X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১
দুই অ্যাকটিভিস্টের মত

‘স্বশাসিত রোহিঙ্গা অঞ্চল প্রতিষ্ঠা’ই সংকট নিরসনের পথ

মাহাদী হাসান
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৯:০০আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৯:২৬
image

এখনও মিয়ানমার সীমান্তে পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। সেনা-নিয়ন্ত্রিত রাখাইনকে এখনও নিরাপদ মনে করছে না তারা। নো ম্যানস ল্যান্ডে অপেক্ষারত হাজার হাজার মানুষ। তাদের দেশে ফেরার হুঙ্কার দিয়েই কাজ হয়নি। কোনভাবেই কেউ বিভৎস সেই মৃত্যুপুরীতে ফিরতে চাইছেন না। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালিয়ে নষ্ট করা হচ্ছে সেনা-অপরাধকর্মের আলামত। গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে একটি জনগোষ্ঠীর বসবাসের স্মৃতি। বাংলাদেশেও খুব ভালো নেই রোহিঙ্গারা। অভ্যন্তরীণ সংকট সামলে নিয়ে বিপুল পরিমাণ মানুষের দেখভাল করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মিয়ানমারের দুই মানবাধিকার কর্মী মনে করছেন, প্রত্যাবাসন রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান আনতে পারবে না। পৃথিবীর সবথেকে বিপন্ন ওই জনগোষ্ঠীর মানুষের দরকার স্বশাসিত অঞ্চল। রোহিঙ্গা অ্যাকটিভিস্ট

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পালিয়ে আসা বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হলেও তা কার্যকরের বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। এমন অবস্থায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ওই দুই মানবাধিকার কর্মী। তারা বলছেন, এখন প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলার সময় নয়। বরং রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।

২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মিয়ানমার-বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় তা স্থগিত রয়েছে। কাছাকাছি সময়ে ‘রোহিঙ্গারা ফিরতে চায় না’ শিরোনামে জ্যাসন বিউবিয়ের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় মার্কিন রেডিও নেটওয়ার্ক-এনপিআর-এর ওয়েব মিডিয়ায়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন এর প্রধান তুন খিন। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আমাকে কয়েকজন আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন যে এমন জায়গায় আমরা কিভাবে ফিরে যেতে পারি? এখন আসলেই প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলার সময় নয়।’ বৃহস্পতিবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কথা বলবেন তুন খিন। 

রোহিঙ্গা নারীদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যৌন নিপীড়নের ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ও পরিকল্পিত ধর্ষণের আলামত পায় মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি। তুন খিন বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো জানে আসলে কি হচ্ছে। ইয়াঙ্গুনে মার্কিন ও ব্রিটিশ দূতাবাসে সব আলামতই আছে। বছরের পর বছর ধরে এই হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে অবগত তারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন মিয়ানমার সফর করলেও কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি। আরেক রোহিঙ্গা অ্যাকটিভিস্ট মং জার্নি বলেন, বৌদ্ধ, রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী সবাই তো একই দেশে বাস করছে। রোহিঙ্গাদেরকে সমূলে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর ১৯৭৮ থেকে প্রায় ৪০ বছর ধরেই এই নিধনযজ্ঞ চলছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কাছে যথেষ্ট তথ্য আছে যা দিয়ে একে গণহত্যা বলা যেতে পারে।

রো হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনের অভাযোগ তুলেছে। মং জার্নিও অভিযোগ করেছেন, জাতিসংঘের সদস্যরা বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে ‘কোমা’য় আছেন। তিনি বলেন, আগে কোনও কূটনীতিক ইয়াঙ্গুনে গেলে অং সান সু চির সঙ্গে দেখা করতে চাইতো। কিন্তু তার নেতৃত্বে মিয়ানমারে কোনও পরিবর্তন আসেনি। বরং তার হাত ধরে আরও পিছিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। রুপ নিচ্ছে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে।  এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, ‘আমি খুবই উদ্বিগ্ন যে যাকে পশ্চিমা দেশগুলো গণতন্ত্রের একমাত্র উপায় ভাবতেন। আর তার শাসনামলেই চলছে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ।’

তুন খিন বলেন, ‘গত সপ্তাহেই আমি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছি। প্রত্যাবাসনের কথা উঠলে তারা বিশ্বাস করতে চান না। যেন মজা করা হচ্ছে। এখন আসলে প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলার সময় না। বরং মিয়ানমারের সেনাপ্রাধন মি অং হ্লাং ও বেসামরিক সরকারের সর্বোচ্চ নেত্রী অং সান সু চিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সামনে হাজির করা জরুরি। রোহিঙ্গাদের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নিরাপত্তা। 

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। উগ্র বৌদ্ধবাদকে ব্যবহার করে সেখানকার সেনাবাহিনী ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে স্থাপন করেছে সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাসের চিহ্ন। ছড়িয়েছে বিদ্বেষ। জার্নির মতে, যখন একটি দেশের সমাজ, রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও সামরিক বাহিনী কোনও জাতিগোষ্ঠীকে অস্বীকার করে, তখন সেখানে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হয়। জার্নি বলেন, ফিরে যাওয়া কোনও সমাধান নয়। যদি সেনাবাহিনী বা সু চি ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলে সেটা শুধুই আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করার জন্য। রোহিঙ্গাদের এখন প্রয়োজন এমন একটি জায়গা যাকে তারা নিজেদের বলে দাবি করতে পারে। যেখানে নিজেদের বাড়ি বানাতে পারে। তিনি বলন, ‘বিশ্বের নেতারা এক হয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি স্বশাসিত অঞ্চল তৈরির উদ্যোগ নেওয়া দরকার। জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ তাদের সুরক্ষা দিতে পারে। ‘

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে জার্নি বলেন, ‘আমাদের বুঝতে হবে ১৬ কোটি মানুষের পর ১০ লাখ মানুষ বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা। এত মানুষ সামলানো নিশ্চিতভাবেই খুব কঠিন। তাই তারা প্রত্যাবাসন চাওয়াটাই স্বাভাবিক।’ অন্যদিকে মিয়ানমার চাইবে এই প্রক্রিয়া বিলম্বিত হোক। তুন খিন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এখনও বিভীষিকার মধ্যে বাস করছে। তারা কেউই ফিরে যেতে চায় না।’ তারা আসলে জাতিসংঘের সুরক্ষা চায়, নিরাপত্তা চায়। কেউই ফিরে যেতে চায় না বলেও জানান তিনি।

ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকা ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জার্নি বলেন: রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এমন একটা পৃথিবী দরকার, যেটাকে তারা নিজেদের আবাস বলতে পারে। যেখানে তারা দাঁড়াতে পারে রোহিঙ্গা পরিচয় নিয়ে। সহিংসতা আর সন্ত্রাসের মুখোমুখি না হয়েই যেতে পারে স্কুল-কলেজ-হাসপাতালে।

 

/বিএ/
সম্পর্কিত
মিয়ানমারে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহরে কোণঠাসা জান্তা
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় চীন ও ইন্দোনেশিয়া
ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২৯ মাওবাদী নিহত
সর্বশেষ খবর
তিন নম্বরে থেকে সুপার লিগে মোহামেডান
তিন নম্বরে থেকে সুপার লিগে মোহামেডান
মুখ থুবড়ে পড়েছে ইউক্রেনের অস্ত্র খাত
মুখ থুবড়ে পড়েছে ইউক্রেনের অস্ত্র খাত
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
লোকসভা নির্বাচন: মণিপুরে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ
লোকসভা নির্বাচন: মণিপুরে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?