X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোদির দাভোস সফর কতোটা সফল?

আশীষ বিশ্বাস, কলকাতা
২৮ জানুয়ারি ২০১৮, ২৩:৪০আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০১৮, ০০:০৮

ভারতের অতি জাতীয়তাবাদী সরকারপন্থীরা সংবাদমাধ্যমে সাফল্যের দীর্ঘ তালিকা তুলে ধরলেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুইজারল্যান্ডের দাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনে বিশ্ববাসীর মন জয় করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর ফলে কয়েকবছর আগে যা ভাবা যেত না সেই বিষয়টি সামনে আসছে, শেষ পর্যন্ত কি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বাস্তবতার কাছে হার মানছে?

দাভোসে নরেন্দ্র মোদি

মোদি সাধারণত বিদেশে নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এমনকি তা দেশের অর্থনৈতিক নীতি ও সাধারণ শাসনব্যবস্থা সাময়িক অচলাবস্থায় পড়লেও। বিশ্বের বৃহত্তম (এবং সমস্যাগ্রস্ত) গণতান্ত্রিক দেশের নেতা হিসেবে এরপরও তিনি ৪০টিরও বেশি দেশ সফরের সময় পান।

এক পর্যায়ে এই আক্রমণাত্মক পররাষ্ট্রনীতির উদ্যোগ দেশে ক্রমবর্ধমান গোঁড়া হিন্দুত্ববাদীদের প্রতি মোদির অবস্থানকে বাড়িয়ে নেওয়া ছাড়া বেশি কিছু ছিল না। দেশে ক্রমবর্ধমান এই হুমকিকে অগ্রাহ্য করে তিনি অতি জাতীয়তাবাদীদের আরও চরমের দিকে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছেন। সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিমরা পড়েন ভীতির মধ্যে। দিল্লির প্রবীণ সাংবাদিক জাভেদ আনসারি বলেন, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর মুসলামানদের কখনও এত অনিরাপদবোধ করতে দেখিনি।

বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে মোদি যেসব ভাষণ দিয়েছেন তাতে একটি বিষয় স্পষ্ট। তিনি জাতীয়তাবাদের প্রতিপাদ্যের ওপর ভর করছেন। তিনি দাবি করেন, অতীতের মতো কোনও দেশ এখন ভারতকে আর হালকাভাবে দেখে না। অবশ্যই এজন্য তার ডায়নামিক নেতৃত্ব ধন্যবাদ পেতে পারে। কিন্তু এর বেশি কিছু না।

দাভোসে তিনি ভাষণ দেনে হিন্দিতে। চেষ্টা ছিল বিশ্বকে বুঝিয়ে দেওয়া যে, ভারত শেষপর্যন্ত ‘এসেছে’।  ভারতের দর্শকদের খুশি করার উদ্দেশ্যও ছিল এই উদ্যোগে। কিন্তু বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ভাষণ নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশ করেছে। ভাষণ দীর্ঘ হওয়ার (মোদি ৫০ মিনিট ভাষণ দেন) সমালোচনা করেছে। ভাষণের যে হাততালি পেয়েছেন, তা ছিল নিছক ‘ভদ্রতা’। মোদির ভাষণে যে জিএসটি ও নোট বাতিলের ঘটনায় ভারত যে নাটকীয় সুবিধা পেয়েছে, তা উল্লেখ করায় অবাক হওয়ার মতো কিছু ছিল না। এছাড়া মোদি বেশি কথা বলেছেন ভারতের প্রাচীন নৈতিক সংস্কার নিয়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান, বাণিজ্যিক শীর্ষব্যক্তি ও প্রধান নির্বাহীদের সামনে এসব কথা বলেছেন মোদি!

যদিও ভারতীয় ইলেক্ট্রনিক সংবাদমাধ্যমে মোদি সমর্থকদের জোর কণ্ঠের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বিশ্লেষক ফারিদ জাকারিয়া একটি বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। দাভোসে ভারতে বিনিয়োগের জন্য মোদির আহ্বানে কেমন প্রতিক্রিয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করেন, প্রথমদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগে খুব আগ্রহী ছিল।

কিন্তু বেশ কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা, দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া ও ভারতে বিরক্তির পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র শুরুর দিকের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আমলাতন্ত্র খুব ধীর গতিতে কাজ করেছে, অবকাঠামোর ক্ষেত্রে ভালো সড়ক, বিদ্যুৎ সরবারহসহ বেশকিছু বিষয় উপযুক্ত ছিল না। রাজ্যগুলো সব সময় কেন্দ্রের নির্দেশ মানতে চায় না রাজনৈতিক ভিন্নতার কারণে। এছাড়া রাজ্য ও কেন্দ্রের ভূমি সংস্কার আইন, শ্রম ও পরিবেশগত বিষয়েও ভিন্নতা রয়েছে। কিছু এলাকায় আইনশৃঙ্খলাও ভাবনার বিষয় হয়ে রয়ে গেছে।

ভারতীয় এক সাক্ষাৎকারগ্রহণকারীকে জাকারিয়া বলেন, পশ্চিমা পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, অর্থনৈতিক সংস্কারে ভারতের আরও গতিশীল ও সামর্থ্য বাড়ানো উচিত। আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগী বিবেচিত হওয়ার আগেই ভারতকে এটা করতে হবে।

জাকারিয়ার এই জবাবে উঠে আসে, ভারতে এখনও তা হয়নি। মোদি বা ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা প্রকাশ্যে যতই বলুন না কেন, দাভোসে ভারতের সাফাই বিশ্বের মন জয় করতে পারেনি।

ভারতে মোদি-সমর্থকদের জন্য একটি সুযোগ রয়েছে। তারা গুরুত্বসহ তুলে ধরেন, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ৮৫ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। স্পষ্টত, ভারতীয় অর্থনীতির পুনরায় বিকাশের প্রমাণ এটা। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ) তাদের সাম্প্রতিক জরিপে ভারতে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করেছে, ভবিষ্যতেও এই প্রবণতা বহাল থাকবে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভারতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে বিশ্বের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির একটি দেশ হবে ভারত।

মোদি-সমর্থকরা সতর্কতার সঙ্গে চীনকে ভারতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তুলে ধরার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। ২০১৬ সালে চীনে এফডিআই ছিল ১৩৩ বিলিয়ন ডলার। যা দেশটির রেকর্ড ২০১৫ সালের ১৩৫ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে সামান্য কম।

সৌভাগ্যবশত সবাই এই বিষয়ে একমত নন। এমনকি ভারতের সব বিশ্লেষক অন্ধভাবে সরকারি কাঠামোর সমর্থকও নন। স্বামীনাথ এস. আংকেলসারিয়া আইয়ার ভারতকে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় মানতে রাজি নন। তার ভাষায়, ভারত একটি দরিদ্য ও উন্নয়নশীল দেশ। ভারত বিশ্বের জন্য বড়জোর একটি উন্নয়নশীল ভিশন হতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন ইলেক্ট্রনিক পণ্য আমদানিতে ভারতের সংরক্ষণশীলতা। সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে চীনের মতো মনোভাব নিয়ে দেশটির প্রতিযোগিতায় পেরে উঠবে না ভারত।

এটা সত্যি যে, চীনও অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে সংরক্ষণশীলতার পথ ধরেছে। ভারতও একই পথে এগুনোর চেষ্টা করতে পারে কিন্তু ফল ভিন্ন হতে পারে সতর্ক করেছেন আইয়ার। তার মতে, ভারতে ভূমি, শ্রম ও মূলধন এশিয়ার অন্যদেশের তুলনায় ব্যয়বহুল।

তাই ভারত সরকারকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। কিন্তু বিশ্লেষকদের প্রশ্ন, সরকার কি আদৌ এসব বিষয়ে কর্ণপাত করবে?

 

/এএ/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য খালাস করে গেলেন যে নারী ট্রাকচালক
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা