X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি আরবে কেন নতুন ১০০০ সেনা পাঠাচ্ছে পাকিস্তান?

আশফাক মাহমুদ
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২০:১০আপডেট : ২১ মার্চ ২০১৮, ১৪:০১
image

১৯৮২ সালে সম্পাদিত এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী, আগে থেকেই সৌদি আরবে মোতয়েন ছিল ১ হাজার ৬শ পাকিস্তানি সেনা। নতুন করে সেখানে আরও ১ হাজার সেনা পাঠাচ্ছে ইসলামাবাদ। তবে প্রসঙ্গটি আড়ালে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে তারা। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি সরকারকে সহায়তা দিতেই সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত। কেউ কেউ আবার এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে অভ্যন্তরীণ সংকটে থাকা রাজপরিবারকে সুরক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যও খুঁজে পেয়েছেন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও সরকারের পক্ষ থেকে এই সম্ভাবনার গুঞ্জন নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। তবে সেনা পাঠানোর কারণ সম্পর্কে কোনও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি তাদের কাছে।
সৌদি আরবে কেন নতুন ১০০০ সেনা পাঠাচ্ছে পাকিস্তান?

সৌদি আরবে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে ডেকে পাঠিয়েছিল পাকিস্তান সংসদের উচ্চকক্ষ। সোমবার,  প্রতিরক্ষামন্ত্রী খুররাম দাস্তগির খান সিনেট শুনানিতে বলেছেন, ‘সেনা দলটি সৌদি আরবের ভৌগোলিক সীমানার ভেতরে থেকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদানের কাজ করবে। আমাদের সেনা কোনও না কোনওভাবে ইয়েমেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, এমন চিন্তা ভুল। যুদ্ধ জড়িয়ে পড়ার স্পষ্ট নীতি আছে...আগে যে সেনাদের পাঠানো হয়েছে ও নতুন করে যারা যাচ্ছে তারা ১৯৮২ সালের চুক্তি অনুসারেই সেখানে যাচ্ছে’ । কিন্তু কী ধরণের প্রশিক্ষণ তারা দেবে আর ঠিক কোন এলাকায় তাদের মোতায়েন করা হচ্ছে, সে বিষয়ে দাস্তগির সিনেটের কাছে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

দাস্তগিরের বক্তব্য শুনে পাকিস্তানের সিনেট চেয়ারম্যান রাজা রাব্বানি বলেছেন, ‘আমি দুঃখিত। আপনার বক্তব্য পরিষ্কার নয়।’ এমন কি রাজা রাব্বানি ‘সংসদ অবমাননার’ অভিযোগে অভিযুক্ত করার কথা উল্লেখ করে তাকে সতর্ক করে দেওয়ার পরও দাস্তগির সৌদিতে পাকিস্তানের সেনা পাঠাবার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান।

সহস্রাধিক নতুন সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে থেকেই ১ হাজার ৬০০ পাকিস্তানি সেনা সৌদিতে মোতায়েন করা রয়েছে। ১৯৮২ সালে সৌদি ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত সামরিক সহযোগিতা চুক্তির আওতায় রয়েছে তারা। ওই চুক্তির বলে পাকিস্তানি সেনারা সৌদি সেনাদের প্রশিক্ষণ ও অভ্যন্তরীণ অভিযানে সহায়তা প্রদানের কাজ করতে পারে। ২০১৫ সালে সৌদি আরব ইয়েমেন সংঘাতে সাহায্য চেয়ে কয়েকটি মিত্র দেশের কাছে সামরিক সহযোগিতা চেয়েছিল। কিন্তু  পাকিস্তান তখন সেনা পাঠানোর আহ্বানে সাড়া দেয়নি। ২০১৫ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের সংসদে পাস হওয়া এক যৌথ প্রস্তাবে ইয়েমেন সংঘাত অবসানের আহ্বান জানানো হয়। ইসলামাবাদের তখনকার অবস্থান ছিল,  সৌদি আরবের ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং পবিত্র মক্কা ও মদিনা নগরীকে রক্ষার জন্যই শুধু তারা সেনা পাঠাতে পারে। ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের অবস্থান জাতিসংঘ সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আব্দ-রাব্বু মানসুর হাদির পক্ষে। হুথি বিদ্রোহীদের দমনকেই ইয়েমেন সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে থাকে তারা।

ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুথিদের বিরুদ্ধে সৌদিদের পক্ষে সেনা পাঠানোর বিষয়টি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে স্পর্শকাতর একটি বিষয়। এতে পাকিস্তানের ৩ কোটি ৫০ লাখ শিয়া জনসংখ্যার ভেতর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়া, ইরানের সঙ্গে সীমান্তও রয়েছে পাকিস্তানের। রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসের একজন গবেষক কামাল আলম মনে করেন, পাকিস্তান ‘সৌদি আরবের ক্রীড়নক’ ভাবমূর্তির বাইরে আসতে চায়। অন্যদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে  সেনা বাড়াতে থাকলে পাকিস্তান সৌদি আরব ও ইরানের আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের মাঝে পড়ে যাবে।

ইসলামাবাদভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক জাহিদ হুসেনের মতে, ‘যে পরিস্থিতিতে ও সময়ে পাকিস্তান এই সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে। পাকিস্তান সরকার বিষয়টি স্পষ্ট করছে না। ফলে সন্দেহ বাড়ছে।’ তার মতে, পাকিস্তানি সেনারা হয়তো সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে না। তবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া সৌদি সেনাদের বদলি হিসেবে দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দেখভাল করবে তারা।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সৌদি ও পাকিস্তানের পারস্পারিক সম্পর্ক পর্যবেক্ষণকারী  সিঙ্গাপুরভিত্তিক শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক  জেমস ডরসে হুসেনের মূল্যায়নের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি মনে করেন, ইয়েমেনের অস্থিরতার সঙ্গে পাকিস্তানের জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা পাকিস্তানিদের মনে কাজ করলেও, ইয়েমেনে পাকিস্তানের সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। যদিও সৌদি সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে পাকিস্তান পরোক্ষভাবে এতে সম্পৃক্ত হয়ে যাবে। ডোরসে আরও মনে করেন, সাম্প্রতিক এই সেনা মোতায়েন অতীতে সেনা না পাঠানোর সিদ্ধান্তের ক্ষতিপূরণ।
মিডল ইস্ট মনিটর তাদের নিজস্ব অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সৌদি আরবে সেনা পাঠানোর আগে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া ইরান, তুরস্ক ও কাতারের সঙ্গে আলাপ করেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন।

সেনা পাঠানো নিয়ে এমন ধোঁয়াটে পরিবেশে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অন্য আর একটি বাস্তবতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে চাইছেন। তাদের ধারণা, সৌদির রাজ পরিবারকে রক্ষা করাই প্রেরিত পাকিস্তানি সেনাদের মূল কাজ হবে। কয়েক মাসের মধ্যেই রাজপরিবারের নিকটজনদের অনেককে দুর্নীতির অভিযোগে আটক করা হয়েছে সৌদিতে। এতে রাজ-পরিবারের সাথে তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরাই স্বাভাবিক। নিঃসঙ্গ হয়ে পড়া রাজপরিবারকে নিরাপত্তা দিতে পাকিস্তানের ওপর ভরসা করছে সৌদি আরব, মিডল ইস্ট মনিটরকে এমন পর্যবেক্ষণও জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

‘ব্রুকিংস ইন্টেলিজেন্স প্রজেক্টের’ পরিচালক ও সিআইয়ের সাবেক বিশ্লেষক ব্রুস রিডেল  বলেছেন, ‘সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তিন বছরে অনেক শত্রু তৈরি করে ফেলেছেন, যাদের অনেকে রাজপরিবারের সদস্য।  যুবরাজের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কাজ করতেই পাকিস্তানি সেনাদের মোতায়েন করা হয়ে থাকতে পারে। এতে শত্রুরা যদি শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা বা উৎখাত করতে চলেও আসে, তাহলেও ওই বাহিনী তার ও পাকিস্তানের প্রতি অনুগত থাকতে বাধ্য হবে।’

 

 

/বিএ/
সম্পর্কিত
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় চীন ও ইন্দোনেশিয়া
ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২৯ মাওবাদী নিহত
সর্বশেষ খবর
পাকিস্তানে জাপানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা
পাকিস্তানে জাপানি নাগরিকদের লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
মাদারীপুরে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি লিভারপুল, সেমিফাইনালে আটালান্টা
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন