X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ট্রাম্পের নতুন বাগযুদ্ধ

অদিতি খান্না, যুক্তরাজ্য
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২২:২৩আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২২:৫১

যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবাকে (এনএইচএস) কটাক্ষ করে নতুন করে বাগযুদ্ধ শুরু করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির চরম ডানপন্থী একটি দলের মুসলিম বিদ্বেষী কিছু ভিডিও শেয়ার করে এর আগেও এমন কথার লড়াই চালিয়েছেন তিনি। সেবার ক্ষমা চাইলেও আবারও বিতর্ক শুরু করলেন তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

সম্পতি যুক্তরাজ্যের এনএইচএসের সংকট বিষয়ে একটি টেলিভিশন প্রতিবেদন দেখে ব্যবস্থাটিকে কটাক্ষ করে টুইট করেন ট্রাম্প। খবরে দেখানো হয়, রবিবার লন্ডনে এনএইচএসের সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা কাজে আসছে না অভিযোগ করে বিক্ষোভ করা হয়েছে। এরপর ট্রাম্প টুইটারে লেখেন, ‘সার্বজনীন ব্যবস্থা কাজে আসছে না বলে যুক্তরাজ্যের হাজার হাজার মানুষ মিছিল করছেন। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা ওই সেবারই দাবি জানাচ্ছে। তারা আদতেই খারাপ ও নির্ব্যক্তিক চিকিৎসা সুরক্ষার জন্য ব্যাপকভাবে কর বাড়ানোর দাবি করছে। তবে তা হবে না, ধন্যবাদ।’

ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার ডাউনিং স্ট্রিটে কথা বলেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দাফতরিক মুখপাত্র। তিনি জানিয়েছেন এই সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বিশ্বের সবচেয়ে ভালো সেবা হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আসছে। তিনি বলেন, ‘এনএইচএসের মতো একটি ব্যবস্থা থাকায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী গর্বিত। এনএইচএসের তহবিল এখন সর্বোচ্চ অবস্থায় আছে। বাজেটে এটার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অতিরিক্ত ২৮০ কোটি পাউন্ড বরাদ্দ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক কমনওয়েলথ তহবিল আন্তর্জাতিক জরিপে এনএইচএস দ্বিতীয়বারের মতো সবচেয়ে সেরা ব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত হয়েছে।’

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেরেমি হান্টও ট্রাম্পের বক্তব্যের পাল্টা টুইট করেছেন। তিনি নিজ দেশের স্বাস্থ্য সেবাকে সমর্থন করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে লাখ লাখ মানুষ যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত তা তুলে ধরেছেন। তার দাবি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে তার দেশের অবস্থা অনেক ভাল। ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আমি মিছিলকারীদের সঙ্গে একমত না। তবে তাদের মধ্যকার কেউও এমন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চায় না যেখানে ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষের কোনও সুরক্ষাই নেই। এনএইচএসের হয়তো কিছু প্রতিকূলতা রয়েছে কিন্তু সার্বজনীন সুরক্ষা রয়েছে এমন দেশের বাসিন্দা হয়ে আমি গর্বিত। এখানে ব্যাংক ব্যালেন্স না থাকলেও সবাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা পায়।’

যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনও টুইটারে ট্রাম্পকে পাল্টা জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জনগণ মিছিল করেছে কারণ আমরা এনএইচএসকে ভালবাসি। আর কনজারভেটিভ পার্টি এনিয়ে যা করতে যাচ্ছে তাকে ঘৃণা করি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটি মানবাধিকার।’ 

ট্রাম্প চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের ‍উদারপন্থী গণতান্ত্রিক নেতা ভিন্স ক্যাবল কাছ থেকেও। সম্প্রতি তার দল স্বাস্থ্য সুরক্ষার সংস্কার নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তিনি সেই কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যদি তিনি (ট্রাম্প) বুঝতে চান যুক্তরাজ্যে ব্যবস্থাটি কিভাবে কাজ করছে আর নিজেদের জন্য সমাধান চান তাহলে আমাদের প্রতিবেদনটি তার পড়া উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘তিনি নিশ্চিতভাবে এনএইচএস কী তা বুঝতেই পারেননি। কিন্তু আমি আশাবাদী তিনি তা বুঝতে পারবেন।’

এনএইচএসের তহবিলের বিষয়টি যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্কের অন্যতম প্রধান ইস্যু। সরকার চাইছে এই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে আর বিরোধী দলগুলোর চাওয়া এ খাতে নতুন তহবিল বরাদ্দ দেওয়া হোক। সরকার এই সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য অভিবাসীদের কাছ থেকে নেওয়া খরচ দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করছে। এটা কার্যকর হলে এনএইচএসের তহবিলে বছরে অতিরিক্ত ২২ কোটি পাউন্ড পাওয়া যাবে।

নতুন পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য সারচার্জের পরিমাণ ২০০ পাউন্ড থেকে বাড়িয়ে ৪০০ পাউন্ড করা হয়েছে। আর শিক্ষার্থীদের জন্য সারচার্জ দেড়শ পাউন্ডের পরিবর্তে ৩০০ পাউন্ড করা হয়েছে। কাজ, শিক্ষা বা পরিবারের সদস্যদের কাছে বেড়ানো উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্যে যাওয়া বাংলাদেশিসহ সব বিদেশির কাছ থেকে এই অর্থ নেওয়া হয়ে থাকে। শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকরা এই খরচের আওতার বাইরে থাকেন। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা বিভাগ এনএইচএসের জন্য বাড়তি তহবিল যোগাতে আগামী বছর থেকে এই বর্ধিত খরচের বিষয়টি কার্যকর করার পরিকল্পনা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টি গত বছর সেখানকার স্বাস্থ্যবীমা সংক্রান্ত ওবামা কেয়ার বাতিলের জন্য চেষ্টা চালায়। তবে তা কংগ্রেসে পাস করতে ব্যর্থ হয় দলটি। নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় থেকেই ট্রাম্প ওবামাকেয়ার নিয়ে উত্তপ্ত কথা বলে আসছিলেন।

আর সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের চরম ডানপন্থী একটি দলের মুসলিমবিদ্বেষী ভিডিও রিটুইট করে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে ছিলেন ট্রাম্প। তবে যুক্তরাজ্যের দলটি এত ভয়ঙ্কর ও বর্ণবাদী তা জানতেন না দাবি করে ট্রাম্প বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চান। এরপর স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে আবারও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাগযুদ্ধে লিপ্ত হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। 

 

/আরএ/এমএইচ/
সম্পর্কিত
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিমার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে ভিত্তিহীন তথ্য রয়েছে
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা