X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
কোরীয় সম্মেলন নিয়ে দক্ষিণে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

একদিকে একত্রীকরণের আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে পুরনো অবিশ্বাস

বিদেশ ডেস্ক
২৬ এপ্রিল ২০১৮, ২০:১২আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০১৮, ২০:২৫
image

প্রজন্মগত ব্যবধান আর রাজনৈতিক বিশ্বাসের পার্থক্যের কারণেই দক্ষিণ কোরিয়াবাসীর মধ্যে উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে রয়েছে দৃষ্টিভঙ্গিগত বিভক্তি। সে কারণেই দক্ষিণের কথিত মুক্ত গণতন্ত্র, উত্তরের একনায়কতন্ত্র, একত্রীকরণের উদ্যোগসহ শুক্রবার দুই কোরীয় নেতা মুন জায়ে-ইন ও কিম জং উনের মধ্যকার বৈঠক নিয়ে সেখানকার মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ জাতীয় নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে উত্তরের প্রতি সন্দেহ জারি রাখাকেই যথার্থ মনে করছেন। কেউ আবার একত্রীকরণের মধ্যেই দেখছেন আশার আলো। নতুন প্রজন্মের কেউ কেউ আবার কোরীয় যুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন না হওয়ায় সম্মেলন নিয়ে ভাবতেই নারাজ। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে আসন্ন সম্মেলনকে ঘিরে দক্ষিণের মানুষের মনোভাব হাজির করা হয়েছে।
একদিকে একত্রীকরণের আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে পুরনো অবিশ্বাস

সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধের শুরুর দিকে ৫০ এর দশকে ৩ বছরের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে দুই কোরিয়া। ভূমির মালিকানাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের উত্তেজনা ও সীমান্ত সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ১৯৫০ সালের জুন মাসে উত্তর কোরিয়া দক্ষিণে আক্রমণ করে বসে। যুদ্ধে চীন আর সোভিয়েত ইউনিয়ন উত্তরের পক্ষ নেয়। যুক্তরাষ্ট্র ছিল দক্ষিণের পক্ষে। ৫৩ সালে এক যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে সংঘর্ষের অবসান হয়। তবে ৩ বছরে অন্তত ২৫ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়। অবসরপ্রাপ্ত ইংরেজির অধ্যাপক লিউ জে-বং কোরিয়া যুদ্ধের সময় ছিলেন কিশোর। পিয়ংইয়ংয়ের দখল অভিযানের কারণে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে নিরাপদে থাকতে পরিবারের সঙ্গে মাইলের পর মাইল হাঁটার কথা এখনও মনে রয়েছে তার। তিনি উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এখনও সন্দিহান। তার মতে, দক্ষিণের উচিত নয় উত্তরের হাতের পুতুল হওয়া।

উত্তর কোরিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মিথ্যুক উল্লেখ করে ক্ষোভের সঙ্গে লিউ বলেন, সিউলের উচিত প্রতিশ্রুতি ভাঙার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া। আমার আশা, ২৭ এপ্রিল উত্তর-দক্ষিণের সম্মেলনে আমাদের প্রেসিডেন্টকে বোকা বানানো হবে না। লিউ আরও বলেন, তারা (উত্তর) কখনও পারমাণবিক অস্ত্র ছেড়ে দেবে না। যদি তারা এটা না করে তাহলে কোনও আলোচনা হওয়া উচিত না।

দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট কিম দায়ে-জুং-এর তথাকথিত সানশাইন পলিসির সময় দেশটি উত্তরের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিভাবে সক্রিয় ছিল এবং উল্লেখযোগ্য মাত্রায় মানবিক সহযোগিতা পাঠায়। এর কয়েক বছরের মাথায় উত্তর কোরিয়া প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। এসব ঘটনার কথা তুলে ধরে ৮৪ বছরের অধ্যাপক বলেন, আমরা তাদের ৯ বিলিয়ন ডলার দিয়েছি। কিন্তু তারা তা পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে ও আমাদেরকেই হুমকি দিতে ব্যবহার করেছে।

নিজের প্রজন্মের অনেকের মতোই লিউ জাতীয় নিরাপত্তাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। তিনিও বিশ্বাস করেন, দক্ষিণের প্রধান সামরিক মিত্র যুক্তরাষ্ট্র উত্তরকে আরও কোনও দখল অভিযান করতে দেবে না। বলেন, এমনটা আর ঘটবে না। কারণ আমেরিকা তা সহ্য করবে না। লিউ আশা করেন, তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে যেন যুদ্ধে বেদনার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে না হয়। তিনি শান্তিপূর্ণ একত্রীকরণের পক্ষে, যা দক্ষিণের শর্তে অর্জিত হবে। ‘কিন্তু পিয়ংইয়ংয়ের কোনও ভূমিকা থাকবে না। অন্যথায় সমাজতন্ত্র আমাদের তাড়িয়ে দেবে। যদি তাই হয় তাহলে আমাদের সবাইকে মরতে হবে। আমাদের তা মনে রাখতে হবে।’ মন্তব্য করেন তিনি।

ব্যবসায়ী লি জিওং-জিন অবশ্য ভিন্নভাবে চিন্তা করছেন। কয়েক দশকের উত্তেজনার পর দুই কোরিয়ার সম্মেলনের কথা শুনে আনন্দে কেঁদেছেন তিনি। ৫২ বছরের এই দক্ষিণ কোরীয় ১৯৮০’র দশকে কলেজে পড়াশোনা করেছেন। ওই সময় ছিল গণগন্ত্রের জন্য ও মার্কিনবিরোধী বিক্ষোভের সময়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুই কোরিয়ার বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং ওই সময়কার সামরিক স্বৈরাচারকে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার কারণেই এসব বিক্ষোভ হয়েছিল।

এক সময়ে লি জিওং-জিন কায়েসং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সে কর্মরত ছিলেন। এটা উত্তরে ছিল কিন্তু বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া টেলিকমের সাইট ব্যবস্থাপক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। উত্তর কোরীয়দের সঙ্গে প্রতিদিন কাজ করা এই ব্যবসায়ী বলেন, আমার মনে হচ্ছে আমরা দ্রুত সম্প্রীতি অর্জন ও একটি সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হতে পারব।

উপদ্বীপে দীর্ঘমেয়াদী শান্তির জন্য কূটনৈতিক অগ্রগতি সম্পর্কে লি আশাবাদী। বলেন, আমরা একই আত্মা। ৭০ বছর ধরে বিভক্ত। ঘটনা হলো, উভয়পক্ষ শান্তি নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী এবং পার্থক্য কাটিয়ে উঠতে চায়। এটা বড় অগ্রগতি। একত্রীকরণের সমর্থক লি আরও জানান, দুই ভাগে বিভক্ত কোরিয়ার চেয়ে এক কোরিয়া অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। বলেন, আমাদের জনসংখ্যা যদি ১০০ মিলিয়নের কাছাকাছি হয় তাহলে আমাদের দেশের অর্থনীতি বহির্বিশ্বের যে কোনও পরিবর্তন মোকাবিলায় সক্ষম হবে।

অবশ্য দীর্ঘদিনের বিভক্তির পর লি খুব দ্রুত বড় ধরনের পরিবর্তন আশা করেন না। যদিও তিনি পিয়ংইয়ংয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান নন। বলেন, শান্তির জন্য তাদের মনোভাব অনেক দিন ধরেই গড়ে উঠছিল হয়ত। এখন তারা এগিয়ে এসেছে। আমি জানি না কেন আমাদের এটাকে কৌশল হিসেবে আখ্যায়িত করতে হবে। যদি এটাই হয় তাহলে আলোচনার কী দরকার ছিল?

সপ্তাহখানেক ধরে দুই কোরিয়ার সম্মেলনের খবর শিরোনাম হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। তবে তরুণ হিপহপ শিল্পী চই ইয়োন-ইয়ংয়ের এটা নিয়ে কোনও মাথা ব্যথা নেই। তিনি বলেন, আমি একবার শিরোনাম দেখেছি। কিন্তু এটা নিয়ে আমার বেশি কিছু জানা নেই। আমি সত্যি জানি না তারা কী করছে। আমি মনেকরি শুধু উত্তর আর দক্ষিণ বৈঠক করছে কথা বলার জন্য। আমি এটা নিয়ে আগ্রহী নই। চই-এর মতো দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণরা পারমাণবিক অস্ত্রধর উত্তর কোরিয়ার নিয়ে ভাবনা কম। তারা বেড়ে উঠেছে গণতান্ত্রিক শাসনামলে। তাদের বেড়ে ওঠার সময়ে খুব কমই পিয়ংইয়ং হামলা চালিয়েছে। উত্তরে ব্যাপক আকারের মানবাধিকার লঙ্ঘণের ঘটনা সম্পর্কেও তারা খুব একটা ওয়াকিবহাল না।

/এএ/বিএ/
সম্পর্কিত
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
সর্বশেষ খবর
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী