X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

যে সত্য লুকিয়ে আছে ওবামা-মিশেলের প্রতিকৃতিতে

বাধন অধিকারী ও জাহিদুল ইসলাম জন
১৭ মার্চ ২০১৮, ১৭:৩৯আপডেট : ১৮ মার্চ ২০১৮, ০১:৩২
image

ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক ন্যাশনাল পোট্রেট গ্যালারিতে স্থান করে নিয়েছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার প্রতিকৃতি। প্রথমবারের মতো কোনও কৃষ্ণাঙ্গ (আফ্রিকান আমেরিকান) প্রেসিডেন্ট আর ফার্স্ট লেডি ওই গ্যালারিতে স্থান পেলেন। প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির প্রতিকৃতির দুই চিত্রকরও আফ্রিকান আমেরিকান। পোট্রেট গ্যালারিতে প্রথম দুই কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পী হিসেবে যুক্ত হলেন তারাও। প্রেসিডেন্ট আর ফার্স্টলেডির প্রতিকৃতির ক্যানভাসে গভীর রাজনৈতিক চৈতন্যের আঁচড় ফেলেছন ওই দুই শিল্পী। নিছক চেহারার সমিল নয়, রঙ তুলিতে তারা এঁকেছেন বর্ণবাদের রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ। দুই প্রতিকৃতির গভীরে গিয়ে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে আমেরিকার প্রতিরোধী ইতিহাসের এক অনালোচিত সত্যকে।
নিজেদের প্রতিকৃতির সামনে ওবামা মিশেল

দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থেকেও মার্কিন সমাজের গভীরে লুকিয়ে থাকা কুৎসিত বর্ণবাদী বৈষম্য থেকে দেশকে মুক্ত করতে সক্ষম হননি প্রেসিডেন্ট ওবামা। তবে শেকড়ের আফ্রিকান চৈতন্য থেকে বিচ্যুতও হননি কখনও। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারোলিনার চার্লসটনের কৃষ্ণাঙ্গ গির্জায় শ্বেতাঙ্গ বন্দুকধারীর হামলার পর  মার্কিন কৌতুকাভিনেতা মার্ক ম্যারনের জনপ্রিয় শো ‘ডব্লিউটিএফ’তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওবামা মন্তব্য করেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনও বর্ণবাদের অভিশাপমুক্ত হতে পারেনি। এর রন্ধ্রে রন্ধ্রে বর্ণবাদ এখনও দৃঢ়ভাবে গেঁথে আছে। ২০১৬ সালে জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় না দাঁড়িয়ে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী এক মার্কিন ক্রীড়াবিদের পক্ষে দাঁড়িয়ে ওবামা বলেছিলেন, বৈধ বিষয়ে প্রতিবাদ করা তার (কলিন) সাংবিধানিক অধিকার। একই বছরে পোল্যান্ডের ন্যাটো সম্মেলনে ‘ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটার্স’ মুভমেন্টের প্রতি পরোক্ষ সংহতি ধ্বনিত হয় তার কণ্ঠে। বলেন, ‘কালোদেরও জীবন আছে মানে এই নয় যে আরসব রঙের মানুষের জীবন নেই’।  ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তার বিদায়ী ভাষণে মার্কিন গণতন্ত্রের জন্য যে তিনটি হুমিকর কথা বলেন, তার একটি বর্ণবাদ। ‘ব্লাডি সানডে’র (১৯৭২ সালে ভোটাধিকারের দাবিতে আফ্রিকান-আমেরিকানদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালিয়ে শত শত কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যা করে মার্কিন সেনাবাহিনী। দিনটিকে ব্ল্যাডি সান ডে নামে ডাকা হয়।) এক অনুষ্ঠানে তিনি স্পষ্ট করে আমেরিকান ইতিহাসের নির্মাণে কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের ভূমিকাকে সামনে এনে বলেছিলেন, ‘আমরাই সেই দাস, যারা হোয়াইট হাউস নির্মাণ করেছি’। ওবামার প্রতিকৃতির শিল্পী কেনডি উইলি তাকে একজন আত্মপ্রত্যয়ী আমলা হিসেবে নয়, এঁকেছেন একজন বিধ্বস্ত চিন্তক হিসেবে।

