X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্তে ‘গুম’ হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের জিও টিভি চ্যানেল

বিদেশ ডেস্ক
২৩ এপ্রিল ২০১৮, ১৯:৫২আপডেট : ০২ মে ২০১৮, ১৬:৪৮

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চাপে প্রায় দুই সপ্তাহ দেশটির ৮০ শতাংশ এলাকায় জিও টিভির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দেশটির কেবল অপারেটরদের ওপর চাপ দিয়ে এই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান লিখেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সংবাদ প্রচার করা নিয়ে জিওটিভির বিরুদ্ধে অসন্তুষ্ট ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। আদালতের পক্ষ থেকে জিও টিভির সম্প্রচার বাধাগ্রস্ত করাটাকে সংবিধানের লঙ্ঘন বললেও, শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর দাবি মেনে নিয়েই আবার সম্প্রচার বাধাহীন করাতে পেরেছে জিও টিভি কর্তৃপক্ষ। পাকিস্তান সেনাবাহিনী চায় সামনের নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে তাদের প্রভাব অক্ষুণ্ণ রাখতে। জিও টিভির সম্প্রচার বাধাগ্রস্ত করার ওই ঘটনাকে ‘চ্যানেল গুম করে দেওয়া’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন পাকিস্তানি বিশ্লেষক। সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্তে ‘গুম’ হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানের জিও টিভি চ্যানেল

নির্বাচনপূর্ব প্রচারণা ও জনসমর্থনের বিষয়গুলোর মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সবচেয়ে বেশি চিন্তিত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে নিয়ে। পাকিস্তান মুসলিম লিগের সভাপতি ও দেশটির সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী নওয়াজ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন, সেনাবাহিনী ও বিচারালয়ের যৌথ চক্রান্তে তাকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের আদালাত নওয়াজ শরিফকে দুর্নীতির দায়ে আজীবনের জন্য নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে নওয়াজের সম্পর্ক ভালো ছিল না। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি পাকিস্তান জুড়ে রাজনৈতিক সফর করে বেড়াচ্ছেন এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সমালোচনা করছেন।

জিও টিভি নওয়াজের ওই সব সফরের খবর প্রচারে পিছপা হয়নি। তারা নওয়াজের অভিযোগকে প্রতিপাদ্য করে আলোচনা অনুষ্ঠান পর্যন্ত করেছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় গত ফেব্রুয়ারিতে, সেনানিয়ন্ত্রিত আবাসিক এলাকা ও সেনানিনাবাসগুলোতে জিও টিভির সম্প্রচার কোনও ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সবচেয়ে বড় ধাক্কা এসেছিল গত ৩০ মার্চ। ওইদিন থেকে জিও টিভির সংবাদ, বিনোদনসহ খেলার চ্যানেলগুলোও দেশের বেশিরভাগ এলাকায় দেখানো বন্ধ করে দিয়েছিল কেবল অপারেটররা।

চ্যানেলটির কর্তৃপক্ষ বলেছে, সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইংয়ের প্রধানসহ উচ্চপদস্থ সেনাকর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে তারা সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চালিয়েছেন। নওয়াজ শরিফের খবর দেখানো বন্ধ করা এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনও সমালোচনা প্রকাশ না করার কথা দিতে হয়েছে তাদের। জিও টিভির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গার্ডিয়ানকে বলেছেন, আমরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলব না। তবে সম্প্রচার চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের রেখে-ঢেকে সংবাদ প্রচার করতে হবে। নওয়াজ শরিফ সংক্রান্ত খবর অন্যভাবে দিতে হবে আমাদের।’

জিও টিভির প্রেসিডেন্ট ইমরান আসলাম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান, গণতান্ত্রিকভাবে সরকার গঠন এবং বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধারার পক্ষে কাজ করার কারণেই আমাদের সম্প্রচার বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে।’ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনও সমঝোতা হওয়ার কথা স্বীকার না করলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন যে জিও টিভির সম্প্রচার দুই সপ্তাহ ধরে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তার ভাষ্য, ‘পাকিস্তান ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া রেগুলেটরি অথরিটি’ বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও কেবল অপারেটররা জিও টিভির সম্প্রচার শুরু করেনি। এমনকি প্রধান বিচারপতি সম্প্রচার বন্ধ করিয়ে দেওয়ার ঘটনাটিকে সাংবিধানের লঙ্ঘন আখ্যা দিলেও কাজ হয়নি। আসলাম প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, ‘তাহলে কার হাতে আসলে ক্ষমতা?’

গার্ডিয়ান লিখেছে, সেনাবাহিনীর সঙ্গে জিও টিভির সম্পর্কে আগেও টানাপড়েন দেখা গিয়েছিল।  ২০০৭ সালে সেনাপ্রধান থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়া পাকিস্তানের পারভেজ মোশাররফ চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধের আদেশ দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে  সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কেবল অপারেটরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল জিও টিভি সম্প্রচার না করতে। ওই সময় জিও টিভি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, চ্যানেলটির উপস্থাপক হামিদ মীরকে হত্যাচেষ্টার পেছনে সেনাগোয়েন্দা সংস্থা প্রধানের হাত রয়েছে।

পাকিস্তানের শত শত মানুষের গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনায় সেনাবাহিনীর হাত থাকার দিকে ইঙ্গিত করে জিও টিভির অনুষ্ঠানে নিয়মিত বিশ্লেষক আইনজীবী বাবর সাত্তার বলেছেন, ‘প্রথমে আমাদের মানুষ গুম হয়ে যেত, এখন টেলিভিশন চ্যানেল গুম হয়ে যাচ্ছে। মানুষ গুম হয়ে যাওয়ার পেছনে কাদের হাত রয়েছে সেটা যেমন সবাই  জানে, তেমনি এ বিষয়ে কাদের হাত রয়েছে তা সবার জানা; কিন্তু সরব হলে বিপদ বাড়বে।’

এ মাসের শুরুর দিকেই সাত্তার জানিয়েছিলেন, জিও টিভির মালিক জং শিল্পগোষ্ঠীর আরেকটি সংবাদমাধ্যম দ্যা নিউজ পত্রিকা তার কলাম ছাপাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলেছিল, ‘তাদেরকে স্পর্শকাতর বিষয়ে হাত দিতে নিষেধ করা হয়েছে।’ এর কয়েকদিন পরে, আরেক জন জনপ্রিয় লেখক মোশাররফ জায়েদি জানিয়েছেন, প্রায় এক যুগ পরে প্রথমবারের মতো পত্রিকাটি তার লেখা প্রকাশে অপারগতা জানিয়েছে। দশকের পর দশক ধরে চলা সেনাবাহিনীর অভিযান ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গুম হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে আদিবাসী এলাকাগুলোতে থাকা পশতুদের সমর্থনে হওয়া আন্দোলনের বিষয়ে তারা দুজনই লেখালেখি করতেন।

গার্ডিয়ান উল্লেখ করেছে, সামনের জুলাইতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে নিজেদের প্রভাব অক্ষুণ্ণ রাখতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী চাপে রাখার কৌশল অবলম্বন করছে। এতে দেশটির সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলগুলো সেনাবাহিনীর সমালোচনা আছে এমন সংবাদ রেখে-ঢেকে প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছে।   সাংবাদিক, অধিকারকর্মী ও বিশ্লেষকরা এই পরিস্থিতির জন্য সেনাবাহিনীর সমালোচনা করছেন।

চ্যাথাম হাউসের এশিয়া ও প্রাসান্ত মহাসাগরীয় এলাকার ফেলো ড. ফারজানা শেখ বলেছেন, ‘প্রায় সবগুলো জেলাতে টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচারের বিষয়ে সেনাবাহিনীর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। ফলে জিও টিভির ঘটনায় সবার সন্দেহের আঙুল সেনাবাহিনীর দিকেই উঠেছে। সাম্প্রতিককালের ওই ঘটনাটি দেখে বোঝা যায়, নির্বাচনের আগে হওয়া প্রচারণা ও জনসমর্থনের দিক ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী চেষ্টা করছে।’

/এএমএ/
সম্পর্কিত
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
সর্বশেষ খবর
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
এক কোরাল ৩৩ হাজার টাকায় বিক্রি
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
উপজেলা নির্বাচনমন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ ডিসি ও এসপিদের
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে ১৮ দেশের আহ্বান
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা