ইতালির পার্লামেন্ট নির্বাচনের বুথফেরত জরিপে এগিয়ে রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনির মধ্য-ডানপন্থী জোট। তবে আসনপ্রাপ্তির দিক থেকে অন্য দল ও জোটগুলোর চেয়ে এগিয়ে থাকলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে পারবে না জোটটি। এমন অবস্থায় ইতালির সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহের আলোচনা ও নতুন জোট গঠনের প্রয়োজন পড়বে। আপাতত ঝুলন্ত পার্লামেন্ট পেতে যাচ্ছে দেশটি। বুথফেরত জরিপের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি খবরটি জানিয়েছে।
অভিবাসন ইস্যু ও অর্থনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে উত্তাপপূর্ণ প্রচার-প্রচারণার পর রবিবার (৪ মার্চ) অনুষ্ঠিত হয় ইতালির পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। এরপরই আসতে শুরু বুথফেরত জরিপের ফলাফল। জরিপে দেখা যায়, বেরলুসকোনির মধ্য ডানপন্থী জোট ২২৫-২৬৫টি আসনে জয় পাবে। তবে তা প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে কম। ইতালির আইন অনুযায়ী, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে কোনও দল বা জোটকে ৩১৬টি আসনে জয় পেতে হবে।
বুথফেরত জরিপে দেখা গেছে, এন্টি এস্টাবলিশমেন্টের দল ফাইভ স্টার মুভমেন্ট দ্বিতীয় স্থানে আছে। তবে একক দল হিসেবে এর প্রাপ্তির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দলটি ১৯৫-২৩৫টি আসনে জয় পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৩০ শতাংশ ভোট নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে তারা। অবশ্য, ইতালির পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোতে মাঝে মাঝে বুথফেরত জরিপের ফলাফল ভুল প্রমাণিত হতে দেখা গেছে। তাই চূড়ান্ত ফলাফলের আগে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। সোমবার নাগাদ আনুষ্ঠানিক ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইতালির নতুন ইলেক্টোরাল আইনে এটিই প্রথম নির্বাচন। এই আইনে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ সমর্থন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। তবে অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ফাইভ স্টার কোনও দলের সঙ্গে জোট গঠন করেনি। একক দল হিসেবে ফাইভ স্টার এগিয়ে থাকলেও জোট গঠন না করলে তাদেরও সরকার গঠন করার সম্ভাবনা কম। মধ্যম-ডানপন্থি জোটকে নির্বাচনের সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তবে এ জোটও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বলে আভাস রয়েছে। তাই তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সঙ্গে জোট গড়তে হবে। কিন্তু সব দলের নেতাই এরইমধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সঙ্গে জোট গঠনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। সেদিক থেকে যদি কোনও দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত না করতে পারে তবে সরকার গঠন নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। আগামী ২৩ মার্চ নতুন পার্লামেন্ট অধিবেশন না বসা পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট সেরজিও মাটারেলা আনুষ্ঠানিকভাবে জোট সংক্রান্ত কোনও আলোচনা শুরু করতে পারবেন না। আর পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব গ্রহণের আগে পার্লামেন্টের দুই কক্ষেই আস্থা ভোটে জয় পেতে হবে।
এবারের নির্বাচনি প্রচারণায় প্রাধান্য পেয়েছে অভিবাসী ও অর্থনীতির ইস্যু। ২০১৩ সাল থেকে অবৈধ পথে পাড়ি দিয়ে ৬ লাখ অভিবাসী ইতালিতে পৌঁছেছে। অনেক ইতালীয় নাগরিকের কাছে বিষয়টি মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। আর রাজনীতিবিদরাও সেই ইস্যুটিকে নির্বাচনি প্রচারণায় কাজে লাগাতে চেয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনির মধ্য ডানপন্থী দল ফোরজা ইটালিয়া আরও দুটি দলের সঙ্গে জোট গড়েছে। ডানপন্থীদের এবারের প্রচারণার মূল বিষয় ছিল, ৬ লাখ ‘অনিয়মিত' অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানা। অবৈধ অভিবাসীদের উপস্থিতিকে ‘সামাজিক টাইমবোমা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন বেরলুসকোনি। এছাড়া কর কমানোর বিষয়েও প্রচারণা চালিয়েছে তারা। প্রচারণা চলাকালে উগ্র ডানপন্থী সমর্থকদের সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হতেও দেখা গেছে।
কর জালিয়াতির অভিযোগ থাকার কারণে আগামী বছর পর্যন্ত সরকারি দফতরের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না ৮১ বছর বয়সী বেরলুসকোনি। তবে চারবারের এই প্রধানমন্ত্রী দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও তাজানিকে সমর্থন দিয়েছেন।