X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
আগ্রাসনের ১৬ বছর

এখনও ইরাক যুদ্ধের প্রশ্নে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্র, বর্ষপূর্তিতে শান্তি আন্দোলনের ডাক

বিদেশ ডেস্ক
২০ মার্চ ২০১৮, ১৭:৫৩আপডেট : ২১ মার্চ ২০১৮, ০১:০৯
image

দিনকে দিন ইরাক যুদ্ধ নিয়ে সংশয় বেড়েছে মার্কিন জনতার। গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার মিথ্যে অজুহাত তুলে বুশের ইরাক আগ্রাসনের ১৫ বছর অতিক্রান্ত হলো আজ ২০ মার্চ (মঙ্গলবার)। ইরাক আগ্রাসনের ১৬ বছরে এসে প্রায় অর্ধেক মার্কিনি (৪৮%) মনে করছে, সামরিক হস্তক্ষেপ ভুল ছিল। মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে উঠে এসেছে এই তথ্য। ২০০৩ সালে যুদ্ধকালিন পরিচালিত জরিপে একই প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মাত্র ২২ শতাংশ মানুষ সে সময় যুদ্ধকে ভুল বললেও এতে সমর্থন ছিল ৭১ শতাংশ মার্কিনির। ১৬ বছরে এসে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে সেন্টার ফর কন্সটিটিউশনাল রাইটস (সিসিআর) নামের একটি সংস্থা ইরাক হামলাকে অবৈধ আখ্যা দিয়েছে। নতুন একটি শান্তি আন্দোলনের ডাক দিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক ওই মানবাধিকার সংগঠন

১৬ বছরে পা দিলো ইরাক যুদ্ধ

১০০০ মার্কিন টোমাহক-রকেট ইরাকের আকাশের দখল নিয়েছিল ২০০৩ সালের আজকের দিনটিতে। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ‘চূড়ান্ত ইনসাফ প্রতিষ্ঠা’র (অপারেশন ইনফিনিট জাস্টিস) ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায় মাঝরাতের (ভোর চারটা) বাগদাদ জেগে উঠেছিল বিস্ফোরকের সশব্দ আতঙ্কে।  গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার মিথ্যা অভিযোগে প্রত্যক্ষ আগ্রাসন শুরু করেছিল বুশ নেতৃত্বাধীন জোট। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বুশ বলেছিলেন, ইরাকি জনসাধারণ এবং বিশ্বকে মহাবিপদ থেকে মুক্ত করতে তিনি এই যুদ্ধ শুরু করেছেন। আর যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী তার জেনারেল বলেছিলেন, মরদেহ গোনা তাদের কাজ নয়। বুশের মুক্তির লড়াই আর তার জেনারেলের অবজ্ঞার স্রোতে গত ১৫ বছরে হারিয়ে গেছে আনুমানিক ১৫ থেকে ৩৪ লাখ লাখ তাজা প্রাণ। ডেমিওগ্রাফিক পদ্ধতি ব্যবহারপূর্বক নির্ভরযোগ্য ও স্বনামধন্য কয়েকটি জরিপ প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে একজন মার্কিন রাজনীতি বিশ্লেষক এবং একজন মানবাধিকার সংগঠক তাদের এক অনুসন্ধানে গত ১৫ বছরে ২৪ লাখ ইরাকির মৃত্যুর সম্ভাব্যতা হাজির করেছেন।

ক্রমাগত জোরদার হচ্ছে যুদ্ধবিরোধী প্রতিরোধ

যুদ্ধের শুরু থেকেই সামরিক আগ্রাসনের যৌক্তিকতার প্রশ্নে বিভক্ত ছিল মার্কিন জনগণ। পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপে দেখা গেছে, ২০০৩ সালের মার্চে ৭১ শতাংশ মার্কিনি সামরিক আগ্রাসনকে সমর্থন দিয়েছ। মাত্র ২২ শতাংশ আগ্রাসনের সিদ্ধান্তকে ভুল বলেছিলেন। দ্বিদলীয় সংসদীয় ব্যবস্থার দেশটিতে ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান দুই পক্ষই যুদ্ধ শুরুর দিকে আরও বেশি ইতিবাচক ছিলেন। ২০০৩ সালে যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন রিপাবলিকানদের ৮৯ শতাংশের পাশাপাশি ৫৩ শতাংশ ডেমোক্র্যাট যুদ্ধের পক্ষে বলেছিলেন। যুদ্ধ ও পরবর্তী ভয়াবহতা সাধারণ মানুষ যতই জানতে পারে ততই তাদের সমর্থন কমতে থাকে।  এক বছর পরেই তাদের মনোভাবের ব্যাপক রূপান্তর ঘটে। যুদ্ধে সমর্থন কমে যায় ১৬ শতাংশ, দাঁড়ায় ৫৫ শতাংশে। ২০০৫ সালে এসে দেখা যায়, ওই যুদ্ধকে সমর্থন করছেন ৪৭ শতাংশ মার্কিনি। 

সেন্টার ফর কন্সটিটিউশনাল রাইটস (সিসিআর) নামের সংস্থাটি ইরাক হামলাকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে  বলছে, ওই হামলা হাজার হাজার মানুষের হতাহত, যুদ্ধাপরাধ, আর যুদ্ধ বাধিয়ে কর্পোরেশনগুলোর মুনাফার খোঁজার বিপুল সুযোগ এনে দিয়েছে। অন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে এখন নতুন একটি বৈশ্বিক যু্দ্ধবিরোধী আন্দোলন শুরু করা প্রয়োজন। আর এই আন্দোলেনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে ইরাক যুদ্ধে বেঁচে যাওয়াদের প্রত্যাবাসন। বৈদেশিক নীতি বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সংস্থাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক ওয়েবসাইট কমন ড্রিমস ওই যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের খবর জানিয়েছে।

ইরাকে যুদ্ধকালিন সাদ্দাম হোসেনের ভাস্কর্য

সোমবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সিসিআর ইরাক যুদ্ধে মানবতার মূল্য, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘটানো সহিংসতার জন্য শাস্তি আওতায় আনার অপ্রতুলতার বিষয়ে নতুন করে মনোযোগ আকর্ষণ করেন। ২০০৩ সালে ইরাক হামলাকে অবৈধ যুদ্ধ আখ্যা দিয়ে সংস্থাটি বলছে, ওই হামলা হাজার হাজার মানুষের হতাহত, যুদ্ধাপরাধ, আর যুদ্ধ বাধিয়ে কর্পোরেশনগুলোর মুনাফার খোঁজার বিপুল সুযোগের প্লাটফর্ম হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত এসব একেবারেই দায়মুক্তি পেয়ে আসছে। বিবৃতিতে বলা হয়, অন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে এখন একটি নতুন বৈশ্বিক যুদ্ধবিরোধী
আন্দোলন প্রয়োজন আর তার কেন্দ্রে থাকবে বেঁচে যাওয়া ইরাকিদের প্রত্যাবাসনের উপায় উদ্ধাবনের নেতৃত্ব দেওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের উসকানিতে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িকতা ও ইরাকে তাদের পরিচালিত কারাগারগুলো আইএসের মতো উগ্রবাদী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটিয়েছে। যুদ্ধে আক্রান্তের কারণে তৈরি, বেড়ে চলা শরণার্থী সংকট কম দৃশ্যমান হলেও এর ক্ষতি কম নয়। এমনকি মার্কিনীদের তৈরি করা শরণার্থীরাই মুসলিম নিষেধাজ্ঞার কারণে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে দেওয়া হচ্ছে না।

ইরাক যুদ্ধের ১৬ বছরে এসেও বিভক্ত মার্কিন জনতা

২০১১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইরাক যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা দেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। যদিও তা এখনও শেষ হয়নি। সিসিআর বলছে, আইএসকে লক্ষ্য করে চালানো মার্কিন বিমান হামলার কারণে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা খবরে প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। তবুও ইরাকে ন্যায়বিচার এবং প্রগতির বিভিন্নে ইস্যুর জন্য লড়াই থামেনি। অভাবনীয় পরিস্থিতিতেও সেই লড়াই থামেনি। তারা পরিবর্তনের ডাক দিলে আমরা তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রত্যাবাসন ইরাকে মার্কিন বাহিনীর কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতার দাবি তুলবো। অন্য যেকোনও সময়ের চেয়েঅন্য যেকোনও সময়ের চেয়ে এখন একটি নতুন বৈশ্বিক যুদ্ধবিরোধি আন্দোলন প্রয়োজন আর তার কেন্দ্রে থাকবে বেঁচে যাওয়া ইরাকিদের প্রত্যাবাসনের উপায় উদ্ধাবনের নেতৃত্ব দেওয়া।

/এমএইচ/জেজে/বিএ/
সম্পর্কিত
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
ইসরায়েলের আকরে শহরে হামলার দাবি করলো হিজবুল্লাহ
গাজার হাসপাতালে গণকবর, আতঙ্কিত জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান
সর্বশেষ খবর
ওমরা পালনে সৌদি গেলেন পাটমন্ত্রী
ওমরা পালনে সৌদি গেলেন পাটমন্ত্রী
গাজায় আবিষ্কৃত গণকবরের স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র
গাজায় আবিষ্কৃত গণকবরের স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র
খুলনায় এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে ভিত্তিহীন তথ্য রয়েছে
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিমার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে ভিত্তিহীন তথ্য রয়েছে
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা