যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ইউটিউবের সদর দফতরে হামলাকারী নারী হওয়ার কারণে বিষয়টি নজর এড়িয়ে গেছে; এক তুলনামূলক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে দাবি করেছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান। পরিসংখ্যানিক বিবরণ হাজির করে তারা দেখিয়েছে, নারী বন্দুকধারীদের হামলা খুবই বিরল ঘটনা। এফবিআই ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জরিপ সংস্থাগুলোর মতে, নারী হামলাকারী কম হলেও, হতাহতদের মধ্যে তাদের সংখ্যাই বেশি। নারীদের চেয়ে পুরুষেরই সহিংসতার প্রবণতা বেশি থাকে বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের করা এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৬০টি বন্দুক হামলার মধ্যে মাত্র ৬টি ঘটনায় নারী বন্দুকধারী ছিল, যা মোট ঘটনার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। হামলায় প্রত্যেক নারীই হ্যান্ডগান ব্যবহার করেছিল। এরমধ্যে ২০০৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়া একটি পোস্ট অফিসে হামলার ঘটনাটিই সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল। সেই ঘটনায় ছয়জন নিহত হয়েছিলেন।
নারী বন্দুধারীর ছয়টি হামলার ঘটনার পাঁচটিই ছিল অফিসে সহকর্মীদের ওপর হামলা। এরমধ্যে আলবামা বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্লোরিডায় একটি সুপারমার্কেট ও ফিলাডেলফিয়ায় একটি ফ্যাক্টরিতে এমন ঘটনা ঘটেছিল। অন্যরকম এক জরিপেও দেখা যায় নারী হামলাকারীদের সংখ্যা কম। হতাহতদের সংখ্যার ভিত্তিতে করা এক প্রতিবেদন অনুযায়ী মাত্র দুই ক্ষেত্রে নারী হামলাকারীর প্রমাণ মেলে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানায়, ২০১৭ সালে ২৮টি বন্দুকহামলার কোনটির সঙ্গেই নারী জড়িত ছিল না।
এফবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী পুরুষরাই নারীদের চেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অস্ত্র সহিংসতার চিত্রও এক। বার্তা সংস্থা এপির অনুসন্ধান অনুযায়ী নারীরা হতাহতের শিকারও বেশি হন।
ইউনিভার্সিটি অব অ্যালবামার ক্রিমিনাল জাস্টিস বিষয়ক অধ্যাপক অ্যাডাম ল্যাঙ্কলর্ড বলেন, গবেষণায় দেখা যায় পুরুষরা নারীদের চেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকে। তবে এর কারণ জানতে চাইলে নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি। তিনি বলেন, ‘নারী হামলাকারীর সংখ্যা এতই কম যে তাদের উদ্দেশ্য ও হামলার কারণ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত গবেষণা করতে পারি না।’
ল্যাংকলর্ড বিশ্বে এরকম ২৯২ টি গোলাগুলি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাদের মধ্যে মাত্র একজন নারী ছিলেন।
ফ্লোরিডা ও এফবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০০৬ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে প্রতিবছরই সঙ্গী, সাবেক সঙ্গী বা প্রেমিক-প্রেমিকার গুলিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণ হারান অন্তত ৭৬০ জন। এপি জানায়, এক্ষেত্রে পুরুষের হতাহতের শিকার হওয়ার সংখ্যা কম। প্রতি পাঁচটি ঘটনার চারটিতেই নারী নিহত হয়েছেন।
জনসমাগমে এমন ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংস্থা মাদার জোনস জানায়, ১৯৮২ সাল থেকে ৩-৪ হতাহতের শিকার হয়েছেন এমন হামলার ঘটনায় মাত্র দুইজন নারী হামলাকারী ছিলেন। ২০০৬ সালে কালিফোর্নিয়ার পোস্ট অফিসে হামলা ও ২০১৪ সালে নর্দান ক্যালিফোর্নিয়ায় ইন্ডিয়ানদের দফতরে হামলা। সেই ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছিলেন।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ হামলাকারী ছাড়া অন্তত চারজন নিহত হওয়ার ঘটনা তালিকাভুক্ত করে। ১৯৮২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অন্তত চারজন নিহত হওয়ার বন্দুক হামলার ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে মাদার জোনস। ২০১৩ সাল থেকে তিনজন নিহত হলেও তালিকাভুক্ত করা শুরু করেছে। দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে গোলাগুলি কিংবা ডাকাতিসহ অন্যান্য অপরাধসংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড তালিকভুক্ত করে না তারা।
২০১৪ সালে স্যান বার্নাডিনো হামলার ঘটনাও উল্লেখ করে মাদার জোনস। সেখানে একজন নারী ও একজন পুরুষ যৌথভাবে হামলা চালায়। সৈয়দ ফারুক ও তাশফিন মালিক দম্পতি ফারুকের সহকর্মীদের ওপর গুলি করেন। নিহত হন ১৪ জন। গার্ডিয়ান জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে এমন হামলার ঘটনায় অনেকে অনেক মন্তব্য করে থাকেন। অনেক তত্ত্ব দিতে থাকেন। তবে ইউটিউব দফতরে হামলার বিষয়টি এমন কোনও ধারায় পড়বে কি না নিশ্চিত নয়।