ওবামার প্রতিকৃতি

জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনার অধীনে পোট্রেট গ্যালারির ছবিগুলো যেন বর্ণবাদেরই আখ্যান। ওবামার পূর্বসূরী জর্জ ওয়াশিংটন, টমাস জেফারসন সেখানে রয়েছেন ক্রীতদাস-মালিক হিসেবে। ওবামার দাদা কিংবা তার দাদারাই ছিল সেই দাস। বলতে দ্বিধা করা উচিত নয়, সেই বাস্তবতা অনেকখানিই বদলে গেছে। আজকের যুগে কালোদের নাগরিক অধিকারের প্রশ্ন, তাদের সামাজিক অর্জনগুলো চোখে পড়ার মতো। আর এই সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের কাতারে ওবামার ছবিটি এক বিশেষ জায়গা অধিকার করে নিয়েছে।

ওবামা যেমন, তার পোট্রোট-এর আঁকিয়েও তেমনই হাই প্রোফাইল। উইলির জন্ম ১৯৭৭ সালে, ২০০০ সালে তিনি শিল্পী হিসেবে খ্যাত হতে শুরু করেন। হিপ-হপ পোশাকের তরুণ আফ্রিকান আমেরিকানের এক ঝকঝকে তকতকে ছবি এঁকেছেন তিনি, তবে সেইসব ছবির মুখে ছিল ইউরোপীয় অভিজাতদের আদল। ব্রাজিল, ভারত, নাইজেরিয়া, সেনেগালের মানুষদের মুখ এঁকেছেন তিনি বৈশ্বিক কৃষ্ণাঙ্গ আভিজাত্যের ছাপ রেখে।
৭ ফুট লম্বা প্রতিকৃতিতে উইলি ওবামাকে কালো প্যান্ট আর সাদা শার্ট পড়া অবস্থায় এঁকেছেন। এইটুকু ব্যাপার স্টুয়ার্টের আঁকা ওয়াশিংটনের প্রতিকৃতির থেকে আলাদা কিছু নয়। পুরনো ছবির ক্যানভাসই প্রতিচিত্রিত হয়েছে তার প্রতিকৃতিতে। তবে ইতিহাসের গতিধারা থেমে যায় ওবামার অবয়বগত পার্থক্যে। পূর্ববর্তীদের যেখানে নির্বিকার হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, ওবামা সেখানে চিত্রিত হয়েছেন একজন উদ্বিগ্ন মানুষ হিসেবে। তার ভুরু কোচকানো, হাঁটুতে কনুই রাখা, এক হাতের ওপর আরেক হাত কোণাকুণিভাবে রাখা। যেন তিনি মন দিয়ে কিছু শুনছেন। মুখে কোনও হাসি নেই। কোনও ভালোমানুষি ভাব নেই। যেন এখনও তিনি বিপুল সংকটের মধ্যে রয়েছেন। যেন এক নিরন্তর সংগ্রামী চৈতন্যের মানুষ।

যে সত্য লুকিয়ে আছে ওবামা-মিশেলের প্রতিকৃতিতে

প্রতিকৃতিতে ওবামার চিন্তামত্ত আর আত্মপ্রত্যয়ী আদলের একটা দ্বন্দ্ব খেলা করে, তবে অবয়বগত পরিসরে তা খুবই মানিয়ে যায়। প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকাকালেও ওবামা মাঝে মাঝেই আনমোনা হয়ে যেতেন। উদাসীন হয়ে যেতেন চারপাশ নিয়ে। আসলে সব প্রতিকৃতিই রাজনৈতিক, সবই প্রচারণার এক বিশেষ আঙ্গিক। ওবামার প্রতিকৃতি স্বাতন্ত্র্য পেয়েছে এর ব্যক্তিক পরিসরে। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে আফ্রিকান শাপলা কেনিয়াকে উপস্থাপন করে। এই কেনিয়া ওবামার বাবার জন্মস্থান। জেসমিনে প্রতিভাত হয় হাওয়াই, যেখনে ওবামা নিজে জন্মেছেন। আর চন্দ্রমল্লিকা শিকাগো অঙ্গরাজ্যের দাফতরিক ফুল। এই শিকাগোতেই ওবামার রাজনৈতিক চৈতন্যের বিকাশ। এখানেই তিনি দেখা পেয়েছিলেন মিশেলের।

ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাও মার্কিন সমাজের ইতিহাস নির্মাণের কৃষ্ণাঙ্গ ইতিহাসকে সামনে এনেছিলেন একাধিকবার। ২০১৬ সালের জুনে নিউ ইয়র্কের সিটি কলেজে দেওয়া এক বক্তৃতায় হোয়াইট হাউস নির্মাণের নেপথ্যে দাসদের ভূমিকার কথা সামনে এনেছিলেন মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা। 'হোয়াইট হাউসে যে কৃষ্ণাঙ্গ একজন প্রেসিডেন্ট, তার কৃষ্ণাঙ্গ স্ত্রী-সন্তান মিলে রয়েছেন, তা মার্কিন সমাজের পূর্বসূরীরা কল্পনাও করতে পারবেন না। সব তাদের সংগ্রামেরই ফলাফল। তাদের ভূমিকা স্বীকার করার মধ্য দিয়েই আমাদের নিজেদের স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়।’ জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে চলমান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ন্যাশনাল কনভেনশনে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, `এই দেশের গল্পই বলছি আপনাদের। সেই গল্প, যার কারণে আজকের এই রাতে আপনারা এই মঞ্চে আমাকে দেখছেন ফার্স্ট লেডির ভূমিকায়। গল্পটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত মার্কিন জনগোষ্ঠীর দাসত্বের কষাঘাত সম্পর্কিত অজানা ইতিহাসের। দাসত্ব থেকে জন্ম নেওয়া অধঃস্তনতার লজ্জার গল্প বলছি আমি। বলছি, মানুষে মানুষে পরস্পর-বিচ্ছিন্নতার হুল থেকে জন্ম নেওয়া এক গল্প। তবে সংগ্রাম, আশা আর তৎপরতার মধ্য দিয়ে সেই ইতিবাচকতা অর্জিত হয়েছে যা হওয়া উচিত। সেই অগ্রগতি আর প্রগতির কারণেই কৃঙ্গাঙ্গ হয়েও আমি প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ হিসেবে এমন একটা বাড়িতে প্রতিদিন ঘুম থেকে জাগছি, যেটি দাসদের তৈরি। আমি দেখছি, দাসদের তৈরি করা সেই বাড়িতে, সেই হোয়াইট হাউসের লনে কুকুরের সঙ্গে খেলা করছে দু’জন সুন্দর-বুদ্ধিমতী কালো মেয়ে।’ সেই মিশেলকে এঁকেছেন অ্যামি শেরাল্ড।


মিশেলের প্রতিকৃতি

শেরাল্ডের জন্ম জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের কলম্বাস শহরে। থাকেন বালটিমোরে। নিজের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের পাশাপাশি গোটা পরিবারের শারীরিক রোগ-বালাইয়ের মধ্যেই ছিলেন তিনি। সেই সব ভয়াবহতা থেকে বের হয়েই তিনি মিশেলের প্রতিকৃতি এঁকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকের সঙ্গে নিজের নাম জড়িয়ে নিতে সক্ষম হলেন।

১২ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল প্রোট্রেট গ্যালারিতে মিশেল ওবামার প্রতিকৃতির পর্দা উন্মোচনের অনুষ্ঠানে শেরাল্ড বলেন, বিমূর্ত ধাঁচের পোশাকটি তাকে ডাচ শিল্পী পিয়েট মনড্রিয়ানের জ্যামিতিক চিত্রগুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। মিশেলের পোশাক নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মিলির নকশাকৃত এই পোশাকের নেপথ্যে রয়েছে আলাবামা অঙ্গরাজ্যের পশ্চাদপদ জি’স বেন্ড জনগোষ্ঠীর তৈরি করা বিশেষ এক ধরনের কাপড়ের অনুপ্রেরণা। আফ্রিকান আমেরিকান জনগোষ্ঠীর ওই বিশেষ ধারার পোশাক কুইল্ট নামে পরিচিত। কুইল্টে ভিন্ন ভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতির রঙিন ছাপ থাকে। পুর্নব্যবহার্য তুলা দিয়ে প্রায়শই পানির প্রবাহ ও বিদ্যুৎ ছাড়াই তৈরি এসব কাপড়ের নকশা বিমূর্ত। কখনও কখনও অসমান। নিয়মিত জ্যামিতিক কোন আকৃতি নেই এর। সবমিলে এটি শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান ঐতিহ্যগত পোশাকের সঙ্গে বৈপ্যরীত্য সৃষ্টি করে।  মিশেলের পোশাকের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। ২০১৭ সালের বসন্ত-গ্রীষ্মের কালেকশন হিসেবে মিলি এই গাউনটি ডিজাইন করেন। গলার ওপরের টপটি তার বহুল পরিচিত বাহু উন্মুক্ত করে দেয়। পকেট আর ফিতা ছাড়া নরম তুলার মাটি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া স্কার্টটি ফাস্ট লেডির আভিজাত্য ও নাটকীয়তা ফুটিয়ে তোলে। কৃষ্ণাঙ্গ ঐতিহ্যের ওই কুইল্টের রঙিন ছাপগুলো মিশেলের স্বতন্ত্র স্টাইলে তার দেশপ্রেম, একটিভিজম, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার কথাই বলছে।

প্রথমত, যারা অ্যামি শেরাল্ডের কাজের সঙ্গে পরিচয় আছে তারা সাবেক ফার্স্ট লেডির সঙ্গে ছবির চেহারার অসামঞ্জস্য তাদের জন্য বিস্ময় তৈরি করতে পারেনি। বাল্টিমোরভিত্তিক এই শিল্পী আফ্রিকান-আমেরিকান নারীদের ছবির জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছেন। এসব ছবি ঐতিহ্যগত অর্থে সত্যিকার আফ্রিকান-আমেরিকান নারীদের ছবি ছিল না। মিস এভরিথিং, দ্য মেক বিলিভার এর মতো শিল্পানুগ নামের বিচিত্র বিষয়বস্ত নিয়ে আঁকা সেসব ছবিতে ধূসর ত্বকের বিপরীতে রঙিন কাপড় ও এক রঙের ব্যাকগ্রাউন্ডের ব্যবহার ফৃটে উঠেছে। নিরপেক্ষ রঙের পাত্র জাতিগত ছককে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে, আর সাদামাটা কাজ আমেরিকান লোকশিল্পের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। পর্দা উন্মোচনের সময় শেরাল্ড তার ছবিকে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, মিশেল ওবামার প্রামাণিক প্রতিচ্ছবি বলে মন্তব্য করেন। ইঙ্গিত এমন যেন, তিনি চেহারার সাদৃশ্যের চেয়ে বেশি কিছু করতে চেয়েছেন।

প্রতিকৃতির সামনে ওবামা-মিশেল  ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের শেষ ছবিগুলোর জন্যও মিলিকে বেছে নিয়েছিলেন ওবামা। সিঁড়ির ওপরে কুকুরদের সঙ্গে নিয়ে কালো ট্রাউজার আর মিলির সাদা-কালো ডোরাকাটা স্লিভলেস পোশাকে হাজির হয়েছিলেন তিনি। পেছনের দিকে দৃষ্টি ফেরালে দেখা যাবে আমেরিকান নকশা আর ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকা পোশাক ছিল পছন্দের তালিকায়। তবে মেলানিয়া ট্রাম্পের ক্ষেত্রে বিদেশি ফ্যাশন ডিজাইনারের তৈরি ব্যয়বহুল পোশাক পছন্দের বিষয়টি অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে।

ফার্স্ট লেডি হিসেবে মিশেল সবসময়ই নিজের ফ্যাশনে রাজনৈতিকতাকে মেলে ধরেছেন, আর এখনও তা অব্যাহত রেখেছেন। সমালোচকরা যদি পোট্রেট গ্যালারিতে স্থান পাওয়া তার ছবিটি আর ক্যানভাসের দিকে ফিরে তাকান তাহলে একটি ভীষণ রাজনৈতিক বক্তব্যও উপলব্ধি করতে পারবেন।

দ্বিতীয়ত, মিশেলের চেহারা কম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে ওঠার কারণ রয়েছে। সাবেক ফার্স্ট লেডির চেহারার চেয়ে তার গাউনটি তার পরিচয় ভালোভাবে তুলে ধরছে। আর সম্ভত সেটাই সবচেয়ে বেশি ঠিক। গাউনটি বানিয়েছে ডিজাইনার মিশেল স্মিথের প্রতিষ্ঠান মিলি। আমেরিকার ঐতিহ্যের উপাদানে টানা; বিশেষত রঙিন ছকগুলো আলবামার গিস বেন্ডের বিচ্ছিন্ন আফ্রিকান-আমেরিকান সম্প্রদায়ের উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে শুরু করা আধুনিকতার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে। পুর্নব্যবহার্য তুলা দিয়ে প্রায়ই পানির প্রবাহ ও বিদ্যুৎ ছাড়াই তৈরি এসব তোষক বিমূর্ত, অসমান গহঠনের জন্য পরিচিত। নিয়মিত জ্যামিতিক কোন আকৃতি ছাড়াই এটি আমেরিকান ঐতিহ্যগত তোষকের সঙ্গে বৈপ্যরিত্য সৃষ্টি করে। ১৯৬০ এর দশকে পুন আবিষ্কারের পর গিস বেন্ডের তোষক ফিলাডেলফিয়ার মিউজিয়াম অব আর্ট, হুইটনি মিউজিয়াম অব আমেরিকান আর্ট এবং হাউসটনের মিউজিয়াম অব ফাইন আর্টে প্রদর্শিত হচ্ছে।

