X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশি ‘ড্রিমার অভিবাসী’ নাঈমের স্বপ্নে ট্রাম্পের আঘাত

ব্রজেশ উপাধ্যায়, যুক্তরাষ্ট্র
১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:২৫আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:৪৪
image


বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন ‘ড্রিমার অভিবাসী’ নাঈম ইসলাম। একদিন সকালে বিলাপরত মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে জেগে ওঠেন তিনি। ১৮ বছর ধরে নাঈমের নানাকে দেখেননি তার মা। ফোনে তার মৃত্যু সংবাদ শুনেছিলেন। নাঈম স্মরণ করেন, কতোটা হৃদয়বিদারক ছিল তার মায়ের বাস্তবতা। ১৮ বছর নিজের বাবাকে না দেখা। এমনকি বাবা পৃথিবী ছাড়ার সময়েও তাকে দেখতে না পাওয়া। অনিবন্ধিত অভিবাসী হিসেবে ভিজিটর্স ভিসা নিয়ে যখন এই পরিবার বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যান, তখন সিদ্ধান্তটা খুব কঠিনই ছিল তাদের পক্ষে। বলতে হয়, এটা শ্রেয়তর ভবিষ্যত নির্মাণের একমুখী টিকিট, যেখানে ফিরে আসার আর উপায় থাকে না।
বাংলাদেশি ‘ড্রিমার অভিবাসী’ নাঈমের স্বপ্নে ট্রাম্পের আঘাত

শৈশবে বাবা-মায়ের সঙ্গে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো অভিবাসীদের কাজের অনুমতি দিতে ‘ড্রিমার’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল ওবামা প্রশাসন। এর আওতায় কয়েক লাখ অবৈধ অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো থেকে বিরত ছিল হোয়াইট হাউস। তাদের যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে কাজের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এর মাধ্যমে মূলত তরুণ অনিবন্ধিত অভিবাসীদের সুরক্ষা দিতে চেয়েছিল ওবামা প্রশাসন।
এ সূচির দাফতরিক নাম ‘ডেফারড অ্যাকশন ফর চিলড্রেন অ্যারাইভাল’ (ডিএসিএ)। কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস,পড়াশোনা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ পান প্রায় ৭ লাখ তরুণ। এই তরুণদের বলা হয় ‘ড্রিমার’। তবে গত সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটি সমাপ্তির ঘোষণা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। উদ্বেগে পতিত হয় ৭ লাখ ড্রিমার অভিবাসী। স্বপ্নভঙ্গের আশঙ্কায় নিমজ্জিত হয় তাদের ‘আমেরিকান স্বপ্ন’।

ডিএসিএ কর্মসূচির আওতায় যেসব ড্রিমার অভিবাসী রয়েছেন তাদের বেশিরভাগই ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে আসা। তার মধ্যেও ৪৯০ জন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ড্রিমার রয়েছেন। নাঈম তাদেরই একজন। নানার মৃত্যুর সেই সময় তিনি জীববিদ্যায় পড়ালেখা করছিলেন। মেডিসিনে ক্যারিয়ার গড়ার তীব্র আশা ছিল তার মনে। নানা চলে যাওয়ার পর মায়ের সেদিনের কান্নারত অবস্থার কথা স্মৃতি থেকে বের করে এনে নাঈম বলেন, ‘এটা ছিল আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এক মোড়’। তিনি বলেন, “আমি স্মরণ করতে পারি, খুব অপরাধবোধে ভুগছিলাম তখন। মনে হচ্ছিলো, মায়ের ত্যাগের কোনও মানে থাকলো না। নথিবদ্ধ না হয়ে, এখনও আমাকে ঘিরে মা-বাবার ‘আমেরিকান স্বপ্ন’ সার্থক করার থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করছি আমি।”
বাংলাদেশি ‘ড্রিমার অভিবাসী’ নাঈমের স্বপ্নে ট্রাম্পের আঘাত

‘ক্ষমতাহীন অসহায়ত্বের ওই বোধই আমাকে সরব হতে সহায়তা করে। আমি একজন সংগঠক হয়ে উঠি ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে। জীববিদ্যাতেই উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন নাঈম। সম্পন্ন করেছেন স্মাতক।’ অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা নিউ ইয়র্কভিত্তিক সংগঠন ডেসিস রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিং (ডিআরইউএম) এর একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে সেখানেই পূর্ণকালীন কর্মী হিসেবে নিয়োজিত নাঈম। তিনি জানান, দক্ষিণ এশিয়া দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া ড্রিমার অভিবাসীর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। অনিবন্ধিত হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার লজ্জা থেকে অনেকেই সামনে আসতে চাননি। নাঈম আরও জানান, গোটা পরিবারের সকল তথ্য মার্কিন সরকারকে দিয়ে দিতে হবে সে ভয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অনেকেই ওবামার শাসনামলে ডিএসিএ-তে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেননি। তবে ঝুঁকি সত্ত্বেও ডিএসিএ কর্মসূচি ‘ড্রিমার অভিবাসী’দের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটিয়েছিল। 

নাঈম ইসলাম জানান, যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর ডিএসিএ কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি বিমানে উঠতে পারেননি। ওবামা প্রশাসনের সময় ওই কর্মসূচি চালু হলে অনেক অভিবাসীই তাদের দেশে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পেরেছে। ড্রিমার হওয়ার সুযোগ নিয়ে তার মতো অনেক স্নাতক ডিগ্রিধারী আনুষ্ঠানিকভাবে চাকরি পেতে শুরু করে। তবে ডিএসিএ কর্মসূচির বিরুদ্ধে ট্রাম্পের আদেশ কেবল সেই স্বাধীনতাকেই ঝুঁকিতে ফেলেনি, পরিবারগুলোকেও উদ্বেগে রেখেছে। কারণ, একবার যদি ডিএসিএ বাতিল হয়ে যায় তবে অনিবন্ধিত পরিবারগুলোর যে তথ্য রয়েছে সেগুলো দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেবে তা অনিশ্চিত। নাঈম বলেন, ‘সংগ্রাম করা ছাড়া আমাদের আর অন্য উপায় নেই। লড়াই না করলে প্রেসিডেন্ট ওবামাও ডিএসিএ কর্মসূচি চালু করতেন না।’ অন্যান্য বাংলাদেশি, পাকিস্তানি ও ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়ে নাঈম এখন সমাবেশ আয়োজনের পেছনে সময় দিচ্ছেন। আইনপ্রণেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং দক্ষিণ এশিয়ার কমিউনিটিকে সোচ্চার করে তোলার চেষ্টা করছেন তিনি। 

বাংলাদেশি ‘ড্রিমার অভিবাসী’ নাঈমের স্বপ্নে ট্রাম্পের আঘাত

সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, ৮৩ শতাংশ মার্কিনি এবং ৬৭ শতাংশ রিপাবলিকান ডিএসিএ কর্মসূচির আওতায় অভিবাসী তরুণদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে দেওয়ার পক্ষপাতী। আবার এমন অনেক মানুষও আছেন যারা চান সরকার এই কর্মসূচি একেবারে বাতিল করুক, যেন ভবিষ্যতে কেউই অভিবাসন আইনকে হালকাভাবে না নেয়। নাঈম বলেন, ‘কেউ এমনি এমনি ২০ থেকে ৩০ বছর বাড়ি ও পরিবার থেকে দূরে থাকে না। এই পথ বেছে নেওয়া কারও জন্য আনন্দদায়ক নয়। বেশিরভাগ সময়ই নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে তারা এমনটা করে।’ 

শুক্রবার কেন্দ্রীয় ব্যয়ের বাজেট পাস করার ডেডলাইন। আর তার আগেই ওবামা ঘোষিত ড্রিমার অভিবাসীদের আইনি সুরক্ষা দেওয়ার প্রশ্নে সমঝোতায় না পৌঁছালে সরকারে অচলাবস্থা তৈরির হুমকি দিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। ডিএসিএ কর্মসূচি বাদ দিয়ে মেক্সিকান সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে তহবিল বরাদ্দের কথা ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন। সরকারে অচলাবস্থা থাকলেও ড্রিমার অভিবাসীর সুরক্ষা প্রশ্নে এখন পর্যন্ত কোনও চুক্তিতে পৌঁছানোর আভাস পাওয়া যায়নি। 

/এফইউ/বিএ/
সম্পর্কিত
বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন কলকাতায় উদযাপিত হলো ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’
২০২৪ সালের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির তালিকায় বাংলাদেশ ১৬তম
বিএনপির প্রবাসী নেতাদের গ্রেফতারের অপেক্ষায় অ্যাসাইলাম শিকারিরা
সর্বশেষ খবর
ঘুষ মামলায় আদালতের আদেশ লঙ্ঘন, ট্রাম্পের শাস্তি চান প্রসিকিউটররা
ঘুষ মামলায় আদালতের আদেশ লঙ্ঘন, ট্রাম্পের শাস্তি চান প্রসিকিউটররা
ইয়াবাসহ ইউপি চেয়ারম্যানের ছোট ভাই গ্রেফতার
ইয়াবাসহ ইউপি চেয়ারম্যানের ছোট ভাই গ্রেফতার
‘কত সাহায্য চাওয়া যায়? আমাকে এখন দেহ ব্যবসা করার কথাও বলে’
রানা প্লাজার ভুক্তভোগীর আক্ষেপ‘কত সাহায্য চাওয়া যায়? আমাকে এখন দেহ ব্যবসা করার কথাও বলে’
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান