X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ কি রিফিউজি কম্প্যাক্ট অনুসরণ করবে?

বিদেশ ডেস্ক
২০ মার্চ ২০১৮, ১৫:৫১আপডেট : ২০ মার্চ ২০১৮, ১৮:৫৬
image

নিপীড়িত হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং তাদেরকে আশ্রয়দানকারী দেশের দুর্ভোগ লাঘবে টেকসই সমাধান খুঁজছে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংগঠনগুলো। দীর্ঘমেয়াদে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চলার সময় রোহিঙ্গারা যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়, তাদের জীবন-মানের উন্নয়ন হয় এবং তারা যেন আশ্রয়দাতা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে; সে প্রশ্নটি মাথায় রেখে পরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে আলোচনায় আসছে ‘দ্য রিফিউজি কম্প্যাক্ট মডেল’ অনুসরণের কথা। সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট-এর শরণার্থী, বাস্তুচ্যুতি ও মানবিকতা নীতিবিষয়ক সহ-পরিচালক কিন্ডি হুয়াং বাংলাদেশে কম্প্যাক্টটি অনুসরণের সম্ভাব্যতা নিয়ে গবেষণা করবেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করতে আগামী মে মাসে তার দলটির ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।      

কক্সবাজারে ঘুড়ি উড়াচ্ছেন এক রোহিঙ্গা নারী
কম্প্যাক্ট হলো এক ধরনের চুক্তি। ‘দ্য রিফিউজি কম্প্যাক্ট মডেল’ জর্ডান, লেবানন ও ইথিওপিয়ায় পরীক্ষা করা হচ্ছে। আলাদা আলাদা মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রকল্পগুলোকে এক জায়গায় করা এবং শিক্ষা ও জীবন-মানের উন্নয়নের লক্ষ্যে এ মডেলটি তৈরি করা হয়েছে। এর আওতায় আশ্রয়দাতা দেশগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়াসহ আর্থিক প্রণোদনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। দ্য রিফিউজি কম্প্যাক্ট মডেল-এর আওতায় বছরে বছরে অনির্দিষ্ট পরিমাণ তহবিল বরাদ্দের পরিবর্তে কয়েক বছরের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ তহবিল বরাদ্দের অঙ্গীকার করা হয়। তাৎক্ষণিক মৌলিক চাহিদা পূরণের পরিবর্তে এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং তা অর্জনে নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা হয়। জাতীয় নেতৃত্ব ও উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে এখানে আন্তর্জাতিক সহায়তার সমন্বয় ঘটানো হয়। আশ্রয়দাতা দেশকে দেওয়া হয় প্রণোদনা।  

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হলেও তা কার্যকরের বিষয়টি এখনও স্থবির হয়ে আছে। সহসা এ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কোনও আলামত এখনও দেখা যায়নি। গত বছর আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত কেবল ৩৮৮ জনকে ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়া চালু রাখার কথা জানিয়েছে মিয়ানমার। এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কল্যাণে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট-এর শরণার্থী, বাস্তুচ্যুতি ও মানবিকতা নীতিবিষয়ক সহ-পরিচালক কিন্ডি হুয়াং। আশ্রয়দাতা দেশ এবং শরণার্থী দুপক্ষের জন্যই যেন কল্যাণ হয় এমন কোনও মডেল অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। হুয়াং চান, বাংলাদেশেও ‘দ্য রিফিউজি কম্প্যাক্ট মডেল’ অনুসরণ করা হোক। 

রোহিঙ্গা
‘দ্য রিফিউজি কম্প্যাক্ট মডেল’ অনুসরণ করতে হলে বাংলাদেশ সরকার, দাতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা দেশের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য অঙ্গীকার করতে হবে। জর্ডানসহ অন্যান্য দেশে বিদ্যমান এ কম্প্যাক্ট মডেলের কার্যকারিতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন হুয়াং। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আসন্ন মাসগুলোকে ভিন্ন এক ভবিষ্যতে পরিণত করতে পারে। বিশ্বে বাস্তুচ্যুতদের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দেখা যায়, শরণার্থী দশার গড় মেয়াদ কমপক্ষে দশ বছর। হুয়াং মনে করেন, এ দশ বছর রোহিঙ্গা পরিবারগুলো তাদের কাজের মাধ্যমে, ব্যবসার মাধ্যমে এবং জিনিসপত্র কেনার মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। তাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে। তা না হলে এসব রোহিঙ্গা পরিবারকে শিবিরে বন্দি অবস্থায় ত্রাণ সংস্থাগুলোর ওপর নির্ভর করে দিন পার করতে হবে। কিন্তু তখন তারা শিক্ষালাভ, কাজ করা ও পরিবারের ভরণপোষণ করার মতো কোনও গঠনমূলক সুবিধা পাবে না। বিপরীতে কক্সবাজারের সম্পদের পরিমাণ কমে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বাড়তে পারে উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতা।

২০১৬ সালে শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দাতাদের সহায়তার লক্ষ্য নিয়ে গ্লোবাল কনসেশনাল ফ্যাসিলিটি (জিসিএফএফ)-এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মধ্যবর্তী আয়ের দেশগুলোকে রেয়াতি সুদে ঋণ দেওয়া শুরু করে বিশ্বব্যাংক। ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্যও অতিরিক্ত ২শ’ কোটি ডলার রেয়াতি অর্থায়ন সহায়তা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ অ্যাসোসিয়েশনটি বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোকে তহবিল জুগিয়ে থাকে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন এ সংস্থার কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছিল বাংলাদেশ। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সম্ভাব্য অর্থায়নের পাশাপাশি এসব তহবিলকে শরণার্থীদের আত্মনির্ভর করে গড়ে তোলার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এ তহবিল দিয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শরণার্থীদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে সহায়ক কর্মসূচিগুলো চালানো যেতে পারে বলে মনে করেন হুয়াং। তার মতে, রেয়াতি অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ সূচনা হতে পারে, আর তা কম্প্যাক্টের নোঙর হিসেবে কাজ করতে পারে। 

/এফইউ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সমলিঙ্গের বিয়ে অনুমোদনের পথে থাইল্যান্ড
মস্কোয় কনসার্টে হামলা: প্রশ্নের মুখে রুশ গোয়েন্দা সংস্থা
সুপেয় পানির অপচয়, বেঙ্গালুরুতে ২২ পরিবারকে জরিমানা
সর্বশেষ খবর
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
জেফারকে সিনেমায় নিয়েছে ফারুকীকন্যা ইলহাম!
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়