অনলাইনভিত্তিক হাফিংটন পোস্টে লেখা এক নিবন্ধে ওই সংবাদমাধ্যমের ট্রেন্ড রিপোর্টার জেনা আমাতুল্লি। মিশেলের প্রতিকৃতির আলোচনায় সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিতে চান ফাস্ট লেডির গাউনকে। মিশেলের জন্য গাউনটি বিশেষভাবে বানিয়েছে ব্রান্ড মিলি। আগেও এই ব্রান্ডের পোশাক পরেছেন তিনি। পোশাক ডিজাইনারের এই পছন্দ সম্ভবত প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির ছবিতে ডিটেইলের আড়ালে লুকানো সবচেয়ে আকর্ষণীয় রাজনৈতিক বার্তা পাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

মিশেলের সঙ্গে চিত্রকর অ্যামি শেরাল্ড

হাফিংটনপোস্টকে দেওয়া এক বিবৃতিতে স্মিথ বলেন, মিশেলের আনুষ্ঠানিক পোট্রেট এর জন্য পোশাকের কাজ করতে পারা ছিল নিরেট সম্মানের। তিনি বলেন, আগেও কয়েকটি উপলক্ষ্যে মিশেলের পোশাক বানিয়েছি আমি। তখন ফার্স্ট লেডির মেয়াদে ছিলেন তিনি। আর ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন যে পোশাকে তা বানাতে পেরে আমি সত্যি কৃতজ্ঞ। 

ওবামার প্রতিকৃতি আঁকা উইলির কাজের সঙ্গে শেরাল্ডের কাজের বেশ কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। একটি বহুজাতিক চিত্র কারখানার মালিক তিনি। ওই কারখানায় আঁকার সরঞ্জাম কিনতে পাওয়া যায়। মাত্র কয়েকবছর আগে পর্যন্তও খাবারের টেবিলে কাটতো তার শিল্পী জীবন। পরে তিনি একজন থাকার মতো এক স্টুডিও ভাড়া করেন। দুই শিল্পীর কাজের আবার মিলও রয়েছে। পশ্চিমা শিল্প জগতে প্রায় অদৃশ্য বলেই থাকা আফ্রিকান-আমেরিকান প্রতিকৃতিক জোরালোভাবে সামেন এনেছেন তারা। এবং দুজনেই বাস্তব ও কল্পনার মিশেল ঘটিয়েছেন। (যুগলবন্দি) চিত্র-বাস্তবতায় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদেরকে কল্পিত বীরোচিত ভূমিকায় এঁকেছেন উইলি। (ওবামাকেও তিনি একই জায়গা থেকে এঁকেছেন, তবে এজন্য কল্পিত বাস্তবতা লাগেনি, ওবামার চরিত্রে আপনাআপনি বীরোচিত ভূমিকা আছে। )   শেরাল্ডও কাজ করেন বাস্তবাতাকে উপজীব্য করে। তবে ‘শেরাল্ডের বাস্তবতা’ খানিকটা মৃদু আর বিমূর্র্ত। তার আঁকা প্রতিকৃতির মানুষের গায়ের বাদামী রংয়ের। এর মধ্যম দিয়ে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী একাধিপত্যের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন তিনি।

/বিএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
ট্রাম্পের বিচার চলাকালে আদালতের বাইরে গায়ে আগুন দিলেন এক ব্যক্তি
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
দুই জনপ্রতিনিধির নাম বলে সাভারে সাংবাদিকের ওপর কেমিক্যাল নিক্ষেপ
দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে যা বললেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ
দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে যা বললেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ
গরমে পুড়ছে খুলনা বিভাগ
গরমে পুড়ছে খুলনা বিভাগ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি