সিরিয়ার আফরিন দখল করলেও সেখানে অবস্থান করবে না তুর্কি সামরিক বাহিনী। তার বদলে এলাকটি ‘প্রকৃত মালিকদের’ কাছে হস্তান্তর করা হবে। তুরস্কের সহকারী প্রধানমন্ত্রী বেকির বোজদাহের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
এর আগে রবিবার তুর্কি সামরিক বাহিনী ও তাদের সিরীয় মিত্ররা আফরিন শহরে প্রবেশ করে এর নিয়ন্ত্রণ নেন। সোমবার তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বেকির বোজদাগ সাংবাদিকদের বলেন, আফরিন শহর দখল করার মাধ্যমে তুরস্ক তার সীমান্তের হুমকি কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কুর্দি বাহিনীকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ অস্ত্রই উদ্ধার করেছে তুর্কি বাহিনী। ওয়াইপিজি এসব অস্ত্র ফেলেই আফরিন থেকে পালিয়েছে।
২০ জানুয়ারি কুর্দি পিপল’স প্রটেকশন ইউনিটস (ওয়াইপিজি)-এর নিয়ন্ত্রণাধীন আফরিনে সামরিক অভিযান শুরু করে তুরস্ক। তুর্কিদের কাছে ওয়াইপিজি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং তুরস্কে নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) শাখা বলে পরিচিত। তুরস্কের অভিযানের লক্ষ্য ছিল, আফরিন থেকে কুর্দিদের উৎখাত করা। শহরটি দখল তুর্কিদের বড় ধরনের সাফল্য। এর ফলে উত্তর সিরিয়ার সঙ্গে তুরস্কের যে সীমান্ত রয়েছে সেখানে দেশটির নিয়ন্ত্রণ আরও সুসংহত হয়েছে। এর আগ থেকেই তুরস্ক এ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সহযোগিতা করে আসছে।
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের রফিক হারিরি সেন্টারের অ্যারন স্টেইন বলেন, তুর্কিরা জয় পিপাসু। তারা সব সময় জয়ী হতে চায়। তারা সিরিয়ার আরেকটি ভূখণ্ড দখল করেছে এবং তারা অঞ্চলটিকে তুর্কি শাসন কাঠামোয় নিয়ে আসবে। স্টেইন মনে করেন, সিরীয় ভূখণ্ড জয়ের ফলে তুরস্ক সিরীয় শরণার্থীদের সেখানে পাঠাতে পারে।
সিরিয়ার সাত বছরের গৃহযুদ্ধে সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। গৃহহারা হয়েছেন দেশটির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ত্রিশ লাখ সিরীয়। সেন্টার ফর নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির নিরাপত্তা গবেষক নিকোলাস হেরাস জানান, আফরিন দখল তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের জন্য একটি সাফল্য। যিনি এই সামরিক অভিযান নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ছিলেন। নিকোলাস বলেন, উত্তরপূর্ব সিরিয়ায় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা আফরিন। এই ভূখণ্ডটি আগামী দিনে এ অঞ্চলে তুর্কিদের উপস্থিতির ঘাঁটি হবে।
আফরিন দখলের মধ্যেই তুরস্কের অভিযান শেষ হয়ে যাবে না। এরদোয়ান আগেই বারবার বলেছেন, আফরিন দখল করেই তুর্কিরা ক্ষান্ত হবে না। ইরাক সীমান্তের কাছে ওয়াইপিজি নিয়ন্ত্রিত আরেকটি শহরের দিকেও এগিয়ে যাবে তুর্কি বাহিনী।