X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বমঞ্চে পা রাখছেন উত্তর কোরীয় নেতা কিম?

আরশাদ আলী
২৯ মার্চ ২০১৮, ১৯:৫৪আপডেট : ২৯ মার্চ ২০১৮, ২০:৫৯
image

পরিবারের তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে দেশ পরিচালনা করছেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন। দেশের সবচেয়ে তরুণ নেতা হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনও বিদেশ সফরে যাননি তিনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতোদিন অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা সুসংহত করতেই মনোযোগী ছিলেন তিনি। তবে সম্প্রতি তার নাটকীয় ও আকস্মিক চীন সফরের মধ্য দিয়ে কিম প্রমাণ করেছেন, বিশ্বের পরাশক্তি ও বাঘা বাঘা নেতাদের সঙ্গে একই মঞ্চে বসতে তিনি প্রস্তুত ও আত্মবিশ্বাসী। তিনি আবির্ভূত হতে চাইছেন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রনেতাদের কাতারে।
উ. কোরীয় শীর্ষ নেতা কিম

ক্ষমতা গ্রহণের পর কিমের লক্ষ্য ছিল তাকে মেনে নিতে না পারা দেশের  অভিজাতদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। অর্থনৈতিক সংস্কার এবং বড় ধরনের সামরিক শক্তি অর্জনের মধ্য জনগণের পছন্দের রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠার পেছনেও সময় ও শ্রম ব্যয় করেছেন কিম। বিশেষজ্ঞ জিন লি মন্তব্য করেন, কিম এখন মনে করেন তিনি দেশকে পুরোপুরি নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে পেরেছেন, সামরিক নেতা হিসেবে তিনি দেশের মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারবেন। এখন তিনি আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রনেতা হিসেবে নিজের ভূমিকা রাখতে চাইছেন।

২০১৭ সালটি উত্তর কোরিয়ার জন্য ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বছর হলেও ২০১৮ সাল এসেছে কূটনীতির বছর হয়ে। ২৬ মার্চ সোমবার অনির্ধারিত সূত্রে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম কিমের চীন সফরের খবর দেয়। একদিন পর ২৮ মার্চ দুই দেশের পক্ষ থেকে সফরটির কথা স্বীকার করা হয়। উইলসন সেন্টারের উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ জিন লি বলেন, নেতৃত্ব পাওয়ার শুরুতেই আমরা প্রত্যাশা করছিলাম বেইজিংয়ে সৌজন্য সফর করবেন কিম। তবে ক্ষমতা গ্রহণের সাত বছর পর্যন্ত তিনি নিজের ক্ষমতা সংহত করে চীনের প্রেসিডেন্টের সমকক্ষ হওয়ার পর সফরে আসলেন। বেইজিংভিত্তিক কার্নেগি সিনগুয়া সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসি’র উত্তর কোরিয়া বিশেষজ্ঞ টং ঝাও বলেন, উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক সক্ষমতার মৌলিক বিষয়গুলো সফল অর্জন করার পর এখন পরবর্তী ধাপের দিকে এগুচ্ছে। পারমাণবিক অস্ত্রকে কেন্দ্র করে যে নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা থেকে মুক্তি প্রয়োজন দেশটির। একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করাও জরুরি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কোন্নয়ন প্রয়োজন।

জানুয়ারিতে নববর্ষের শুভেচ্ছা বার্তায় দেশটি দক্ষিণের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থাপনে রাজি হয়। এর কয়েকদিনের মাথায় শীতকালীন অলিম্পিকে যোগ দিতে সম্মত হয় পিয়ংইয়ং। জানুয়ারির আগ পর্যন্ত পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দুই কোরিয়ার চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে এটা ছিল নাটকীয় পরিবর্তন। শীতকালীন অলিম্পিকে কিম পিয়ংইয়ংয়ের প্রতিনিধি হিসেবে বোন কিম ইয়ো জংকে পাঠান। বোনের সঙ্গে দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্টকে উত্তর সফরের আমন্ত্রণপত্রও পাঠান। যা উভয় দেশের সম্পর্ককে স্বাভাবিকতায় নিয়ে আসে। একইভাবে দক্ষিণ কোরীয় দূতের মাধ্যমে ট্রাম্পকেও আমন্ত্রণ পাঠান কিম। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রনেতারা বৈঠকে বসার সুযোগ তৈরি হয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, আগামী মাসে বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হবেন কিম। বিশ্ব মঞ্চে তিনি কেমন করেন তা দেখা যাবে যখন তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও দক্ষিণ কোরীয় নেতা মুন জায়ে-ইনের সঙ্গে বৈঠকে করবেন।

চ্যাটহ্যাম হাউসের গবেষক ও উত্তর কোরিয়ায় দায়িত্ব পালন করা সাবেক ব্রিটিশ দূত জেমস হায়োরে জানান, ট্রাম্প সম্পর্কে জানতে ও তাকে কিভাবে মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণেই বেইজিং সফরে হয়ত গিয়েছেন কিম। কারণ তারা ট্রাম্প সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। এজন্যই হয়ত তারা চীনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছে। বিশেষ করে তারা যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ডার বিষয়ে জানতে চায়। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্রনিরস্ত্রীকরণ নিয়ে সংকেট পড়তে পারে। তাদের মতে যুক্তরাষ্ট্র চায় না কিমের দেশ পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করুক। যুক্তরাষ্ট্রের সমর পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িতরা পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের জন্য সেনা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। আর উত্তর কোরিয়া অতীতে বারবার বলে এসেছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র হাতছাড়া করবে না। তারা পারমাণবিক অস্ত্র সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ বা পরীক্ষা বন্ধ করবে না। জিন লি’র মতে, কিম এখন নিজেকে এ অঞ্চলের অন্যান্য নেতার সমকক্ষ হিসেবে দাবি করছেন। বেইজিংয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পাটাতনে আমরা উত্তর কোরিয়ার সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পিত কূটনীতির দেখা পাচ্ছি।

ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম বছরেই কিম যুক্তরাষ্ট্রে আঘাতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার পরীক্ষা করেন। পিয়ংইয়ং দাবি করে, তারা হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করেছে। এরপরই তিনি কিম বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে দক্ষিণের সঙ্গে আলোচনায় রাজি হন এবং পরে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব দেন। এই পুরো সময়ে ট্রাম্প প্রশাসন মূলত কিমের কৌশল ও পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া ও তাতে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করেছে। এই সপ্তাহেও একই ঘটনা ঘটেছে। কিম আকস্মিকভাবে চীন হাজির হয়েছেন যা যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকে জানতে পারেনি। ট্রাম্পের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতির পরও চীন ও উত্তর কোরিয়া বুধবার দুই নেতার বৈঠকের খবর প্রকাশ করেছে দুইদিনের গোপনীয়তার পর।প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ক্ষমতা গ্রহণের পর কিমের দুই দিনের আকস্মিক চীন সফর দেখিয়ে দিয়েছে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে সংকটে রয়েছে এবং তা সমাধানে তারা কত মরিয়া। কিম এখনও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কী চাইবেন তা স্পষ্ট নয়। তবে পুরো কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় তিনি প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন।

কথা ও ছবিতে কিম ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইঙ্গিত দিয়েছেন উভয় দেশের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের। যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল কিমের পারমাণবিক কর্মসূচি গতিশীল ও প্রতিক্রিয়ায় শি যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ফলে। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিম ও জিনপিংয়ের বৈঠকটি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের হুমকির মুখেও উত্তর কোরিয়ার প্রতি চীনের অবস্থান নরম হওয়ার ইঙ্গিত কিনা সেটা বলার সময় এখনি হয়ত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। ট্রাম্প বারবার পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতির কথা বলে আসছেন। কিন্তু চীন উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। চীনই এখনও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। চীনা নেতৃত্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা সাবেক অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুড বুধবার হংকংয়ে বলেছেন, চীন যুক্তরাষ্ট্র ও বাকি বিশ্বকে বলতে চাইছে, কোরীয় উপদ্বীপে ভবিষ্যতে কেউ কিছু করতে চাইলে, বিশেষ করে পারমাণবিক ইস্যুতে তারা ভুলে ভাববেন না আমাদের ছাড়িয়ে বা এড়িয়ে কিছু করতে পারবেন।

/বিএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হিট অ্যালার্ট উপেক্ষা করে কাজে নামতে হয় যাদের
হিট অ্যালার্ট উপেক্ষা করে কাজে নামতে হয় যাদের
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের পাঠদানও বন্ধ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের পাঠদানও বন্ধ
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
রুশ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা, ৫০টি ড্রোন ভূপাতিতের দাবি মস্কোর
বিয়েবাড়ির খাসির মাংস খেয়ে ১৬ জন হাসপাতালে
বিয়েবাড়ির খাসির মাংস খেয়ে ১৬ জন হাসপাতালে
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি