X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
২০১৭ সালের বিশ্বরাজনীতি

একদিকে বিভক্তি-সহিংসতা-ক্ষুধা, অন্যদিকে প্রতিরোধের বছর

বাধন অধিকারী ও জোবায়ের শামীম
৩১ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:২১আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০১৮, ০২:৩২

মহাকালের কৃষ্ণগহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে আরও একটি বছর। অতিক্রান্ত হতে যাচ্ছে ২০১৭ সাল। বিশ্ব-রাজনীতিতে এই বছরটির শুরু হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির মধ্য দিয়ে তিনি স্পষ্ট করেছিলেন বিভক্তির রাজনীতি। আরিয়ানার গান থেকে শক্তি সঞ্চয় করে বিভক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়েছেন যুক্তরাজ্যের লেবার নেতা জেরেমি করবিন। নব্য উদারবাদী বাজারব্যবস্থার অধীনে বছরজুড়ে বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যিক ক্ষমতার অভিঘাতের সমান্তরালে ধারাবাহিকভাবে পাল্টা ক্ষমতার দৃশ্যমানতা হাজির হয়েছে সন্ত্রাসবাদের নামে। মিয়ানমারে বিপন্নতা বেড়েছে বিশ্বের সবথেকে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের। চীনে আরও সংহত হয়েছে একনায়কতান্ত্রিক ক্ষমতা। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন-ইসরায়েল নীতির ধ্বংসযজ্ঞ জোরালো হয়েছে। বেড়েছে সৌদি ক্ষমতার বিকার। বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তর কোরীয় পারমাণবিক কর্মসূচি জানান দিয়েছে পাল্টা ক্ষমতা। বৈশ্বিক উষ্ণতা জানান দিয়েছে নতুনতর হুমকি। এরমধ্যেও বেড়েছে প্রবৃদ্ধি। জোরালো হয়েছে কাতালানসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর স্বাধীনতার দাবি। মধ্যপ্রাচ্যেও ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার ইশারা জোরালো হয়েছে। জোরদার হয়েছে মানুষের সম্মিলন আর আশা।

ট্রাম্পের উত্থানে যুক্তরাষ্ট্রে বেড়েছে বিভক্তি

ট্রাম্পের উত্থান ও ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে বিভক্ত বিশ্ব

২০১৬ সালের নভেম্বরে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ট্রাম্প জানুয়ারিতে বারাক ওবামার স্থলাভিষিক্ত হয়ে শপথ নেন। পশ্চিমের কথিত বিশ্বায়নের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করান তিনি। নব্য উদারবাদী অর্থব্যবস্থা মানুষকে যেখানে বিপন্ন করেছিল, ট্রাম্পের হাত ধরে নগ্ন বাজার আর পুরানো সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ সেখানে উত্থান ঘোষণা করে। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির মধ্য দিয়ে স্পষ্ট সূত্রে তিনি বিভক্ত করেন মার্কিনসহ বিশ্বজনতাকে। ‘আমরা’  আর ‘ওরা’ বিভাজনের মধ্য দিয়ে ঘৃণার বেসাতি ছড়াতে থাকেন কৃষ্ণাঙ্গ-মেক্সিকান-মুসলমানদের বিরুদ্ধে। প্রথমেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলার পরিকল্পনা। এরপর সবার জন্য জরুরি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসেন তিনি।  ইউনেস্কো থেকেও সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। ৬টি মুসলিম দেশসহ ৮টি দেশের নাগরিকের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব করেও ব্যাপক সমালোচিত হন ট্রাম্প। নিয়েছেন একের পর এক অভিবাসী প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ। সবশেষ মধ্যপ্রাচ্যে পড়েছে তার নগ্ন সামাজ্যবাদী থাবা। জেরুজালেককে ইসরায়েলি রাজধানী ঘোষণার মধ্যদিয়ে তিনি জোরালো করে তোলেন ফিলিস্তিনি মুক্তির অপরিহার্যতাকে।

সন্ত্রাসী হামলার পর ঐক্যের বারতা তুলে ধরেন সংগীত শিল্পী আরিয়ানা

ব্রেক্সিটের বিচ্ছিন্নতার বিপরীতে বিশ্বাসের ঐক্য

২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও সর্বোচ্চ আসন নিশ্চিত করে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গড়ে আবারও ক্ষমতায় বসে থেরেসা মে’র নেতৃত্বে কনজারভেটিভরা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার (ব্রেক্সিট) আনুষ্ঠানিকতা এ বছরই শুরু হয়। ১৫ ডিসেম্বর ব্রাসেলসে ইইউ’র সম্মেলনের শেষদিনে এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে করা স্মারকের অনুমোদন দেয় ইইউ।

নির্বাচনের ঠিক ১২ দিন আগে দুই দফায় জঙ্গি তাণ্ডবে রক্তাক্ত হয়েছে যুক্তরাজ্য। ম্যানচেস্টার আর লন্ডনের সেই হামলার পর থেকে থেরেসা মে জোরসে বলতে শুরু করেছেন মুসলমান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে। নির্বাচনি প্রচারণার শেষ মুহূর্তে তিনি সরাসরি ‘মুসলিম জঙ্গিবাদ’ শব্দটি ব্যবহার করে বিভক্তির বীজ পুঁতে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, দরকারে মানবাধিকারের তোয়াক্কা না করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির বন্দোবস্ত করার মতো ঘৃণাবাদী অবস্থান নিয়েছেন। বিপরীতে জেরেমি করবিন মূলধারার ব্রিটিশ রাজনীতির প্রথম এবং একমাত্র শীর্ষ নেতা হিসেবে প্রকাশ্যে বলতে পেরেছেন সুস্পষ্ট উচ্চারণে– জঙ্গিবাদ তাদের নিজেদের বিদেশনীতির ফল। ভয়ংকর মিথ্যে অজুহাতে সংঘটিত ইরাক যুদ্ধ পরবর্তী গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অবশেষ থেকে জন্ম নেওয়া আইএস-এর সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব দিতেও দ্বিধা করেননি তিনি।

ব্রিটিশ তরুণদের রাজনীতিতে অংশ নিতে গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেন করবিন

এবার নব্য উদারবাদী যুগপর্বে পাশ্চাত্য ইতিহাসের এক অনন্য নির্বাচনি ইশতেহার রচনা করেছিল লেবার পার্টি।  বিদ্যুৎ ও জ্বালানি শিল্পের অংশবিশেষ জাতীয়করণ, শিক্ষা ব্যয় কমানো,  সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয় বৃদ্ধি, ট্রেড ইউনিয়ন জোরদার, অভিবাসনকে ইতিবাচক ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা এবং খুবই বিদ্রোহী অবস্থান থেকে শীর্ষ ধনীদের আয়কর বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ ঘোষণা করেছিলেন করবিন। শেষ ক’দিনের প্রচারণায় করবিনবিরোধী পাশ্চাত্য মিডিয়া তাদের যাবতীয় পক্ষপাতমূলক নির্লজ্জতা সত্ত্বেও জরিপ এক সময় এসে বলতে বাধ্য হয়েছিল করবিন জনপ্রিয় হচ্ছেন ক্রমাগত। নির্বাচনে ভোট দেওয়ার হার যে ১০ শতাংশ বেড়েছে, এরা সবাই করবিনকেই ভোট দিতে এসেছিলেন। রাজনীতিবিমুখ এই তরুণরাই নতুন ব্রিটিশ ইতিহাস রচনা করবে বলে অভিমত এসেছে বিশ্লেষক ও বিশ্লেষণসূত্রে।

রোহিঙ্গা ও মিয়ানমার

২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।  হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ছয় লাখেরও বেশি মানুষ। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ আখ্যা দিয়েছে। রাখাইনের সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। তবে এইসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। দেশটির গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’ও রোহিঙ্গাদের পক্ষে কোনও ইতিবাচক ভূমিকা নিতে সক্ষম হননি। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিতর্কিত হয়েছেন তিনি। হারিয়েছেন বহু সম্মাননা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের বর্ষসেরা ছবিতে রোহিঙ্গাদের বিপন্নতা

২৩ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়। তবে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের আস্থা নেই এই চুক্তিতে। অতীতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে রাখাইনে ফিরে গিয়েছিলেন, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বারের মতো আসা এমন রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যাওয়ার কথা শুনলেই অতীত স্মৃতিতে ‘বিভীষিকার চিহ্ন’ দেখছেন। পুড়ে যাওয়া গ্রামে ফিরে কী করবেন, এমন প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনে। আবার যে চুক্তিকে উপজীব্য করে মিয়ানমার তাদের ফেরত নেওয়ার কথা জানিয়েছে, তাতে যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বৈধ প্রমাণপত্র হাজিরের শর্ত আছে। স্রেফ জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা কাগজপত্র কোথায় পাবে তা জানে না। কেবল রোহিঙ্গারা নয়, এরইমধ্যে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নীতিতে নিজেদের আস্থাহীনতার কথা জানিয়েছে। প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইন এখনও স্থিতিশীল নয় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিয়ষক সংস্থা।

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে নভেম্বরের শেষদিকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফরে আসেন ক্যাথলিক ধর্মীয়গুরু পোপ ফ্রান্সিস। ২৪ ডিসেম্বর রাতে ক্রিসমাসের আগের রাতের অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গাসহ সব শরণার্থীর জন্য প্রার্থনাও করেন তিনি।  একই সময়ে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে রাখাইনে সেনা অভিযান বন্ধ এবং মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত নিয়োগ করার কথা বলেছে জাতিসংঘ। তবে এই সমাধান প্রস্তাবনার বিরোধিতা করেছে চীন, রাশিয়াসহ ১০টি দেশ।

সন্ত্রাসী হামলায় বারবার রক্ত ঝরেছে যুক্তরাজ্যে

বছরজুড়ে সন্ত্রাসী হামলা

বছরের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে আরিয়ানা গ্রান্দের কনসার্টে হামলা, মিসরের সিনাইয়ে মসজিদে ও সোমালিয়ার মোগাদিসুতে ট্রাক বোমা হামলা, ইরানের পার্লামেন্ট ভবন, ইরাকের মসুলের ঐতিহ্যবাহী আল নূরি মসজিদ ধ্বংসহ বিভিন্ন দেশে জঙ্গি হামলা। এ বছরই আফগানিস্তানে আইএস স্থাপনায় সবচেয়ে বড় অপারমাণবিক বোমা ‘মাদার অব অল বম্বস’ নিক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এপ্রিলে সিরিয়ার ইদলিবে সরকারি বাহিনীর রাসায়নিক হামলায় ৭২ জনের মৃত্যু হয়, আহত হয় পাঁচ শতাধিক মানুষ।

চীনা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাবৃদ্ধি বনাম কালাতোনিয়ার স্বাধীনতার দাবি

এ বছর অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর চিন্তাকে দলীয় গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি। আধুনিক চীনের রূপকার হিসেবে স্বীকৃত মাও সে তুং-এর পর শি জিনপিং হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় যার চিন্তা দলীয় গঠনতন্ত্রে মতাদর্শের মর্যাদা পেলো। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, দলীয় গঠনতন্ত্রে স্থান পাওয়ার পর মাও-এর সমান্তরালে ক্ষমতাবান হলেন শি। এখন থেকে তার বিরুদ্ধে যে কোনও চ্যালেঞ্জ কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধের অবস্থান বলে বিবেচিত হবে।

কাতালোনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করেও তা রক্ষা করতে পারেনি

এদিকে স্পেনের আংশিক-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কাতালোনিয়া অক্টোবরে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেও যথেষ্ট সমর্থনের অভাবে শেষ পর্যন্ত তাদের আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যায়। বরং আগে থাকা স্বায়ত্তশাসনটাও হারিয়ে বসে অঞ্চলটি। স্পেন সরকার একদিকে আঞ্চলিক সংসদ বিলুপ্ত করে কাতালোনিয়ায় কেন্দ্রীয় শাসন জারি করে। অন্যদিকে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে কাতালান প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুজদেমনসহ বহিস্কৃত নেতারা পালিয়ে যান দেশ ছেড়ে। পরে অবশ্য তারা ফিরে আত্মসমর্পণ করেন। অবশ্য নতুন আঞ্চলিক নির্বাচনে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতাপন্থী দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও স্পেনপন্থীরাও বড় একটি অংশ।

কাতার সংকট ও সৌদি রাজতন্ত্রের গোপন অন্দরে অস্থিরতা

মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আধিপত্য জোরদারের প্রচেষ্টা জারি ছিল বছরজুড়ে। সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন আর ইরানি মিত্রতার অজুহাত ৫ জুন কাতারের উপর সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মিসর বাণিজ্য ও কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যদিও বরাবরই সেসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে কাতার। এ বছর সৌদি আরবের রাজপরিবারের ক্ষমতার ধারা, প্রশাসন আর রাজনৈতিক অবস্থানে অতীতের সঙ্গে বিচ্ছেদের খবর মিলেছে। রাজতন্ত্রের অভ্যন্তরে ঘটেছে চোখে পড়ার মতো সব পরিবর্তন। গুঞ্জন উঠেছে অভ্যুত্থানের।

বছরের আলোচিত রাজনৈতিক ইস্যু ছিল কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের নেতৃত্ব অবরোধ

সৌদি আরবকে সব ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণার পাশাপাশি বহুযুগের কট্টরপন্থী ওয়াহাবি ইসলাম থেকে সরে ‘মধ্যপন্থী ইসলাম’ গ্রহণের ঘোষণা দেন যুবরাজ। উদারিকরণের নামে এসেছে নারীদের গাড়ি চালানোর স্বাধীনতা। মিলেছে স্টেডিয়ামে খেলা দেখার আর ৩৫ বছরের বিরতি পেরিয়ে সিনেমা হল চালুর সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে যুবরাজকে প্রধান করে দুর্নীতি দমন কমিটি গঠনের কয়েক ঘণ্টার মাথায় ১১ প্রিন্স ও ৪ মন্ত্রীসহ কয়েক ডজন সাবেক মন্ত্রী-ব্যবসায়ীকে আচমকা গ্রেফতার, পরদিন ইয়েমেন সীমান্তের কাছে অনুসন্ধান কাজ শেষে ফেরার পথে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় দলবলসহ এক প্রিন্স নিহত, তার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই গ্রেফতার অভিযানে আরেক প্রিন্সের মৃত্যু, শেষে পাঁচতারকা হোটেলে মেঝেতে ঘুমানোর শাস্তি দিয়ে শত বিলিয়ন ডলার জরিমানায় আটক প্রিন্সদের মুক্তিদান এবং সৌদি-ইসরায়েল গোপন সম্পর্কের উন্মোচন বিশ্ববাসীর সামনে সৌদি রাজতন্ত্রের নগ্নতার দৃশ্যমানতাকে আরও স্পষ্ট করেছে।

জেরুজালেম প্রশ্ন ও ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা

যুগের পর যুগ ধরে মধ্যপ্রাচ্য ব্যবহৃত হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক শক্তির জুয়ার মাঠ হিসেবে। এবার সেখানে ভয়ানক এক বাজি ধরেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিগত মার্কিন সরকারগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক বিচ্ছেদ ঘটিয়ে তিনটি একেশ্বরবাদী ধর্মীয় বিশ্বাসের পবিত্র ভূমি জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়েছেন তিনি। প্রতিক্রিয়ায় জ্বলছে পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা আর অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম। যুদ্ধ-হিংসা-রক্তপাতের রাষ্ট্রনীতি কিংবা ভূগোলের বিন্দুমাত্র বোঝে না যে শিশুরা; পৃথিবীর বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগারখ্যাত সেই গাজায় বিমান থেকে ফেলা ইসরায়েলি বোমার নৃশংসতা থেকে রেহাই পায়নি তারাও। জেরুজালেমের স্বীকৃতিতে কেবল মুসলমানরা নয়, ক্ষিপ্ত খ্রিস্টানরাও। এমনকী ইসরায়েলে অবস্থানরত ইহুদিদের বড় একটা অংশও এতে খুশি নয়। সহিংসতা আর বিভেদের ভীতিতে আচ্ছন্ন তারাও।

ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন কিশোরী তামিমি

ট্রাম্পের স্বীকৃতির পর মুসলিম বিশ্বসহ পৃথিবীজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এমনকি আমেরিকানরাও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বিরোধিতা জানায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বাকি সদস্যরাষ্ট্রগুলো। এমনকি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানীর স্বীকৃতি দেয় ওআইসি। এর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে ইসরায়েলও সরে আসে ইউনেস্কো থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা বন্ধ ও দেখে নেওয়ার হুমকির পরও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে।  

তবে ইন্তিফাদার মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ উত্তাল হচ্ছে দিনকে দিন। শত শত আহত মানুষকে পেরিয়ে আহমেদ তামিমি নামের ১৬ বছরের মেয়েটি, দখলদার বাহিনীর হাতে হত্যাযজ্ঞের ভয় তুচ্ছ করে সেনাসদস্যকে যে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে রূপান্তরিত হয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতার প্রতীকে। ফিলিস্তিনের অধিকাংশ শিশু-কিশোর-তরুণই ইন্তিফাদার মধ্য দিয়ে গুলতি আর পাথর নিয়ে রচনা করছে একটি মুক্তিকামী প্রতিরোধের অমর কাব্য। তারা প্রত্যেকেই একেক জন মারণাস্ত্রে রূপান্তরিত হয়ে দখলদার ইসরায়েলকে প্রতিহত করার শক্তি বাড়াচ্ছে। জোরালো করে তুলছে ফিলিস্তিনি জাতিসত্তার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার।

 

/এএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া