X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

লর্ড কারলাইল ও তার আইনি প্রতিষ্ঠান এসসি স্ট্র্যাটেজির আদ্যোপান্ত

বিদেশ ডেস্ক
২০ মার্চ ২০১৮, ১৮:৪৬আপডেট : ২০ মার্চ ২০১৮, ১৯:৫০

লর্ড কারলাইল ব্রিটিশ গোয়েন্দা সেবা প্রতিষ্ঠান এম-সিক্সটিনের সাবেক প্রধান স্যার জন স্কারলেটের সঙ্গে মিলে কৌশল ও রাজনৈতিক ঝুঁকি পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান এসসি স্ট্র্যাটেজি লিমিটেড পরিচালনা করছেন লর্ড কারলাইল। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা বিভিন্ন মামলার আইনজীবীদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য এই ব্রিটিশ আইনজীবীকে নিযুক্ত করেছে দলটি। মূলত নতুন দায়িত্বের সুবাদে তিনি উঠে এসেছেন খবরের শিরোনামে।

সম্প্রতি কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন লর্ড কারলাইল। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার বণ্টন নিয়ে গভীর আগ্রহ রয়েছে এই সংস্থার। তিনি নিজেও এ বিষয়ে অনেক আগ্রহী।

লর্ড কারলাইল নিজেও একজন রাজনীতিক। হাউস অব লর্ডসের ক্রসবেঞ্চের একজন সদস্য তিনি। ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের স্বাধীন পর্যবেক্ষক ছিলেন দেশটির এই আইনজীবী। জাতীয় নিরাপত্তায় অবদানের জন্য ২০১২ সালে তাকে সম্মানসূচক কমান্ডার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (সিবিই) নিয়োগ দেওয়া হয়।

নির্বাসিত বা নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর বিষয়ে লর্ড কারলাইলের বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। এ ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠান তার পরামর্শ নিয়ে থাকে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজনৈতিক সংগঠনকে আমেরিকায় আইনি ভিত্তির বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। নির্দেশনা দেওয়া ছাড়াও তিনি মার্কিন আইনজীবীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি আইনজীবী ও কর্মকর্তাদের কাছে সংগঠনটির আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন তিনি।

সাধারণত গুরুতর অপরাধ, স্থানীয় সরকার এবং লাইসেন্স, পরিকল্পনা ও পেশাগত নিয়ম-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সরকারি আইনের মামলায় বেশি অংশ নিয়ে থাকেন লর্ড কারলাইল। সংসদীয় অধিকার ও আচরণ সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। এছাড়া বড় ধরনের বাণিজ্যিক প্রতারণার মামলায়ও পারদর্শী তিনি। এমন অনেক মামলায় নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে তাকে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী নিযুক্ত হওয়ার পর মঙ্গলবার বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে কার্লাইলের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করা হয়। তিনি নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তার কথায়, ‘আন্তর্জাতিক আইন ও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে আইনি পরামর্শ দেবো।’

১৯৪৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পোল্যান্ডে এক ইহুদি অভিবাসীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন লর্ড অ্যালেক্স কারলাইল। নর্থ ওয়েলসের রুয়াবোনে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি ১৯৬৯ সালে কিংস কলেজ লন্ডন থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৭০ সালে বারে ডাক পান তিনি। এরপর অল্প বয়সেই কুইন কাউন্সিলের (কিউসি) সদস্য হয়ে আলোচনায় আসেন।

মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক মামলায়ও লর্ড কারলাইলের বেশ আগ্রহ রয়েছে। হাভার্ড লিগ ফর পেনাল রিফর্মের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০৬ সালে বেশ কিছু তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন তিনি। তাকে ওই সময় জেলখানায় শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ওপর নির্যাতন, ফাঁদ অনুসন্ধান ও শিশুদের বিভিন্ন মামলা তদন্ত করতে হয়েছিল।

লর্ড কারলাইল পেশাগত জীবনে রাজনীতিক হিসেবেও সফল। ওয়েলসের লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক দলের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালের নির্বাচনে হেরে গেলেও ১৯৮৩ থেকে ’৯৭ পর্যন্ত মন্টোগমেরিশায়ার এলাকা থেকে পার্লামেন্ট মেম্বারের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে। ১৯৯২ সালে দলের বেহাল অবস্থায় নেতৃত্বে এসেছিলেন তিনি। এরপর ওয়েলসের লেবার পার্টির সঙ্গে দায়িত্ব হস্তান্তরের আলোচনার অন্যতম ক্রীড়নকের ভূমিকা পালন করেন এই আইনজীবী। ১৯৯৭ সালে ক্ষমতা বিষয়ে গণভোটের ব্যাপারেও নেতৃত্ব দেন তিনি।

২০১৭ সাল পর্যন্ত লিবারেল ডেমোক্রেটিক দলের সম্মানিত সদস্য থাকাকালে জাতীয় নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দলীয় নীতির সঙ্গে বিরোধ হয় কারলাইলের। এ কারণে দল থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। সেই সময়ের খবরে বলা হয়েছিল—বেসামরিক স্বাধীনতা বিশেষ করে তথাকথিত ‘স্নুপারস চার্টার্স’ বিষয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিরোধের কারণেই দল ছাড়েন তিনি।

ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, হাইকোর্টের সহকারী বিচারক, ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন লর্ড কারলাইল। হোয়াইট অ্যাসাইন অ্যাসোসিয়েশনের ট্রাস্টি বোর্ডের একজন সদস্য তিনি। ২০০৬ সালে হাভার্ড দণ্ডবিধি সংস্কার কমিটির সভাপতি পদেও পাওয়া গেছে তাকে। প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অধিকার নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (২০ মার্চ) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে বিএনপির সমর্থকরা লর্ড কারলাইলকে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা ৩৬টি মামলায় দেশের আইনজীবীদের সহযোগিতা ও আইনি পরামর্শ দেবেন। প্রয়োজনে তিনি বাংলাদেশেও আসবেন।’

/আরএ/জেএইচ/এপিএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন অ্যাসাঞ্জ
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার
নিরাপত্তা হুমকিতে ওডেসা সফর বাতিল করেছিলেন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
ঢাবির সব ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
ঢাবির সব ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
বাংলাদেশের আম-কাঁঠাল-আলু নিতে চায় চীন
বাংলাদেশের আম-কাঁঠাল-আলু নিতে চায় চীন
শিশু অপহরণ করে নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করতো চক্রটি
শিশু অপহরণ করে নিঃসন্তান দম্পতির কাছে বিক্রি করতো চক্রটি
রাজধানী স্থানান্তর করছে ইন্দোনেশিয়া, বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছে জাকার্তা
রাজধানী স্থানান্তর করছে ইন্দোনেশিয়া, বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছে জাকার্তা
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে