X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বল্প পরিচিত সাত দেশ যে কারণে ট্রাম্পের পক্ষে অবস্থান নিলো

বিদেশ ডেস্ক
২২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৩:০১আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৭:৪৫
image

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিপুল ভোটে প্রত্যাখ্যাত হলেও সেখানে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের পক্ষে ভোট দেয় ৯টি দেশ। এই ৯ দেশের দুইটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। অর্থাৎ মাত্র সাতটি দেশ এ ইস্যুতে ট্রাম্পের পাশে ছিল। ওই সাতটি দেশের মধ্যে চারটিই আবার ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র। চার দেশের তিনটিই একসময় যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশ ছিল। এখনও দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে তারা কার্যত মার্কিন শাসনাধীন। দেশ তিনটি হচ্ছে মাইক্রোনেশিয়া, পালাউ এবং দ্য মার্শাল আইল্যান্ডস। এরমধ্যে ১০ হাজারের কম জনসংখ্যার দেশও আছ। কোনওটির মানুষ আবার চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতেও চাকরি করতে পারেন। ফলে পররাষ্ট্রনীতিতে মার্কিন সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ তাদের নেই বললেই চলে। বাকি দেশগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াতেও যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া হুমকির প্রভাব ছিল।

স্বল্প পরিচিত সাত দেশ যে কারণে ট্রাম্পের পক্ষে অবস্থান নিলো ভোটাভুটির আগেই যুক্তরাষ্ট্র হুমকি দিয়ে বলেছে, এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়া দেশগুলোকে দেখে নেওয়া হবে। তাদেরকে দেওয়া মার্কিন সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যদিও শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের ওই তর্জন গর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটিতে ট্রাম্প প্রশাসনের ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে ১২৮টি দেশ। বিপরীতে ট্রাম্পের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে মাত্র ৯টি দেশ। ভোটদান থেকে বিরত ছিল ৩৫ দেশ।

ট্রাম্পের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়া এবং ভোটদান থেকে বিরত থাকা দেশগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ভীতি নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। ফলে এই এই দেশগুলোর নাম-পরিচয়ের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটিতে জেরুজালেম প্রশ্নে মার্কিন পদক্ষেপকে সমর্থন জানায় গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, পালাই, দ্য মার্শাল আইল্যান্ডস, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, টোগো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে বাদ দিলে বাকি সাতটি দেশের মধ্যে চারটি দেশই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র।

মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চারটি দেশের মধ্যে তিনটিই একসময় যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশ ছিল এবং এখনও দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে আংশিকভাবে ওয়াশিংটনের শাসনের অধীনে আছে। সেই তিনটি দেশ হলো মাইক্রোনেশিয়া, পালাউ এবং দ্য মার্শাল আইল্যান্ডস।

মার্শাল আইল্যান্ডস প্রশান্ত মহাসাগরের কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ জারি হয়। বিশ্বব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী, এই দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে ৫৩ হাজার মানুষের বসবাস। ১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বাধীনতা পায় মার্শাল আইল্যান্ডস। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির করা এক চুক্তিতে ওযাশিংটনকে মার্শার আইল্যান্ডস এর পররাষ্ট্রনীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা দেওয়া আছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে বলা আছে, ‘মার্শাল আইল্যান্ডস এর নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার ওপর পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্ব ও দায় যুক্তরাষ্ট্রের। এই নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাজনিত দায়বোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে মার্শাল আইল্যান্ডস বাধ্য।’

পালাউ রাষ্ট্রটিও প্রশান্ত মহাসাগরের এক গুচ্ছ দ্বীপ নিয়ে গঠিত যা যুক্তরাষ্ট্রের শাসনাধীনে ছিল। ১৯৯৪ সালে দেশটি স্বাদীনতা অর্জন করে। তবে এক চুক্তির আওতায় ৫০ বছর ধরে দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগ যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে আছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের তথ্য অনুযায়ী, পালাউয়ে ২১ হাজার ৪শ মানুষের বসবাস।

আরেক দ্বীপ রাষ্ট্র মাইক্রোনেশিয়ায় ১ লাখ ৪ হাজার মানুষ বাস করে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ছিল দেশটি। ১৯৮৬ সালে দুই দেশের মধ্যে ‘মুক্ত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়’। ওই চুক্তির আওতায় মাইক্রোনেশিয়ার জনগণ ভিসা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ এবং সেখানে থাকতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতেও চাকরি করতে পারেন তারা।

নাউরু যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে না থাকলেও ২১ বর্গ কিলোমিটারের এই দেশটিতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ১০ হাজারেরও কম।

গুয়াতেমালা ও হন্ডুরাস একসময় ফিলিস্তিনকে সমর্থন করলেও বৃহস্পতিবার তারা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এদিন তারা জেরুজালেমকে নিয়ে যেকোনও স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

কানাডা ও মেক্সিকোসহ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশগুলো ভোটদান থেকে বিরত ছিল। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত কয়েক বছরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশে প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হয়েছে। যারা ভোটদানে বিরত ছিল তাদের প্রশংসা করে নেতাননিয়াহু বলেন, ‘এই অদ্ভূত নাটকে অংশ না নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকো এর আগে ফিলিস্তিনের সমর্থনে থাকলেও বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এমনকি গুয়াতেমালা ও হন্ডুরাসের অবস্থানও একইরকম ছিলো। কেনিয়ার মতো উগান্ডা ও দক্ষিণ সুদানের মতো আফ্রিকান দেশগুলোও ভোটদান থেকে বিরত ছিল। মিয়ানমার ও ফিলিপাইনও বিরত ছিলো ভোটাদান থেকে। ২০১২ সালে তারা ফিলিস্তিনের পক্ষেই ছিল। তবে এশিয়ায় ভারত ও চীন ইসরায়েলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ইসরায়েলি প্রভাব বিগত কয়েক বছরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশে প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হয়েছে। যারা ভোটদানে বিরত ছিল তাদের প্রশংসা করে নেতাননিয়াহু বলেন, ‘এই অদ্ভূত নাটকে অংশ না নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকো এর আগে ফিলিস্তিনের সমর্থনে থাকলেও বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এমনকি গুয়াতেমালা ও হন্ডুরাসের অবস্থানও একইরকম ছিলো। কেনিয়ার মতো উগান্ডা ও দক্ষিণ সুদানের মতো আফ্রিকান দেশগুলোও ভোটদান থেকে বিরত ছিল। মিয়ানমার ও ফিলিপাইনও বিরত ছিলো ভোটাদান থেকে। ২০১২ সালে তারা ফিলিস্তিনের পক্ষেই ছিল। তবে এশিয়ায় ভারত ও চীন ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

/এফইউ/এমপি/
সম্পর্কিত
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে নিজেকে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, গ্রেফতার ১
স্থায়ী সংঘাতে পরিণত হচ্ছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা: তুরস্ক
সর্বশেষ খবর
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া