X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধাপে ধাপে যেভাবে নির্মিত হচ্ছে ‘রোহিঙ্গাশূন্য রাখাইন’

বাধন অধিকারী
১৭ মার্চ ২০১৮, ১৪:৩৮আপডেট : ১৮ মার্চ ২০১৮, ১১:০৯

অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সামরিক-বৌদ্ধতন্ত্রের প্রচারণায় রাখাইনে ছড়ানো হয়েছে রোহিঙ্গা-বিদ্বেষ। ২০১৬ সালের আগস্টে অভিযান জোরদার করার আগের কয়েক মাসের সেনাপ্রচারণায় সেই বিদ্বেষ জোরালো হয়। এরপর শুরু হয় সেনা-নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণ ও ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের মাধ্যমে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করা হয় ৬ লাখ ৯২ হাজার মানুষকে। পুড়িয়ে দেওয়া রোহিঙ্গা আবাস বুলডোজারে গুড়িয়ে দিয়ে নিশ্চিহ্ন করা হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। এক পর্যায়ে সেনা অভিযান বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলেও অব্যাহত থাকে জাতিগত নিধন। এরপর সামরিকায়নকে জোরালো করতে অবশিষ্ট ঘরবাড়িও নিশ্চিহ্ন করা হয়। ঘোষণা দেওয়া হয় জমি অধিগ্রহণের। শুরু হয় অবকাঠামোসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন। এএফপির শুক্রবারের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেখানে ‘আদর্শ বৌদ্ধ গ্রাম’ গড়ে তোলা হচ্ছে। ওই ফরাসি বার্তা সংস্থার খবর থেকে পাওয়া যায়, রোহিঙ্গাশূন্য বাফারজোন প্রতিষ্ঠা করতে সেখানে বৌদ্ধদের অর্থায়ন ও সেনা মদতে সংস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে প্রত্যাবাসনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। ধাপে ধাপে এইসব কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হচ্ছে সামরিকতায় নির্মিত বৌদ্ধতন্ত্র আর  ‘মিয়ানমার ন্যারেটিভস’ নামের প্রচারণা কৌশল ব্যবহার করে।

ধাপে ধাপে যেভাবে নির্মিত হচ্ছে ‘রোহিঙ্গাশূন্য রাখাইন’ গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে  আরসার হামলাকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের কারণ বলা হলেও জাতিসংঘের এক  প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে এবং তাদের ফেরার সব পথ বন্ধ করতে আরসার হামলার আগে থেকেই রোহিঙ্গাবিদ্বেষী প্রচারণার মধ্য দিয়ে পরিকল্পিত সেনা-অভিযান শুরু হয়েছিল। সেখানকার শরণার্থী শিবিরে সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনও নিশ্চিত হয়, রাখাইনে সেনাবাহিনীর তাণ্ডব শুরু হয়েছিল ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা চেকপোস্টে হামলার অন্তত ৩ সপ্তাহ আগে থেকে। আর তারও আগে শুরু হয়েছিল গ্রামে গ্রামে সেনা প্রচারণা। অ্যামনেস্টির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনেও ‘রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের সামরিক প্রচারণা’কে সেখানকার সংকটের জন্য দায়ী করা হয়েছে। রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সম্ভাব্য গণহত্যা তদন্তে নিয়োজিত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিদ্বেষী প্রচারণায় ফেসবুক ভয়াবহ ভূমিকা রেখেছে।

বিদ্বেষী প্রচারণার মধ্য দিয়ে রাখাইনের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেখানকার রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষের ঘৃণার চাষাবাদ হয়েছে দীর্ঘদিন। বিদ্বেষের শেকড় তাই দিনকে দিন আরও  শক্ত হয়েছে।  ফেব্রুয়ারিতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোহিঙ্গা অ্যাকটিভিস্ট মং জারনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদেরকে সমূলে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর  ১৯৭৮ থেকে প্রায় ৪০ বছর ধরেই এই নিধনযজ্ঞ চলছে।’ সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে বিদ্বেষ বাড়িয়ে ২৫ আগস্টের হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। গুলি করে পালাতে বাধ্য করা, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া, মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ, শিশু সন্তানকে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে আগুনে ছোড়ার মতো ঘটনার বিবরণও তুলে আনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সংবাদমাধ্যম। এক পর্যায়ে নিধন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে প্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ লাখ ৯২ হাজারে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতি সরকারি ও আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থাগুলোর পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে জানায়, রাখাইনে বসবাসরত তিনটি শহরের ৭ লাখ ৬৭ হাজার রোহিঙ্গার (২০১৬ সালের পরিসংখ্যান) অন্তত ৯০ শতাংশকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে, বড়জোর ৭৯ রোহিঙ্গা সে দেশে রয়েছে। চলতি মাসের শুরুতেও ডক্টর্স উইদাউথ বর্ডার্স-এর জরুরি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমন্বয়ক কেট নোলার জানিয়েছেন, আগের মতো বিশাল সংখ্যায় রোহিঙ্গাদের ঢল না নামলেও এখনও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। উগ্র বৌদ্ধবাদকে ব্যবহার করে সেখানকার সেনাবাহিনী ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে স্থাপন করেছে সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাসের চিহ্ন। ছড়িয়েছে বিদ্বেষ। ৮২-তে প্রণীত নাগরিকত্ব আইনে পরিচয়হীনতার কাল শুরু হয় রোহিঙ্গাদের। এরপর কখনও মলিন হয়ে যাওয়া কোনও নিবন্ধনপত্র, কখনও নীলচে সবুজ রঙের রশিদ, কখনও ভোটার স্বীকৃতির হোয়াইট কার্ড, কখনও আবার ‘ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড’ কিংবা এনভিসি নামের রং-বেরঙের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষকে। ধাপে ধাপে মলিন হয়েছে তাদের পরিচয়। ক্রমশ তাদের রূপান্তরিত করা হয়েছে রাষ্ট্রহীন বেনাগরিকে।

জানুয়ারিতে সম্পাদিত ঢাকা-নেপিদো প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের পাঠানো প্রথম ৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা নিয়েই শুরু হয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। এর ফরম্যাট বদল করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। পালিয়ে আসা প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ৩৭৪ জনকে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অপরিহার্য শর্ত হিসেবে চাওয়া হয়েছে বৈধ কাগজপত্র। অথচ বেশিরভাগ রোহিঙ্গা পুড়ে যাওয়া সম্বল ফেলে পালিয়ে এসেছে।  হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রত্যাবাসন চুক্তিকে মিয়ানমারের ধোঁকাবাজি আখ্যা দিয়েছে। জার্নি বলেন, ফিরে যাওয়া কোনও সমাধান নয়। যদি সেনাবাহিনী বা সু চি ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলে সেটা শুধুই আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করার জন্য।

ধাপে ধাপে যেভাবে নির্মিত হচ্ছে ‘রোহিঙ্গাশূন্য রাখাইন’

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভিযান বন্ধের ঘোষণা দিয়ে আগস্টে আবারও ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের (শুদ্ধি অভিযান) ঘোষণা দেয় মিয়ানমার। রিগনভিত্তিক মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ইউরো এশিয়া রিভিউ চলতি বছর মার্চের শুরুতে জানায়,   ২০১৭ সালে শেষ থেকে মিয়ানমার সরকার ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কমপক্ষে ৪৫৫টি গ্রামের সব অবকাঠামো ও ফসলের ক্ষেত ধ্বংস করে দিয়েছে। জানুয়ারিতে অ্যামনেস্টির সবশেষ গবেষণায় রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বহু  গ্রাম জ্বালিয়ে ও  বুলডোজারে  গুড়িয়ে দেওয়ার আলামত উঠে এসেছিল। ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অর্ধশতাধিক গ্রাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি করে মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস। বলা হচ্ছিল, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক বাহিনীর নিধনযজ্ঞ আড়াল করতেই গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালানো হচ্ছে। মার্চের শুরুতে নতুন করে অ্যামনেস্টির দেওয়া বিবৃতি থেকে অন্তত  ৩টি সামরিক ঘাঁটি ও রাস্তাঘাট নির্মাণ চলমান থাকার কথা জানা যায়।

সবশেষ এএফপির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রাখাইন বৌদ্ধদের জন্য ‘আদর্শ বৌদ্ধ গ্রাম’ নির্মাণের কথা। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৌদ্ধদের অর্থায়নে এবং সেনা মদদে বেসরকারি প্রকল্প পরিচালনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাশূন্য রাখাইন গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। সিআরআর নামে পরিচিত  ‘অ্যান্সিলারি কমিটি ফর দ্যা রিকন্সট্রাকশন অফ  রাখাইন ন্যাশনাল টেরিটোরি ইন দ্যা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার’ তেমনই এক প্রকল্প। প্রকল্পটি রাখাইন নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের টাকায় চলছে। এএফপি বলছে, সেনাবাহিনীর মদদ ছাড়া এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ওই প্রকল্পের উপদেষ্টাদের একজন  রাখাইনের আইনপ্রণেতা উ হ্লা সঅ বলেছেন, সিআরআরের উদ্দেশ্য, রাজ্যের রাজধানী সিতউয়ে থেকে শুরু করে মংডু শহর পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার দৈর্ঘের একটি রোহিঙ্গাশূন্য ‘বাফার জোন’ প্রতিষ্ঠা করা। এএফপিকে তিনি বলেছেন, ‘এই পুরো এলাকা রোহিঙ্গাদের প্রভাবাধীন ছিল। সেনাবাহিনীর অভিযানের পর তাদেরকে পালাতে হয়েছে...তাই এই এলাকায় আমরা রাখাইন বসতি স্থাপন করছি।’

এএফপি বলছে, পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ভূমির দখল নেওয়া রাখাইনের একটি পুরনো কৌশল। ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ শত্রু: বৌদ্ধ সহিংসতা ও মুসলিমদের অপর বানানো’ শীর্ষক বইতে  রচয়িতা ফ্রান্সিস ওয়েড দেখিয়েছেন ২০১২ সালে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু হলেও বর্ণবাদী কালার (কৃষ্ণাঙ্গ অর্থে ব্যবহৃত) শব্দে বাঙালি সন্ত্রাসী হিসেবে তাদের পরিচয় নির্মাণের এক সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রাখাইনদের থেকে পৃথক আকারে হাজির করার প্রক্রিয়া দৃঢ় হয়। ওয়েডের বইয়ের কেন্দ্রীয় আলোচ্য সামরিকতায় নির্মিত বৌদ্ধতন্ত্র, ১৯৬২ সাল থেকে যা রাখাইন প্রদেশকে যা এককভাবে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের আবাস হিসেবে নির্মাণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বইতে ওয়েড লিখেছেন, ‘খুবই ভয়ঙ্কর কায়দায় পরিচয়ের ধারণা এবং অস্তিত্বকে বিকৃত করার চেষ্টা হয়েছে। জীবনের কেন্দ্রীয় বিবেচনায় ঢুকে পড়েছে সেনাবাহিনী। সবই হয়েছে নতুন ধারার মিয়ানমার গড়তে।’

 রাখাইনের সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ আখ্যা দিয়েছে। তবে এইসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার। অপরাধ অস্বীকার করার ধারাবাহিকতায় নির্মিত হতে থাকে মিয়ানমার ন্যারোটিভস। সরকার ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রথম জোরালো পাল্টা প্রচারণা হাজির হয় হিন্দু মরদেহকে সামনে এনে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে পরপর দুই দিনে দুই দফায় হিন্দু গণকবরের সন্ধান পাওয়ার মিথ্যে প্রচারণা চালিয়ে সরকার দাবি করে, মুসলিম বিদ্রোহীরা এই হিন্দুদের হত্যা করেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সংঘাতের মাঝখানে পড়ে যাওয়া নিহত হিন্দুদের মরদেহ এখন প্রচারণার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, কয়েক দিন চলে গেলেও সেগুলোর সৎকার করা হয়নি। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা রয়টার্সকে জানায়, তাদেরকে বলে দেওয়া হয়েছে মিথ্যে বলতে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মিয়ানমারের এই ভূমিকাকে ‘মরদেহের রাজনীতি’ আখ্যা দেয়।

১১ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্ট মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক উত্তরণ বিষয়ক এক  আলোচনায় মিয়ানমার টাইমস-এর সম্পাদক ও নির্বাহী পরিচালক কাভি চংকির্তাভন বলেন, ‘সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো মিয়ানমার সংক্রান্ত ইতিবাচক বয়ান নির্মাণ করা। আপনি অং সান সু চির মন্তব্য পড়েন, কিংবা নিউ লাইট অব মিয়ানমার পড়েন কিংবা যাই পড়ছেন, তার সবকিছুই আসছে সরকারের পক্ষ থেকে। এই সরকার মিয়ানমারের ইতিবাচক ভাবমূর্তি নির্মাণ করতে চায়, যা একেবারেই অনুপস্থিত। ’ ইতিবাচক ভাবমূর্তি অর্জনের অংশ হিসেবেই মিয়ানমার অস্বীকার করে নিধন আর গণহত্যার অভিযোগ। উল্টো প্রমাণ দাবি করে জাতিসংঘের কাছে। ৯০ ভাগ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসার পরও মিয়ানমার দাবি করে, অধিকাংশ রোহিঙ্গাই রাখাইনে থেকে গেছে। অপরাধের আলামত নিশ্চিহ্ন করতে বুলডোজারে গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে তারা বলতে চায় সেখানে নতুন করে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছে। ‘যা দরকার, তা হলো বিপুল সংখ্যক মানুষের একই জিনিস বিশ্বাস করা।’ মন্তব্য কাভি চংকির্তাভনের।

‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ শত্রু: বৌদ্ধ সহিংসতা ও মুসলিমদের অপর বানানো’ শীর্ষক বইয়ের রচয়িতা ফ্রান্সিস ওয়েড এএফপিকে বলেন, বৌদ্ধ সম্প্রদায় এখানে আসার ফলে কার্যত মুসলিমদের ভূমির অধিকার পর্যায়ক্রমে মুছে যাচ্ছে। আগামী বছরগুলোতে আরও  বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর আবাস এখানে দেখতে পাবো। আর  তখন আমরা ভুলে যাবো একসময় এই এলাকা আসলে কী ছিল। আর  এই  প্রক্রিয়াতেই রোহিঙ্গাদের চিহ্ন মুছে ফেলার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

/টিএন/
সম্পর্কিত
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
উখিয়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গা যুবককে কুপিয়ে হত্যা
কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ভোটারদের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
সর্বশেষ খবর
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মীনা বাজার এখন মিরপুর-১২ নম্বরে
মীনা বাজার এখন মিরপুর-১২ নম্বরে
কুবিতে উপাচার্য-ট্রেজারার-প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, ৩ দফতরে তালা
কুবিতে উপাচার্য-ট্রেজারার-প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, ৩ দফতরে তালা
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা