X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইরান আগ্রাসন শুরু করতেই ট্রাম্প প্রশাসনে বোল্টন?

জাহিদুল ইসলাম জন
২৪ মার্চ ২০১৮, ২০:২৮আপডেট : ২৫ মার্চ ২০১৮, ১৬:০৯

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে খারাপ জনতুষ্টির উদাহরণ বলে মন্তব্য করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন জন বোল্টন। বুশ প্রশাসনের অধীনে জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে আসা এই সাবেক কূটনীতিককে নিজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র থাকার ধোঁয়া তুলে ইরাকে আগ্রাসন চালানোর পেছনে কলকাঠি নেড়েছিলেন বোল্টন।  বিশ্লেষকরা বলছেন, কট্টর জাতীয়তাবাদী ও আগ্রাসী এই সাবেক কূটনীতিককে নিজের প্রশাসনে নিয়োগ দিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার কাজ শুরু করলেন ট্রাম্প।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন

ট্রাম্প প্রশাসনে নবনিযুক্ত এই সাবেক কূটনীতিককে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত মানুষটি কঠোর রক্ষণশীল, জাতীয়তাবাদী ও আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আগ্রাসী মত পোষণ করেন। উত্তর কোরিয়া ও ইরানের বিষয়েও কট্টের মত পোষণ করেন তিনি। কূটনৈতিক বিষয়ের সামরিক সমাধানের জন্য তিনি ট্রাম্পকে প্ররোচিতও করতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি।  

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, আমেরিকার পররাষ্ট্র দফতর ও জাতিসংঘে দায়িত্ব পালন করেছেন বোল্টন। জনপরিসরে কাজ করবার সুযোগ সেখানে অপেক্ষাকৃত কম। তবে এবার নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে মার্কিন প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে পাওয়া সুযোগ তিনি কীভাবে কাজে লাগান তা নিয়ে আগ্রহ থাকবে সবার।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট আই লিখেছে, সাম্প্রতিক রদবদলের মধ্য দিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রস্তুতি নিতে মন্ত্রিপরিষদকে একটি যুদ্ধ পরিষদে পরিণত করতে চলেছেন ট্রাম্প। ইরান বিষয়ে কট্টর মনোভাবের অধিকারী বোল্টনের নিয়োগ নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খোলেনি ইরান। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়াশিংটনের আসন্ন নীতি আরও বেশি কট্টর ও অযৌক্তিক হবে। বোল্টনের ‍নিয়োগ বিশ্বকে নতুন যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ মারান্দি নিজের মধ্যপন্থী অবস্থানের জন্য সুপরিচিত। তিনি মিডলইস্ট আইকে বলেছেন, ‘সহিংস উন্মাদদের’ সঙ্গে ইরানের আলোচনায় বসার কোনও কারণ নেই।

ইরানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রতিবছর ব্যবসায়ী ও সাধারণ নাগরিকদের নিয়ে বিভিন্ন আয়োজন করে থাকে ইরান-ইউরোপ ফোরাম। এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এসফান্দিয়ার বাতমানগেলিদি লিখেছেন, ট্রাম্প এবং তার নিয়োগ দেওয়া ব্যক্তি পারমাণবিক চুক্তি শেষ করে দিতে পারে। বিশ্ব এবং ইরানের সামনে বিশ্বাস ও আলোচনা ছাড়া অন্য কোনও পথ খোলা নেই। বোল্টনের নিয়োগ ঘোষণার পর এক বিবৃতিতে তিনি লেখেন, ট্রাম্পের মেয়াদ আর মাত্র কয়েক বছর বাকি আছে। যদি পারমাণবিক চুক্তি ভেঙে যায় তাহলে তার শিক্ষাটা যেন বাতিল না করা হয়।

চুক্তি সম্পাদন অনুষ্ঠানে ইরান ও ছয় বিশ্ব শক্তির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা

বিগত বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে তেহরানকে দায়ী করে এসেছেন বোল্টন। নিজের অনেক বিবৃতিতেই ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন তিনি। আর ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে একই মত পোষণ করেন তিনি। ২০১৬ সালে বোল্টন বলেছিলেন, ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তিটি আমার বিবেচনায় আমেরিকার সবচেয়ে বাজে জনতুষ্টির উদাহরণ। বোল্টন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পক্ষে ওকালতি করেন। গত দশ বছর তিনি ইরানের ওপর বোমা ফেলার কথা বলে আসছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার ওপর প্রথম পারমাণবিক আঘাত হানা উচিত।

ইরান নিয়ে ট্রাম্প আর বোল্টনের অবস্থান এক বিন্দুতে। দুজনেই মনে করেন এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে আসা উচিত। মিডলইস্ট আই আশঙ্কা করছে, আসন্ন মে মাসে এই চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করে ইরান। ওবামা যুগে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে তেহরানের ওই পরমাণু সমঝোতা কার্যকর হয়। চুক্তির আওতায় ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি কমিয়ে আনতে রাজি হয়। বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহার করা হয়।

২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে ট্রাম্প এই চুক্তি বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। চুক্তিটিতে থাকতে প্রতি তিনমাস পর পর প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের। গত জানুয়ারিতে এই চুক্তি অনুমোদনের সময় সংশোধনের সময় বেঁধে দেন ট্রাম্প। না হলে চুক্তি থেকে বের হওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন তিনি।

২০১৫ সালের মার্চে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক উপসম্পাদকীয়তে বোল্টন বলেছিলেন, ১৯৮১ সালে ইসরায়েল যেভাবে সাদ্দামের ওসিরাক চুল্লিতে বা সম্প্রতি নিশ্চিত হওয়া ২০০৭ সালে সিরিয়ার চুল্লিতে হামলা চালিয়েছিল সেভাবেই ইরানে হামলা চালানো উচিত।

ইরানের পক্ষ থেকে সেদেশের সর্বোচ্চ নেতার অফিসের অধীনে পরিচালিত গার্ডিয়ান কাউন্সিলের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি পাওয়া গেছে। কাউন্সিলের মুখপাত্র আব্বাস আলী খাদখোদাই বোল্টনকে মুজাহিদিন-ই খালাক (এমইকে) এর পৃষ্ঠপোষক বলে আখ্যা দিয়েছেন। ইরানের নির্বাসিত এই সংগিঠনটি ১৯৭৯ সাল থেকে তেহরান সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করে আসছে। ইরানের বার্তা সংস্থাকে টেলিগ্রামে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আব্বাস আলী খাদখোদাই লেখেন, এমন একটি স্পর্শকাতর অবস্থানে বোল্টনকে কেন নিয়োগ দেওয়া হলো। তিনি ইরানবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন এমইকের একগুঁয়ে সমর্থক। বোল্টনের নিয়োগের আগে পারস্য নববর্ষ উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বার্তায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি জনগণকে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করবার ওপর জোর দিয়েছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিলের ত্রিতা পারসি বোল্টনের নিয়োগের পর এক বিবৃতি দিয়েছেন। এই নিয়োগ যুদ্ধের দিকে পা বাড়ানো বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিবৃতিতে তিনি লেখেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্ভবত এর মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা শুরু করলেন। জন বোল্টনকে নিরাপত্তা উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র দফতরে মাইক পম্পেওকে বসিয়ে ট্রাম্প পরিস্কারভাবে একটি যুদ্ধ পরিষদ সাজাচ্ছেন। সমগ্র বিশ্ব এখন আগামী ১২ মে ট্রাম্পের ইরান সিদ্ধান্ত জানার জন্য আগ্রহী থাকবে। যদি সেদিন তিনি ইরান চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার ঘোষণা দেন, তাহলে যুদ্ধ শুরুর যাবতীয় চিহ্ন পরিস্কার হয়ে যাবে।

ইউরোপীয়ান কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনের সিনিয়র পলিসি ফেলো এলী জেরামায়েহ বলেন, বোল্টনের নিয়োগ আর তার সঙ্গে মাইক পম্পেও এর মনোনয়ন পরিস্কারভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে আগামী মে মাসে এই চুক্তি থেকে বের হয়ে আসবেন ট্রাম্প।

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, বোল্টন আর ট্রাম্পের মতাদর্শের মিল রয়েছে। দুজনেই মনে করেন ইরানের পারমাণবিক চুক্তি বাতিল হওয়া উচিত, উত্তর কোরিয়ার পরমাণুনিরস্ত্রীকরণ হওয়া দরকার অথবা সামরিক হামলা মোকাবিলা করা উচিত, জাতিসংঘ ও অন্যান্য বহুজাতিক সংস্থাগুলোতে ওয়াশিংটনের সম্পৃক্ততা কমানো উচিত। এই প্রেক্ষাপটে জার্মান নীতি বিশ্লেষক জোসেফ জ্যানিং বলেন, বোল্টন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তাৎপর্যপূর্ণ সমর্থন ও বুদ্ধিবৃত্তিক অস্ত্র যোগাতে পারবেন।

ওয়াশিংটন ও জাতিসংঘে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন নিজেল শেইনওয়াল্ড। বোল্টনের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা থাকা এই সাবেক ব্রিটিশ কূটনীতিবিদ নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, বুশ প্রশাসনের নীতিকে কঠোর পথে পরিচালিত করবার চেষ্টা চালিয়েছেন বোল্টন। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিপুল সহযোগিতার সম্পর্ক থাকার পরও তিনি ওয়াশিংটনের কোনও মিত্র থাকার ধারণা মানতেন না। যুক্তরাজ্য নিয়ে তিনি ভীষণ সমালোচক ছিলেন, এমনকি আমার যাই করতাম তার প্রায় সবকিছুরই সমালোচনা করতেন তিনি।

 

/আরএ/এএ/
সম্পর্কিত
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
সর্বশেষ খবর
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
এবার ‘হুব্বা’ নামে হলো গানচিত্র
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
আঙুরের গোড়া কালো হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন টিপস
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
টেকনাফে ১০ জন কৃষক অপহরণের ঘটনায় ২ জন আটক
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
এরদোয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সফর, যা জানা গেলো
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!