ব্রাজিলে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের জন্য প্রস্তুত। শনিবার তিনি বলেন, পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে রাজি তিনি। একদিন আগেই তিনি আদালতের রায়ের বিরোধিতা করেছিলেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির দায়ে ১২ বছরের সাজাভোগ শুরু করতে তাকে স্থানীয় সময় শুক্রবার (৬ এপ্রিল) বিকাল ৫টার মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলে আদালত। এক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে জানান তিনি।
২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন লুলা। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেট্রোব্রাসকে কাজ পাইয়ে দেয়ার শর্তে ১ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অর্থ তিনি সমুদ্র তীরে তার একটি অ্যাপার্টমেন্টের সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজে ব্যয় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে তাকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। লুলার দাবি, এ অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। অক্টোবরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে তিনি যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে এমন রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। জনমত জরিপগুলো অনুযায়ী নির্বাচনি দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন লুলা। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করা পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার না করার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন ব্রাজিরের এ সাবেক প্রেসিডেন্ট। বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) সুপ্রিমকোর্ট সে আবেদন খারিজ করে দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
শনিবার দলের কার্যালয়ের সামনে সমর্থদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি আদেশ মেনে নিবো। আর আপনারা সবাই লুলা হয়ে উঠবেন। আমি আইনের উর্ধ্বে না। আমি যদি আইন বিশ্বাস না করতাম তবে রাজনীতি শুরু করতাম না। বিপ্লব করতাম।’
লুলার এই কারাবরণে আসন্ন নির্বাচন থেকে সবচেয়ে সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরই ছিটকে পড়ছেন। সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী তারই সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা ছিল জয়লাভের। কারাগারে পাঠাতে সুপ্রিমকোর্টের আদেশের পরপরই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন তার সমর্থকরা। লুলার সমর্থকদের দাবি তাদের নেতার শাসনামলে হাজার হাজার মানুষের দারিদ্র্য দূর করতে এই রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।
নির্বাচনে লুলাকে ঠেকাতেই সরকারের পক্ষ থেকে এই মামলা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা। ব্রাজিলের জনপ্রিয়তম রাজনীতিবিদদের একজন লুলা দি সিলভা। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরেও তাকে নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা লুলাকে বিশ্বের জনপ্রিয়তম রাজনীতিবিদ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। ব্রাজিলের বামপন্থীরা লুলার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে মার্কিন ষড়যন্ত্র হিসেবেও দেখে থাকেন।