X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি আরবে অস্ত্র রফতানির পক্ষে ট্রুডোর সাফাই

বিদেশ ডেস্ক
২২ মার্চ ২০১৮, ১৬:২২আপডেট : ২২ মার্চ ২০১৮, ১৬:২৯
image

সৌদি আরবের কাছে কানাডার ৯০০টিরও বেশি সাঁজোয়া যান বিক্রির সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তার দাবি, কানাডার পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগের সরকারের করা চুক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ছাড়া তার সরকারের আর কিছু করার ছিল না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, মঙ্গলবার (২০ মার্চ) কানাডার হাউস অব কমন্সে বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদের প্রশ্নের মুখে এসব কথা বলেন ট্রুডো। তবে ট্রুডোর বক্তব্যকে ‘দ্বিধান্বিত যুক্তি’ উল্লেখ করে এর সমালোচনা করেছে নিরস্ত্রীকরণের পক্ষের সংগঠন।   

জাস্টিন ট্রুডো
২০১৪ সালে কানাডার পূর্ববর্তী রক্ষণশীল সরকারের শাসনামলে ১১শ ৬৩ কোটি ডলার সমমূল্যের চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। আর ট্রুডো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর চুক্তিটি সবুজ সংকেত পায়। তবে সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে যখন সমালোচনা চলছে তখন দেশটির কাছে কানাডার অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্তের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। গত গ্রীষ্মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবি ও ভিডিওকে কেন্দ্র করে চুক্তিটি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দেয়।  ওই ছবি ও ভিডিওতে অভিযোগ করা হয়, সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে শিয়াপন্থীদের বিরুদ্ধে সহিংস ধরপাকড় চালাতে কানাডার তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা হচ্ছে।

সম্প্রতি কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (সিবিসি) সৌদি আরবের কাছে কানাডার অস্ত্র বিক্রির চুক্তি সংক্রান্ত নথি হাতে পাওয়ার দাবি করে।  কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন কর্তৃপক্ষের হাতে আসা নথিতে দেখা যায়, প্রাথমিকভাবে যে অস্ত্রগুলো কেনা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে- ১০৫ মিলিমিটারের কামানবিশিষ্ট ১১৯টি ভারি যানসহ কয়েকশো সাঁজোয়া যান, ১১৯টি ‘ট্যাংক বিধ্বংসী’ যান এবং সরাসরি ‘গোলা ছোড়া’র সক্ষমতাবিশিষ্ট ১১৯টি সাঁজোয়া যান। সিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে করা সমঝোতা চুক্তিটি পরে পরিবর্তিত করা হয়ে থাকতে পারে। ২০১৭ সাল থেকে সাঁজোয়া যানগুলোর সরবরাহের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল।

তবে চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ্যে আসার পর মঙ্গলবার হাউস অব কমন্সে বিরোধীদলীয় সদস্যদের প্রশ্নের মুখে পড়েন ট্রুডো। নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য হেলেন লাভারডিয়ের সৌদি আরবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গ সামনে টেনে আনেন। জানতে চান, যে দেশটি (সৌদি আরব) নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর হামলা করছে এবং ইয়েমেনে অভিযান চালাচ্ছে সে দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রি করা কতটা যৌক্তিক। হেলেন লাভারডিয়ের বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের সঙ্গে কানাডার সম্ভাব্য অংশগ্রহণ নিয়ে তিনি কী মনে করেন? সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রেখে আমরা কিভাবে কানাডার পররাষ্ট্রনীতিকে প্রগতিশীল ও নারীবাদী বলতে পারি?’

জবাবে ট্রুডো বলেন, আগের সরকারের স্বাক্ষর করা চুক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ছাড়া তার কিছু করার ছিল না বললেই চলে। ট্রুডো বলেন, ‘মানবাধিকারসহ আমাদের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষানীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলেই কেবল রফতানির অনুমতি পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে জাতীয়ভাবে বিদ্যমান বিধি-নিষেধ ও কানাডীয় আইন মেনেই রফতানির সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ 

চুক্তি অনুযায়ী, সৌদি আরবে ভারি সাঁজোয়া যান পাঠাবে কানাডা
প্রজেক্ট প্লাউশেয়ারস নামে কানাডার নিরস্ত্রীকরণবিষয়ক একটি সংগঠনের সদস্য সিজার জারামিলো ট্রুডোর জবাবকে ‘দ্বিধান্বিত যুক্তি’ বলে উল্লেখ করেছেন। কানাডার পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষানীতির প্যারামিটার নির্ধারণের বিষয়টি এখন ট্রুডো সরকারের উপরই নির্ভর করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। জারামিলোর মতে, কানাডা একইসময়ে নারীবাদকে পররাষ্ট্রনীতির মুখ্য এজেন্ডায় পরিণত করেছে আবার নারীদের প্রতি দমননীতি পরিচালনাকারী দেশ সৌদি আরবকে অস্ত্র দিচ্ছে, যা পরস্পরবিরোধী নীতি। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি কানাডার সরকারের কথা ও কাজের মধ্যে স্পষ্ট ফাঁক রয়েছে।’

এক তদন্ত শেষে গত ফেব্রুয়ারিতে কানাডীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড দাবি করেছিলেন, কানাডায় তৈরি হওয়া যান সৌদি আরবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজে ব্যবহার হচ্ছে বলে কোনও প্রমাণ নেই। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, কিভাবে সরকার এ ব্যাপারে নিশ্চিত হলো তা নিয়ে সেসময় ক্যাম্পেইনাররা প্রশ্ন তুলেছিলেন। তবে তা সত্ত্বেও তদন্তের কপি প্রকাশ করতে রাজি হয়নি কানাডার সরকার।

যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখে তারা বরাবরই সৌদি আরবকে শীর্ষ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দেশ হিসেবে শনাক্ত করে আসছে। জার্মানি ও বেলজিয়ামের মতো দেশগুলো সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র রফতানির আবেদনগুলো প্রত্যাখ্যান করে থাকে। ২০১৫ সালে একইরকম উদ্বেগ জানিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেছিল সুইডেন। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে।

ইয়েমেনে সৌদি জোটের ধারাবাহিক বিমান হামলায় বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানির ঘটনায় রিয়াদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তিনি ওই নির্দেশ দেন। ওই বছরের অক্টোবরে ইয়েমেনের একটি জানাজায় হামলা চালিয়ে ১৪০ জনেরও বেশি বেসামরিক ইয়েমেনিকে হত্যা করে সৌদি জোট। মূলত ওই ঘটনার প্রেক্ষিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওবামা প্রশাসন। ওই সময়ে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র নেড প্রাইস সৌদি আরবকে হুঁশিয়ার করে বলেন,মার্কিন নিরাপত্তা সহযোগিতা দেওয়ার মানে ‘ফাঁকা চেক দেওয়া নয়’। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের সম্পর্কোন্নয়ন ঘটে। এমনকি ট্রাম্পকে ‘মুসলমানদের সত্যিকারের বন্ধু’ বলে মন্তব্য করেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। পরে ২০১৭ সালের জুনে সৌদি সফরে দেশটির সঙ্গে ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহ চুক্তি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিপুল অর্থের অস্ত্র কেনায় সৌদি আরবের প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি বলেন,সৌদি অস্ত্র ক্রয়ের কারণে শত শত কোটি ডলার ঘরে ফেরাতে সমর্থ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অস্ত্র ব্যবসায় ৪০ হাজার মার্কিন নাগরিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

/এফইউ/বিএ/
সম্পর্কিত
ইসরায়েলের আকরে শহরে হামলার দাবি করলো হিজবুল্লাহ
গাজার হাসপাতালে গণকবর, আতঙ্কিত জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধান
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী