X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

অস্থায়ী শিবিরে রোহিঙ্গাদের ‘চিরতরে’ থাকতে হবে না: মিয়ানমারের কর্মকর্তা

বিদেশ ডেস্ক
১৮ মার্চ ২০১৮, ১৩:৪০আপডেট : ১৮ মার্চ ২০১৮, ১৫:৩২
image

মিয়ানমারে নতুন করে নির্মিত আশ্রয় শিবিরগুলো প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের চিরস্থায়ী ঠিকানা হবে না বলে দাবি করেছেন রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইয়ে হটুট। শনিবার (১৭ মার্চ) রাখাইনের উত্তরাঞ্চল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদেরকে ওইসব শিবিরে ‘চিরতরে’ থাকতে হবে না। রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের মূল গ্রাম কিংবা কাছাকাছি এলাকায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন এ কর্মকর্তা। সেনা নির্যাতনে রোহিঙ্গারা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের ফেলে আসা গ্রাম ও জমিজমায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীঘাঁটি তৈরি এবং প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা প্রশ্নে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগ প্রকাশের মধ্যেই এমন দাবি করেন হটুট। তবে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, পুনর্বাসনের একটি এলাকায় গিয়ে তারা দেখেছে কাজ খুব ধীর গতিতে হচ্ছে এবং তা মূল গ্রাম থেকে খুব একটা নিকটবর্তী নয়।

প্রতাবাসিত রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারে ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পালিয়ে আসা বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হলেও তা কার্যকরের বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। প্রত্যাবাসনকৃত রোহিঙ্গাদের জন্য অভ্যর্থনা কেন্দ্র ও ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপন করেছে মিয়ানমার। তবে এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসিত হয়নি। এর মধ্যেই নতুন করে মিয়ানমারে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার আলামত মিলছে। সম্প্রতি মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জমি অধিগ্রহণ করেছে মিয়ানমারের সরকার। বিবৃতিতে বলা হয়, যেসব গ্রাম থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে রোহিঙ্গারা পালিয়ে গেছেন সেসব গ্রামেই ওই রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা জমি ও ভিটেবাড়ির ওপর ঘাঁটি তৈরি করছে সেনাবাহিনী।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, শনিবার রাখাইনের উত্তরাঞ্চল পরিদর্শন করেছেন মংডুর প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইয়ে হটুট। সাংবাদিকদের কাছে তিনি দাবি করেন, সাময়িকভাবে ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখার পর রোহিঙ্গাদেরকে তাদের নিজেদের মূল গ্রামের কাছাকাছি পুনর্বাসিত করা হবে। হটুট বলেন, ‘আমি তাদেরকে ক্যাম্পে চিরতরে থাকতে বলতে পারি না। তাদেরকে সেখানে দীর্ঘদিন রাখার কোনও ইচ্ছে বা পরিকল্পনাও আমাদের নেই। সরকার তাদেরকে নিজ গ্রাম কিংবা গ্রামের নিকটবর্তী জায়গায় ফেরত পাঠাবে।’  

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত হতে যাওয়া একটি পুনর্বাসনের এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে খুব ধীর গতিতে কাজ চলছে। মংডু শহর থেকে গাড়ি চালিয়ে দুই ঘণ্টা সময় লাগে ওই এলাকায় যেতে। আর এ এলাকাকেই রোহিঙ্গাদের মূল গ্রামের নিকটবর্তী এলাকা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। মংডু শহরের প্রশাসক মিন্ত খাইং বলেন, নতুন এলাকায় প্রায় ১০০ পরিবার থাকতে পারবে এবং দুই মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এএফপি’র পক্ষ থেকে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ম্রো-দের জন্য পুনর্বাসনের এলাকা মূল গ্রাম থেকে ৩০ মিনিটের দূরত্বের হলেও রোহিঙ্গাদের জন্য কেন ‌কেই দূরত্বে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। জবাবে তিনি দাবি করেন, যেসব জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে পালিয়ে যায়নি তাদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

জানুয়ারিতে সম্পাদিত ঢাকা-নেপিদো প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশের পাঠানো প্রথম ৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা নিয়েই শুরু হয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। এর ফরম্যাট বদল করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। পালিয়ে আসা প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ৩৭৪ জনকে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অপরিহার্য শর্ত হিসেবে চাওয়া হয়েছে বৈধ কাগজপত্র। অথচ বেশিরভাগ রোহিঙ্গা পুড়ে যাওয়া সম্বল ফেলে পালিয়ে এসেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রত্যাবাসন চুক্তিকে মিয়ানমারের ধোঁকাবাজি আখ্যা দিয়েছে।

প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের জন্য ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপন করছে মিয়ানমার
অ্যামনেস্টি বলছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের বসবাসের অঞ্চলে ‘পরিবর্তন’ আনছে তা নিরাপত্তা বাহিনীর আরও বেশি সদস্য এবং রোহিঙ্গা নয় এমন গ্রামবাসীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা বলে মনে হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গারা যেন ভয় পেয়ে প্রত্যাবাসনে সম্মতি না জানায় সে চেষ্টা চলছে। অ্যামনেস্টির মতে, ‘যেসব রোহিঙ্গা নিরাপত্তা বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ ও মৃত্যুর হাত থেকে পালিয়ে এসেছে তারা সেই একই বাহিনীর এতো কাছাকাছি থাকাকে আশাব্যাঞ্জক মনে করবে না। বিশেষ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহিতার ঘাটতি থাকায় এ শঙ্কা রয়েছে।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সংকট মোকাবিলাবিষয়ক পরিচালক তিরানা হাসান বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীকে বিপুল পরিমাণে জমি দখল করতে দেখা গেছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনকারী সে একই নিরাপত্তা বাহিনী এখন ঘর তৈরির জন্য নতুন ঘাঁটি স্থাপন করেছে। আর তা রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনকে আরও বেশি দুরাশায় পরিণত করে দিচ্ছে। কেবল তাদের বাড়ি-ঘরই নষ্ট হয়নি, বরং নতুন এ নির্মাণ কাজের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে আগে থেকে অমানবিক বৈষম্যের শিকার হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য পুরনো বাস্তবতাকেই সুরক্ষিত করা হচ্ছে।’

/এফইউ/
সম্পর্কিত
তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলে সিরিজ ভূমিকম্প
আবারও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলো উত্তর কোরিয়া
মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি
সর্বশেষ খবর
তীব্র গরমে কৃষিশ্রমিকের সংকট চরমে
তীব্র গরমে কৃষিশ্রমিকের সংকট চরমে
গাজা নিয়ে মার্কিন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় গণগ্রেফতার
গাজা নিয়ে মার্কিন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় গণগ্রেফতার
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মশলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মশলা
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ‘বড় পরিবর্তন’ দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ‘বড় পরিবর্তন’ দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে দুদকের কমিটি