X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিপিইসি থেকে শিক্ষা পাচ্ছে পাকিস্তান, হারাচ্ছে নিয়ন্ত্রণ

আশীষ বিশ্বাস, কলকাতা
০৫ এপ্রিল ২০১৮, ১৭:২৮আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০১৮, ১৮:৪১

 

সম্প্রতি চীন একটি সুসংহত প্রচারণা শুরু করেছে, যা পাকিস্তানে বিভ্রান্তিমূলক মতামতকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হচ্ছে। এতে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি)-এর মাধ্যমে কীভাবে এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটবে তা তুলে ধরা হচ্ছে।

সিপিইসি থেকে শিক্ষা পাচ্ছে পাকিস্তান, হারাচ্ছে নিয়ন্ত্রণ প্রতি বছর এই প্রকল্পে আয় বৃদ্ধি পাবে, নতুন চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হবে। উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে অনেক। সিপিইসিতে তিন ধাপে ৫৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে চীন। নতুন মহাসড়ক, রেল ও আকাশপথ ছাড়াও বিদ্যুৎকেন্দ্র, পর্যটন সুবিধা, কৃষি খামার, খনি ইত্যাদি গড়ে তুলবে তারা।

স্বাভাবিকভাবেই এই প্রকল্প নিয়ে অন্য দেশগুলোর সমালোচনার ইতিবাচক জবাব দিচ্ছে চীনা সংবাদমাধ্যমগুলো। ইতোমধ্যে পাকিস্তান এই প্রকল্পের অনেকটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। আর চীনা সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, পাকিস্তান এই প্রকল্প থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হবে।

পাকিস্তান যে আর্থিকভাবে লাভবান হবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রত্যন্ত এলাকার সৌন্দর্য দেখতেও ছুটে যাবেন অনেকে। অর্থ আসবে পাকিস্তানের হাতে। কট্টরপন্থী পাকিস্তানিরাও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। এখানেই শেষ নয়। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ থাকায় পাকিস্তানের রুগ্ন কারখানাগুলোও আবার জেগে উঠবে। নতুন কর্মক্ষেত্রে তৈরি হবে, রফতানি বাড়বে, উন্নত হবে জীবনযাত্রার মান।

সিপিইসি’র কারণে চীন সবসময়ই পাকিস্তানের পক্ষে থাকবে। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলবে। সম্প্রতি তারা পাকিস্তানের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিক্রি করেছে। বলা হচ্ছে ভারতের সঙ্গে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানকে এগিয়ে রাখবে এটি।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলো এই খবর ফলাও করে ছেপেছে। চীনের কাছ থেকে সহায়তার কথা তারা বড় করে তুলে ধরেছে। রাশিয়ায়ও এখন পাকিস্তানের প্রতি আগ্রহী।

হয়তো প্রশ্ন উঠবে যে এখনও এমন কিছুই হয়নি। পাকিস্তানিরা বরং উদ্বিগ্ন যে এখনও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। সিপিইসি’র প্রথম ধাপে ৫০ হাজার চাকরির ক্ষেত্র হওয়ার কথা ছিল। তবে বেশিরভাগ কর্মী চীন থেকে আসছে। পাকিস্তানিরা তাদের দক্ষতার সঙ্গে পেরে উঠছে না। পাকিস্তান থেকেও কেউ চীনে যাচ্ছে না। অল্প কয়েকজন পাকিস্তানি চীনে ব্যবসা করতে পেরেছেন। কিন্তু সেখানকার দামের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছেন না। উৎপাদন ও রফতানির ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে তাদের অনেক দূরত্ব।

নতুন চাকরির হিসাবে বলতে গেলে চীনাদের নিরাপত্তার জন্য ১৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে তাদের বেতন দেয় রাষ্ট্রই। তারপরও যখন উৎপাদন শুরু হবে তখন নিশ্চয়ই কর্মসংস্থান আরও বাড়বে। বর্তমানে পাকিস্তানের জিডিপি ৫.৮। সিপিইসির কাজ শুরু হওয়ার পর সামনের বছর এটি ৭ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রশ্ন থেকে যায়, পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে কেন কোনও সমালোচনার কথা আসছে না। সিপিইসির বেশ কয়েকটি বিষয় পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসলামাবাদের কর্তারা সিপিইসির অনেক কিছুই জনগণের কাছে প্রকাশ করছেন না।

পাকিস্তানি সাংবাদিকরা ঠিকই খুঁজে বের করছেন এই প্রকল্পের কারণে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কী প্রভাব পড়েছে। প্রথমত, এই প্রকল্পের গুরুত্বের ক্রমপরিবর্তন হচ্ছে বারবার। এখন বলা হচ্ছে রাস্তার কথা। এর আগে অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো। আর এগুলো ঠিক করে চীনই।

চীন বলছে, এই প্রকল্পে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে যেন পাকিস্তানি রুপি বা চীনা রেনমিনবি ব্যবহার করা হয়। সিপিইসি মূলত ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডের অংশ হওয়ায় এক ট্রিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে চীনা মুদ্রা ব্যবহার মানে মূলত দীর্ঘমেয়াদে চীনা অর্থনীতিকেই শক্তিশালী করা।

চীনা কর্মী ও প্রকৌশলীদের নিয়োগ দিয়ে সেটি আরও বাড়ানো হবে। ৫৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে প্রকল্পের ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করবে চীন। এছাড়া প্রকল্পে ব্যবহৃত দ্রব্য চীনেই উৎপাদন করা হচ্ছে। ফলে সেখান থেকেও বিশাল অংকের আয় হচ্ছে দেশটির।

বেলুচিস্তানের বিদ্রোহীদের সঙ্গেও সমঝোতা করার চেষ্টা করছে চীন যেন তারা হামলা করে না বসে। কারণ, তাদের অধিকৃত জমিও সিপিইসি প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর এই সমঝোতার ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনাও করেনি চীনা কর্তৃপক্ষ।

গত ব্রিকস সম্মেলনে সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় চীন বলেছিল পাকিস্তান যেন সন্ত্রাস ইস্যুতে চীনের সমর্থন আশা না করে। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় হাম্বানটোটা বন্দর ও অন্যান্য সম্পদ চীনকে দিয়ে দেওয়ায় উদ্বিগ্ন পাকিস্তান। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ৩০ বছরে চীনকে ৯ হাজার কোটি ডলার দিতে পারে পাকিস্তান। চীনা ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ঋণ নেওয়ায় এমন পরিস্থতি তৈরি হতে পারে। তবে তাদের কি তেমন অবস্থা আছে! তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম। পশ্চিম এশিয়া থেকে বড় অংশের বৈদেশিক মুদ্রা এলেও প্রতি বছর ৫০০ কোটি ডলার দেওয়ার মতো অবস্থা পাকিস্তানের নেই।

/এমএইচ/এমপি/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
সর্বশেষ খবর
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৫ এপ্রিল, ২০২৪)
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী