মায়ের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া থেকে চীনে যাত্রা করা অস্ট্রেলিয়ার জন হফকে চীনে ঢোকার অনুমতি দেয়নি দেশটি। জন হফ চীনা বংশোদ্ভূত একজন অস্ট্রেলীয় নাগরিক। বুধবার মৃত বাবার দেহাবশেষ তার জন্মস্থানে রাখতে চীনে যাওয়া এবং সেখানে অবতরণের পর প্রবেশাধিকার না পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন তিনি। মঙ্গলবার রাতে অবতরণের পরপরই তাকে আবার সিডনিগামী বিমানে তুলে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরৎ পাঠানো হয়। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছ, ৫১ বছর বয়সী জন হফ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির একজন কড়া সমালোচক। অস্ট্রেলিয়ায় চীনের প্রভাব বৃদ্ধির বিরুদ্ধে লেখে বইতে তার মন্তব্য উদ্ধৃত হওয়া, চীনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে নতুন গোয়েন্দা নজরদারি বিষয়ক আইনকে সমর্থন দেওয়া ও কমিউনিস্ট পার্টির বিরোধী মত দমনের সমালোচনাকারী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা হওয়াই তার এই দুর্ভোগের কারণ বলে মনে করেন জন হফ।
অস্ট্রেলিয়ায় চীনা প্রভাব বিস্তারের কড়া সমালোচক জন হফ চীনের কর্মকর্তাদের কাছে তাকে চীনে প্রবেশ করতে না দেওয়ার কারণ জানতে চেয়েছিলেন। তিনি কোনও উত্তর পাননি। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পাররামাত্তা থেকে নির্বাচিত সাবেক এই পৌর কমিশনার বলেছেন, অস্ট্রেলিয়াতে বিদেশি প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে আনীত নতুন গোয়েন্দা নজরদারি আইন সমর্থন করাটা তার এই দুর্ভোগের একটি কারণ। অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতি, ব্যবসা ও শিক্ষাক্ষেত্রে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আগ্রাসনের ওপর লেখা বইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকাও তার চীনের রোষানলে পড়ার কারণ হতে পারে, মনে করেন হফ। ক্লিভ হ্যামিল্টনের লেখা ‘সাইলেন্ট ইনভেশন’ নামের বইতে চীনে ও অস্ট্রেলিয়াতে পার্টির বিরুদ্ধে ভিন্নমত পোষণকারীদের মতপ্রকাশ বাধাগ্রস্ত করার সমালোচনা করে দেওয়া জন হফের বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে। হফ মনে করেন, চীনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার বদলে স্বাধীন মতপ্রকাশ কারাতেই তার ওপর চটেছে চীন।
গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং আইনের শাসন নিশ্চিতের পাশাপাশি কমিউনিস্ট পার্টির নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার সংগঠন ‘এমব্রেস অস্ট্রেলিয়ান ভ্যালুস অ্যালায়্যেন্সের’ প্রতিষ্ঠাতা জন হফ। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, এই ঘটনা প্রমাণ করে, অস্ট্রেলিয়াতে চীনের প্রভাব নিয়ে বাড়তে থাকা সমালোচনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেছে দেশটি। তাছাড়া, অব্যাহত সমালোচনার মুখে থেকেও নিজেদের বিবেচনা অনুযায়ী চীনা বংশোদ্ভূতদের চীনে ঢুকতে দেওয়া না দেওয়ার বিষয়টি তারা আগে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ইতিহাসের শিক্ষক ডেভিড ব্রোফি মন্তব্য করেছেন, ‘যদি অস্ট্রেলিয়াতে তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে জন হফকে চীনের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে তা খুবই নিন্দনীয় কাজ হয়েছে। রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চীন ভিসা না দেওয়া, প্রবেশাধিকার না দেওয়ায়সহ বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে থাকে।’ তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার উচিত হবে না চীনের মতো একই পথে হাঁটা।‘সাইলেন্ট ইনভেশন’ নামক বইতে সেরকম প্রস্তবনাই করা হয়েছে জানিয়ে ব্রোফি বলেছেন, ‘বইটিতে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চীনা নীতির সমর্থকদের বসবাসের অনুমতি না দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন লেখক ক্লিভ হ্যামিলটন, যা চীনের নীতিরই অনুসরণ—রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নাগরিকদের বঞ্চিত করা।’
চীন থেকে ১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়াতে অভিবাসী হওয়া জন হফ জানিয়েছেন, এর আগে বহুবার তিনি চীনে গেছেন কোন সমস্যা ছাড়াই। এবার তার মাকে শুধু প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে। আর তাকে ফেরৎ পাঠানো হয়েছে। তবে চীনের কর্মকর্তার কোন দুর্ব্যবহার করেননি, জানিয়েছেন হফ। নিউ ইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেছেন, তাকে চীনে ঢুকতে না দিয়ে চীন আসলে অস্ট্রেলিয়াতে বসবাসকারী সকল চীনা বংশোদ্ভূতদের একটি বার্তা দিতে চেয়েছে—‘কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক না হলে তার জন্য খেসারত দিতে হবে।’