রকল্পগুলোর একটি।

গাদার প্রকল্পটি অন্যান্য দেশের প্রতি চীনের দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে আলাদা। চীন পশ্চিমা দেশগুলোর মতো অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তার বদলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে সরাসরি ঋণ দিতো। এ প্রসঙ্গে চীন-পাকিস্তান সম্পর্কের ওপর একটি বইয়ের লেখক ও ওয়াশিংটনভিত্তিক জার্মান মার্শাল ফান্ডের গবেষক অ্যান্ড্রু স্মল বলেন, ‘চীনের এমন অনুদানের নিবিষ্টতা বেশ আকর্ষণীয়। চীন সাধারণত সহায়তা বা অনুদান দেয় না। তাই তারা যখন এমন করে বুঝতে হবে তারা পরিণত হচ্ছে।’

গোয়াদরকে অবশ্য অনেকেই শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরের সঙ্গে তুলনা করতে চাইছেন। হাম্বানটোটা গ্রামটিকে বন্দরে রুপান্তরিত করা হলেও দেনার দায়ে তা চীনের কাছে ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দিতে বাধ্য হয় শ্রীলঙ্কা। একে অনেক শ্রীলঙ্কানই তাদের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। হাম্বানটোটাও চীনের মেগা প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোডের অংশ। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ‍এমন আশঙ্কা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, হাম্বানটোটার চেয়ে এখানে অনেক কম ঋণ নেওয়া হচ্ছে।

গোয়াদরে বিনিয়োগের সুফল হিসেবে আগামী ৪০ বছর বন্দরের ৯১ শতাংশ শুল্ক আদায় করবে চীন। আর তাদের বিদেশি বন্দর পরিচালনা প্রতিষ্ঠানটিও ২০ বছরের জন্য বড় ধরনের শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, পার্স টুডে।

/এমপি/
সম্পর্কিত
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
ডিএনসিসি ও চীনের আনহুই প্রদেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক চুক্তি সই
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
সর্বশেষ খবর
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মোহনায় শতাধিক পাইলট তিমি আটক
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার মোহনায় শতাধিক পাইলট তিমি আটক
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি