X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

'ট্রাম্প সঠিক নন, জলবায়ু পরিবর্তনের আশঙ্কা বাস্তব ও তা ঘটছে'

ফাহমিদা উর্ণি
২৮ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:৫২আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৫:১৭

বিশ্বের জলবায়ু পরিস্থিতি নিয়ে বিজ্ঞানীদের দেওয়া পূর্বাভাস প্রত্যাখ্যান করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে সমালোচনা চলছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, ট্রাম্প জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে সঠিক তথ্য দেননি। নিজের দৃষ্টিভঙ্গি জানাতে গিয়ে পাল্টা তত্ত্বের উপর ভর করছেন। ট্রাম্পকে সংশয়বাদী উল্লেখ করে এক বিজ্ঞানী বলেছেন, তারা কী বলবে তা ভুলে যান। জলবায়ুর পরিবর্তনের আশঙ্কাটি বাস্তব ও এখন তা ঘটছে।

জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বাস করেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প

ব্রিটিশ আইটিভি নিউজের পিয়েরস মরগানকে সাক্ষাৎকার দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, বিশ্বের জলবায়ু পরিস্থিতি নিয়ে বিজ্ঞানীরা যা বলেন এবং পরিসংখ্যানে যা উঠে আসে তার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। ট্রাম্পের দাবি, পৃথিবী একইসঙ্গে উষ্ণ ও শীতল। মেরু অঞ্চলের বরফ গলার খবর সত্য নয় বলেও দাবি করেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘শীতলতাও আছে, উষ্ণতাও আছে। আমি মনে করি, এটা জলবায়ু পরিবর্তন নয়, এটি বৈশ্বিক উষ্ণতা; আর তার প্রভাব পড়ছে না কারণ পুরো জায়গাজুড়ে অনেক ঠাণ্ডা।’

ট্রাম্পের এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন বিজ্ঞানীরা। দশজন জলবায়ু বিজ্ঞানীর বক্তব্যের ভিত্তিতে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে সঠিক কথা বলেননি। রুটজার্স ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিজ্ঞানী জেনিফার ফ্রান্সিস এপিকে ইমেইলে পাঠানো প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘স্পষ্টত ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি জানাতে গিয়ে পাল্টা তত্ত্বের উপর ভর করছেন। মহাসাগর ও ভূমি দুই জায়গার বরফ দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা জানি কেন সেটা: জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোজনিত কারণে কার্বণ নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ায় উষ্ণতা বাড়ছে ও বরফ গলছে।’

লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মার্টিন সিয়েগার্ট ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্টকে বলেন, ‘সংশয়বাদীরা কী বলবে তা ভুলে যান। জলবায়ুর পরিবর্তনের আশঙ্কাটি বাস্তব ও এখন তা ঘটছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়াবিষয়ক দফতর, মার্কিন মহাকাশ সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক ও অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৭ সাল ছিল এ যাবতকালের উষ্ণতম বছরগুলোর একটি। নাসা ও ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ)-এর রেকর্ডকৃত ১৩৫ বছরের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করে এপি বলছে, ১৯৭৬ সালের পরবর্তী কোনও বছরই শীতলতম উপাধি পায়নি। ১৯৮৫ সালে শেষ থেকে স্বাভাবিক মাসগুলো বাদ দিয়ে বিশ্বকে শীতল হতে দেখা যায়নি।

তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ কর্মসূচি বার্কেলি আর্থ-এর বিশেষজ্ঞ জেকে হাউসফাদার এপিকে বলেন, ‘গত ৫০ বছরে বিশ্ব ধীরে ধীরে উষ্ণ হচ্ছে। ১৮৫০ এর দশক এর পর থেকে রাখা রেকর্ড অনুযায়ী, গত ১৮ বছরের মধ্যে ১৭টি বছরই উষ্ণতম আখ্যা পেয়েছে। যেখানে বিশ্ব উষ্ণ হচ্ছে সেখানে একই সঙ্গে বিশ্ব শীতলও হচ্ছে বলাটা যথার্থ নয়।’

বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে মেরু প্রান্তের বরফগুলো দ্রুত গলছে বলে বিজ্ঞানীরা বার বার সতর্ক করলেও তা মানতে রাজি নন ট্রাম্প। তার দাবি, আভাস অনুযায়ী মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বরফ খণ্ডগুলো গলতে যাচ্ছিল, এতোদিনে তা গলে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন তা রেকর্ড গড়ছে। রেকর্ড মাত্রায় জমছে।’

পরিসংখ্যানকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্টের বিশ্লেষণে বলা হয়, মেরু অঞ্চলে বরফ খণ্ডের উপস্থিতি এখনও আছে তা ঠিক। তবে ট্রাম্প যেভাবে রেকর্ড মাত্রায় থাকার কথা বলেছেন তা নেই। গত বছর মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, আর্কটিক ও অ্যান্টার্কটিকা দুই অঞ্চলেই সমুদ্রে বরফ খণ্ডের পরিমাণ রেকর্ড পরিমাণে কমেছে।

ন্যাশনাল স্নো ও আইস ডাটা সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের মার্চে আর্কটিক অঞ্চলে বরফের পরিমাণ কমে শীতকালীন হিসেবে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছিল। অথচ শীতকালের কারণে এ সময়ে সমুদ্রের বরফের পরিমাণ সর্বোচ্চ থাকার কথা ছিল। ২০১২ সালে আর্কটিক অঞ্চলে সবচেয়ে কম মাত্রার বরফ রেকর্ড করা হয়েছিল। পরে সমুদ্রের বরফের মাত্রার সামান্য উন্নতি হলেও ২০১৭ সালে আবারও এর অবনতি হয়। গত ১১ বছরের মধ্যে ১০ বছরই সমুদ্রের বরফের পরিমাণ সর্বরিনম্ন পর্যায়ে ছিল। নাসার তথ্য অনুযায়ী, আর্কটিক অঞ্চলের বরফের পরিমাণ প্রতি দশকে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ হারে কমছে।

প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের এই বিপন্নতার প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ-২১ নামের একটি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো একটি জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা। ২০১৬ সালের এপ্রিলে ১৭৫টি দেশ ওই সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তির আওতায় বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। চুক্তির লক্ষ্যমাত্রায় আরও রয়েছে- গাছ, মাটি ও সমুদ্র প্রাকৃতিকভাবে যতটা শোষণ করতে পারে, ২০৫০ সাল থেকে ২১০০ সালের মধ্যে কৃত্রিমভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ সেই পর্যায়ে নামিয়ে আনা।

যুক্তরাষ্ট্রও ওই জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। তবে তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর পাল্টে যায় পরিস্থিতি। ২০১৭ সালের জুনে বৈশ্বিক জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের সমর্থন তুলে নেয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্যারিস চুক্তির আওতায় জলবায়ু তহবিলে অংশগ্রহণ করা থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দেন।

প্যারিস চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর পক্ষে ট্রাম্পের যুক্তি- এটি মার্কিন স্বার্থবিরোধী। চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প বলেছিলেন, শর্ত পূরণ সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তিতে ফিরে যেতে পারে। আর এবার আইটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, চুক্তিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হলে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে সেখানে যুক্ত হতে পারে।

শুরু থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছেন ট্রাম্প। তার দাবি, এসব তথ্য ভিত্তিহীন। জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্য জীবাশ্মের চেয়ে ভালো কোনও বিকল্প নেই। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর পরই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ঠেকাতে ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে সংশয়ী হয়ে উঠেছিলেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। ওই সময় নাসার এক জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট যদি মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে না তাহলে তিনি ভুল করছেন। এক টুইট বার্তায় ওই বিজ্ঞানী বলেছিলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা নির্বাচনের ধার ধারে না।’

/এএ/
সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্র বড় শক্তি, তাদের পরোয়া করতে হয়: শ্রম প্রতিমন্ত্রী
ঘুষ মামলায় আদালতের আদেশ লঙ্ঘন, ট্রাম্পের শাস্তি চান প্রসিকিউটররা
যুক্তরাষ্ট্র থেকে পার্সেলে তরুণদের কাছে আসছে কোটি টাকার মাদক
সর্বশেষ খবর
দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে আছেন মন্ত্রী-এমপির যেসব স্বজন
উপজেলা নির্বাচনদলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে আছেন মন্ত্রী-এমপির যেসব স্বজন
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক