X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘কঠোর অভিবাসন নীতি’তে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা

ফাহমিদা উর্ণি
৩১ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:৩০আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:৪৫
image

প্রথম স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্থাপিত ‘চার স্তম্ভের কঠোর অভিবাসন নীতি’ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকেই হুমকিতে ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরের পর বছর ধরে অভিবাসীদের সাদরে গ্রহণের ইতিহাস আর অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের অবদান পর্যালোচনা করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এমন আশঙ্কা জানিয়েছে। ট্রাম্পের এ প্রস্তাবকে অভিবাসী প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতির সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে মনে করা হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, ট্রাম্প অভিবাসী প্রশ্নে তার পুরনো কঠোর অবস্থানকেই নতুন মোড়কে উপস্থাপন করেছেন মাত্র।

স্ট্যাচু অব লিবার্টি
মঙ্গলবার স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে ‘চার স্তম্ভ’ নামে একটি অভিবাসন সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ চারটি স্তম্ভ হলো- ড্রিমার বা ডিমারের জন্য আবেদন করেছে এমন প্রায় ১৮ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে নাগরিকত্ব প্রদানের পথ খোলার সুযোগ বের করা, দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ভিসা লটারি কর্মসূচি বন্ধ করা এবং পারিবারিক সূত্রে অভিবাসন (চেইন ইমিগ্রেশন) সীমিত করা। ট্রাম্প বলেন, ‘পুরনো অভিবাসন নীতি সংস্কার এবং আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থাকে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী করার সময় এসেছে।’

ঐতিহাসিকভাবেই দমিতদের জন্য একটি আশ্রয়ের এলাকা যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের সম্ভাবনা কখনও দাতব্যমূলক কর্মকাণ্ড ছিল না। এটি ছিল তাদের জাতীয় স্বার্থজনিত কৌশলেরই অংশ। গত দুই শতাব্দীতে অভিবাসী প্রশ্নে দেশটির অবস্থান তেম বার্তাই দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে যখন চরম জাতীয় সংকট চলছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন আব্রাহাম লিংকন। তিনি তখন ‘অ্যান অ্যাক্ট টু এনকারেজ ইমিগ্রেশন’ নামের একটি আইনে স্বাক্ষর করেছিলেন। শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী আধিপত্যের বিষক্রিয়া যখন আক্ষরিক অর্থে আমেরিকাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় লিংকন অভিবাসীদের পূর্ণ জোয়ারকে চিহ্নিত করেছেন প্রকৃতির এক আশীর্বাদ হিসেবে। বলেছিলেন অভিবাসীরা অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট জাতীয় সক্ষমতাজনিত ঘাটতি আর স্বাস্থ্যগত বিধ্বস্ত বাস্তবতার ক্ষত সারিয়ে তুলতে সক্ষম।'

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের স্বাগত জানানোর প্রতীকী ছবি
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভক্সের এক মন্তব্য প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান জাতীয় সংকট লিংকনের যুগের মতো অতোটা গভীর নয়। কিন্তু তারপরও ট্রাম্প এবং টম কটন, জেফ সেশন্স ও স্টিফেন মিলারের মতো লোকেরা মূলত একই প্রশ্নকে সামনে এনেছেন: সব মানুষ সমভাবে সৃষ্ট বলে যুক্তরাষ্ট্র সহজাতভাবে যে ধারণাকে লালন করছে তা বয়ে নিয়ে যাওয়া হবে? নাকি দেশটি সংকীর্ণ জাতিগত রাজনীতির অতল গহ্বরে ডুব দেবে?   

অভিবাসন প্রশ্নে সংশয়বাদীরা প্রায়ই দাবি করে থাকেন, অভিবাসীরা বিশেষ করে অনিবন্ধিত অভিবাসীরা সরকারি সম্পত্তি নিঃশেষ করছে। নির্বাচনি প্রচারণার সময় থেকে ট্রাম্পও বার বারই দাবি করে আসছেন যে প্রবীণ মার্কিনিদের চেয়ে অনিবন্ধিত কর্মীরা বেশি সরকারি  সেবা পাচ্ছেন। ভক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ধরনের দাবিগুলো সত্য নয়। অনিবন্ধিত অভিবাসীরা খুব কম সরকারি সেবা পেয়ে থাকেন (তারা বাসে চড়তে পারেন কিন্তু সামাজিক সহায়তা কর্মসূচির যোগ্য বিবেচিত হন না) তবে তাদেরকে কর পরিশোধ করতে হয়। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে যারা অবৈধভাবে থাকছেন ও কাজ করছেন তাদেরকেও কোনও ধরনের সুবিধাপ্রাপ্তি ছাড়া প্রায়ই সামাজিক নিরাপত্তা কর পরিশোধ করতে হয়। এক দিক থেকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কোষাগারে বড় ধরনের অবদান রাখেন। ভক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিবাসন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাম ও ডান দুই ধারার রাজনীতিতে বিভক্ত অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন বিষয়ে আলাদা আলাদা মত দিলেও অভিবাসনের ব্যাপারে তারা প্রায় একমত। তারা মনে করেন, অভিবাসন দেশের অর্থনীতির জন্য লাভজনক। জনসংখ্যা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে কর আদায়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, বিচিত্র মানুষের সমাগম এবং অনেকগুলো ধারণার সম্মিলন সব কিছুকেই ইঙ্গিত করেন তারা।

গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জ্যানেট এল ইয়েলেন কংগ্রেসে দেওয়া বক্তব্যে অভিবাসন ঠেকালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে শ্রম-শক্তিজনিত প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। উৎপাদন ধীর হওয়ার পাশাপাশি শ্রমশক্তির প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়াও আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর একটি। শ্রমশক্তিজনিত প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো অভিবাসন। আর সেকারণে সম্ভবত অভিবাসনের হার কমে গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কমে যায়।’

মন্ত্রিসভার বৈঠকে ট্রাম্প (ফাইল ফটো)
২০১৫ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী ১ কোটি ১০ লাখ। মঙ্গলবার ট্রাম্প যে চারটি স্তম্ভের কথা বলেছেন, তার তিনটিই অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে এবং বর্তমানে বৈধ বলে বিবেচিত কিছু অভিবাসন প্রক্রিয়া বন্ধের প্রচেষ্টা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো ট্রাম্পের অভিবাসন পরিকল্পনাকে ‘কঠোর’ হিসেবেই দেখছে। পলিটিকো বলছে, বৈধ অভিবাসনের পথও রুদ্ধ করছেন তিনি। ট্রাম্পের এই প্রস্তাবকে অভিবাসী প্রশ্নে তার পুরনো কঠোর অবস্থানকে নতুন মোড়কে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। রয়টার্স বলেছে, খুবই শক্ত অভিবাসন পরকল্পনা। সিএনবিসি বলছে, লাখ লাখ অভিবাসীর ভাগ্যকে কংগ্রেসের হাতে তুলে দিয়েছেন ট্রাম্প।  

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব কত তা ন্যাশনাল একাডেমিকস অব সায়েন্সেস, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড মেডিসিন-এর গবেষণায় উঠে এসেছে। ৭৫ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অভিবাসীদের অর্থনৈতিক প্রভাব ইতিবাচক; আর অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় পর্যায়ে তা নেতিবাচক।’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কেন্দ্রীয় সরকার অভিবাসীদের যতটা না সুবিধা দেয় তার চেয়ে তাদের কাছ থেকে বেশি কর আদায় করতে পারে। অন্যদিকে অঙ্গরাজ্য এবং স্থানীয় সরকারের বিপরীত চিত্র দেখা যায়। অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় সরকারের উপর বিপরীত প্রভাবের কারণ অভিবাসীদের সন্তানদের স্কুলে শিক্ষা দিতে হয়। তবে ওই শিশুরা যখন বড় হয় এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রাপ্তবয়স্কে পরিণত হয় তখন তারা অঙ্গরাজ্যের ব্যালেন্স শিটের বটম লাইনে বা প্রকৃত মুনাফায় অবদান রাখতে পারে।

ভক্সের প্রতিবেদনে আশঙ্কা জানানো হয়, ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি যুক্তরাষ্ট্রকে দুর্বল করবে, বিভাজিত করবে এবং এর শ্রেষ্ঠত্ব ক্ষুণ্ন হবে। কারণ বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশের মর্যাদা হারানোর দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্র। চীন ক্রমাগত দেশটিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আর তাই একবিংশ শতাব্দীতে নিজেদের স্বার্থেই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

 

/এফইউ/
সম্পর্কিত
কানাডার ইতিহাসে বৃহত্তম স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার ৬
আদালতে হাজির হয়ে ট্রাম্প বললেন, ‘এটি কেলেঙ্কারির বিচার’
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন ভ্রমণে কানাডার সতর্কতা
সর্বশেষ খবর
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোট শেষেই বিজয় মিছিল
পোশাকশ্রমিককে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
পোশাকশ্রমিককে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া